ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় ঢাকা ক্রেডিট: একটি উজ্জ্বল সমবায় সমিতির উদাহরণ

ঢাকা ক্রেডিট: একটি উজ্জ্বল সমবায় সমিতির উদাহরণ

0
1772

আমিনুল ইসলাম ॥ ঢাকা

অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর ৬০তম সাধারণ বার্ষিক সভা। ৮ জানুয়ারি সভাটি ঢাকার তেজকুনীপাড়ার বটতলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, এতদিন বার্ষিক সাধারণ সভা হতো প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। অতিসম্প্রতি সমবায়ীদের দাবি অনুয়ায়ী সমবায় সমিতি বিধিমালা-২০০৪ এর ২১ নং বিধি সংশোধন করা হয়েছে এবং সর্বজনীন অংশগ্রহণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আজকের এজিএম সর্বজনীন অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটি ঈদ উৎসবের আকার ধারণ করেছিল। সাধারণ সদস্যগণ অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়ে। আমরাও খুশি।
জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। অতঃপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত সমবায় সংগীত গাওয়া হয়। এভাবে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক আয়োজন।
২। সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মি. পংকজ গিলবার্ট কস্তা। প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব শরীফ আহমেদ এমপি। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে যোগদিতে পারেননি। কয়েকজন বিশেষ অতিথির মধ্যে আমিও ছিলাম। ছিলেন ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং এমপি, ঢাকা জেলার জেলা সমবায় কর্মকর্তা জনাব মো: জহিরুল হক, ঢাকা বিভাগীয় সমবায় যুগ্মনিবন্ধক এসএম তারিকুজ্জামান, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-নিবন্ধক জনাব মোছা: নূর-ই-জান্নাত, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএস্ অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাহী সদস্য রেমন্ড আরেং, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘের সভাপতি খ্রীষ্টোফার অধিকারী এবং আরও কয়েকজন।
৩। সভাপতির ভাষণে মি. পংকজ গিলবার্ট কস্তা ঢাকা ক্রেডিটের শুরু থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তথ্য-উপাত্তসহ উপস্থাপন করেন। আগে গত বছর এই সমিতির ৫৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এবং প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলাম। আমরা দেশের ১১৫ বছরের সমবায়ের ইতিহাসে গত নভেম্বরে ১ম বারের মতো ‘সমবায়ের সাফল্যগাথা’ প্রস্তুত ও প্রকাশ করেছি, সেখানে একটি সাকসেস স্টোরি হিসেবে এই সমিতিটি স্থান লাভ করেছে।
৪। ১৯৫৫ সালের ৩ জুলাই। তখন বৃটিশ শাসকরা বিদায় নেয়ায় দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় রাজ্য হারিয়ে সংখ্যালঘু শ্রেণি। তাদের আর্থসামাাজিক উন্নয়নের কথা মনে রেখে তৎকালীন আর্চবিশপ লরেন্স এল গ্রেণার সিএসসির পৃষ্ঠপোষকতায় ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসির উদ্যোগে ৫০ জন খ্রিষ্টভক্তকে নিয়ে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ ঢাকা প্রতিষ্ঠা করা হয়। আজ তার ৬৫ বছর পূর্ণ হলো। পড়লো ৬৬ বছরে।
