শিরোনাম :
অসাম্প্রদায়িক চেতনার যোদ্ধা বীর-উত্তম সি আর দত্তকে শেষ বিদায়
ডিসিনিউজ || ঢাকা
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি একাত্তরের রণাঙ্গণের যোদ্ধা বীর-উত্তম চিত্ত রঞ্জন দত্তের (সি আর দত্ত) প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় পতাকায় মুড়ে সি আর দত্তের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। সেখানে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন ও ঢাকা ক্রেডিটের নেতৃবৃন্দ সি আর দত্তের কফিনে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের পক্ষে এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, এসোসিয়েশনের (বিসিএ) যুগ্ম সচিব-১ জেমস সুব্রত হাজরা, এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য ভিক্টর রে, বিসিএ’র ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সেক্রেটারি মলয় নাথ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে উপস্থিত হয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া ও ডিরেক্টর মনিকা গমেজ।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি বাড়ৈ ও অ্যাডভোকেট রেবেকা গমেজ।
শ্রদ্ধা জানানোর শেষে এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ডিসিনিউজকে বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সি আর দত্ত ছিলেন অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেন প্রতিষ্ঠা লাভ করে তার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আমরা একটা ধর্মনিরপক্ষ বাংলাদেশ চাই যা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সি আর দত্ত সব সময় চেয়েছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মাধ্যমে তিনি নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁর অবদান আমরা ভুলবো না।’
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সি আর দত্ত ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার। তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
গার্ড অব অনার দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের এই সেক্টর কমান্ডারের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সি আর দত্তের উপর যখন যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা তিনি কর্তব্যনিষ্ঠ থেকে সততার সঙ্গে পালন করেছেন। দেশের প্রতি তার নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়।’
রানা দাশগুপ্ত আরো বলেন, জেনারেল এরশাদ যখন তার সামরিক ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে দেশের মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করতে চেয়েছিলেন, তখন সি আর দত্ত সেখানে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। যেখানে অসত্য, অসাম্য তিনি দেখেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।
১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের রাজধানী শিলংয়ে জন্মগ্রহণ করেন সিআর দত্ত। বাবা উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত ছিলেন পুলিশ অফিসার। পরে তারা স্থায়ীভাবে চলে আসেন বাংলাদেশের হবিগঞ্জে।
১৯৫১ সালে তখনকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চার বছরের মাথায় পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে আসালংয়ে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন সি আর দত্ত।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের চূড়ান্ত মুহূর্ত যখন উপস্থিত, সে সময় ছুটিতে দেশেই ছিলেন সি আর দত্ত। তখন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের মেজর।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্দীপ্ত সি আর দত্ত মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তাকে দেওয়া হয় ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব।
সিলেট অঞ্চলে ওই সেক্টরে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যার বেশ কয়েকটিতে নিজেই নেতৃত্ব দেন সি আর দত্ত।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্ব ও অবদানের জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে ‘বীর-উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম মহা পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।