৫। এই সমিতির সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ৪২, ৫৮০ জন। পুরুষ সদস্য ২৩১৫৬ জন (৫৪%) এবং মহিলা সদস্য ১৯,৪২৪ জন (৪৬%)। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত শেয়ার মূলধন ৯৬.২৮ কোটি টাকা। সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাব ১০৯.৩২ কোটি টাকা। হাউজিং ডিপোজিট স্কীম ১৪.৮০ কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্প ১৪৯.৩১ কোটি টাকা। ডাবল ডিপোজিটি স্কীম ১০৮. ৯২ কোটি টাকা। ত্রৈমাসিক সঞ্চয় প্রকল্প: ১০৫.৩৯ কোটি টাকা। মিলিওনিয়ার ডিপোজিট স্কীম: ৩৬.০৩ কোটি টাকা। মোট আমানতের পরিমাণ ৫৬৪.১৪ কোটি টাকা। মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭৮২.২৫ কোটি টাকা। ঋণ প্রদানের পরিমাণ: ২৩৮.৬১ কোটি টাকা। মোট ঋণের স্থিতি: ৫২০.৩০ কোটি টাকা। নীট আয়ের পরিমাণ: ৩.৯৬ কোটি টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক মূলধন: ৪০.৫৭ কোটি টাকা। সঞ্চয় আমানত: ৫৬৪.১৪ কোটি টাকা।
৬। এই সমিতির সঞ্চয়ী প্রডাক্ট ১৬টি ; ঋণ প্রডাক্ট ৩৩টি; সেবা ৩৩টি।
৭। ঢাকা ক্রেডিটের ৯টি নিজস্ব বহুতল ভবন এবং প্রধান কার্যালয়ে সমিতির ১৮টি বিভাগ রয়েছে। এই সমিতির মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশন ডিপার্টমেন্ট অত্যন্ত কর্মতৎপর এবং সফল। এখন মিডিয়ার যুগ। বিশ্বময় প্রতিযোগিতার যুগ। এখন মূলত প্রচারেই প্রসার। এই মূলমন্ত্রটি ঢাকা ক্রেডিট শিখে নিয়েছে এবং সাফল্যের সাথে কাজে লাগিয়ে চলেছে।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মঠবাড়ীতে ৩০০ শয্যার ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণাধীন। ২০২২ সালে এটির নির্মাণকাজ শেষ হবে। একই ক্যাম্পাসে নির্মিত হবে মেডিকেল কলেজ এবং নার্সিং কলেজ। সেজন্য ২৭.৪৮ একর জমি কেনা হয়েছে।
৮। ক্রেডিট কর্ম এলাকায় ১০টি স্থানে এটিএম সেবা চালু করা হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহে এটিএম সেবা চালু হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ সমিতি একটি সম্পূর্ণ সফটওয়ার বেইজড প্রতিষ্ঠান (Paperless Office) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
৯। এই সমিতির কাজ চালানোর জন্য ২১৪ জন স্থায়ী এবং ৩৮৮ জন অস্থায়ী স্টাফ আছে।
৯। বোর্ড-এর কর্মতৎপরতা
২০১৯–২০ অর্থবছরে নিয়মিত মাসিক বোর্ড সভা হয়েছে ১২টি; যৌথসভা ২৩টি; বিশেষ বোর্ড সভা: ১টি। মোট ৩৬টি। অধিকন্তু ঢাকা ক্রেডিটের ১৮টি বিভাগ পরিচালনার জন্য উপদেষ্টা কমিটি, নারী কমিটি, যুব কমিটি, শিক্ষা কমিটি, স্পোর্টস কমিটি, পার্সোনাল কমিটি, সেবাকেন্দ্র পরিচালনা কমিটি, স্কুল পরিচালনা কমিটির মতে উল্লেখযোগ্য ৫৩টি কমিটি রয়েছে।
১০। অবিঘিœত গণতান্ত্রিক পরিচালনা
সমিতিটি ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৫ বছর আগে। সমবায় সমিতির নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়ে আসছে। অডিট হচ্ছে। এযাবত কখনও কোনো কমিটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি; কোনো নির্বাচনে ঝামেলা বাঁধেনি; কখনও কোনো এডহক কমিটি গঠন করতে হয়নি। অবিঘিœত ও অব্যাহত গণতন্ত্রের চর্চ্চা সমিতিটিকে ঈর্ষণীয় মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছে।
১১। সমিতির কাজের পরিধি
সমিতির কাজের পরিধি ও কর্মসূচির বৈচিত্র্য ব্যাপক। বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর নাম: জমি ক্রয়, জমিতে বিনিয়োগ, নিজস্ব বিল্ডিং, সমবায় বাজার, ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল, বিউটি পার্লার, রিসোর্স এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, ডিসি চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার, এটিএম মেশিন, ডেবিট এন্ড ক্রেডিট কার্ড প্রিন্টার, কম্পিউটার, মাইক্রোবাসও মোটর সাইকেল ক্রয়, লিফট, প্রধান অফিস বিল্ডিং উন্নয়ন খরচ, আপসবাবপত্র ও সাজসরঞ্জাম, অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়, জীমের জন্য যন্ত্রপাতিক্রয়, নেটওয়ার্কিং, এয়ারকুলার, জেনারেটর ক্রয়, পাওয়ার/ইলেকট্রিক সাবস্টেশন, ডাটা সেন্টার, সফটওয়ার প্রভৃতি।
১২। সেবাসমূহ:
(১) ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল;
(২) ঢাকা ক্রেডিট এটিএম সার্ভিস;
(৩) সমবায় বাজার;
( ৪) ঢাকা ক্রেডিট ইউনিয়ন স্কুল;
(৫) ডিসি চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার;
(৬) ঢাকা ক্রেডিট সিকিউরিটি সার্ভিস;
(৭) ঢাকা ক্রেডিট রিসোর্ট এ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার;
(৮) ডিসি বিউটি পার্লার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার;
(৯) বান্দুরা বহুমুখী প্রকল্প;
(১০) কালচারাল একাডেমি;
(১১) ঢাকা ক্রেডিট ছাত্রী হোস্টেল;
(১২) ঢাকা ক্রেডিট ড্রাইভিং ট্রেনিং কোর্স;
(১৩) ঢাকা ক্রেডিট স্বাস্থ্যনিরাপত্তা স্কীম;
(১৪) স্বাস্থ্য প্রকল্প
(১৫) ছাত্র প্রকল্প;
(১৬) সমবার্তা
(১৭) ইংরেজি শিক্ষা কোর্স;
(১৮) ঢাকাক ক্রেডিট এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস;
(১৯) ঢাকা ক্রেডিট জীম সার্ভিস;
(২০) শেয়ার নিরাপত্তা স্কীম;
(২১) ঋণ নিরাপত্তা স্কীম;
(২২) মৃত ব্যক্তির সৎকার তহবিল;
(২৩) হস্তশিল্প প্রকল্প;
(২৪) সেলাই প্রশিক্ষণ;
(২৫) কনফেকশনারী প্রশিক্ষণ;
(২৬) চাইনিজ রান্না প্রশিক্ষণ;
(২৭) মাকার্থী লাইব্রেরী;
(২৯) আর্কাইভ;
(৩০) জব লিংকিং সেল;
(৩১) ঢাকা ক্রেডিট অনলাইন নিউজ;
(৩২) ঢাকা ক্রেডিট অনলাইন টেলিভিশন;
(৩৩) ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল বন্ড;
(৩৪) প্রদীপ স্ট্যানলী গমেজ কমিউনিটি সেন্টার।
এই সমিতি ১১০০ এর অধিক সদস্যকে বাড়ি নির্মাণ ঋণ দিয়েছে; ৬০০ এর অধিক সদস্য্যকে ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ প্রদান করেছে।
১২। করোনা মহামারিকালে ঢাকা ক্রেডিট
করোনা মহামারিকালে সমিতিটির ভূমিকা উজ্জ্বল। জরিমানা ছাড়া বকেয়া ঋণের টাকা পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সমবায় বাজার থেকে ১৩২৭ জন সদস্যকে মূল্যছাড়ে ৩৪০০ টাকার পণ্য ১৭০০ টাকায় প্রদানপূর্বক ১২ মাসের কিস্তিতে বিনা সুদে ফেরতদানের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত মূল্যছাড়ে পণ্য বিতরণ কর্মসূচিতে সমিতির কর্মীদের ১দিনের বেতন এবং কর্মকর্তাদের ১ মাসের সম্মানী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৬% সুদে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা কমোডিটি ঋণ দেয়া হয়েছে। সমবায় বাজার থেকে সদস্যদের ২ মাসের বাকিতে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ঋণের কিস্তি বৃদ্ধি এবং রিফাইন্যান্সিং করা হয়েছে। সংকটকালে কর্মীদের ছাঁটাই না করে তাদের একাধিক কর্ম-উদ্যোগে সম্পৃক্ত করে রেভিনিউ আয়ের সকল প্রকার কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে মহামারির বহুমুখী নেতিবাচক তীব্রতাকে হ্রাস করা হয়েছে। করোনার কারণে ঋণের কিস্তি আদায়ে ও স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় সমিতির মুনাফা জাতীয় আয় প্রায় ৮ কোটি টাকা কম হয়েছে। তারপরও সমিতির কাজ চলমান ছিল। সদস্যদের সহযোগিতার ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জমির উর্ধ্ব মূল্যায়ন না করেও ৩.৫% অন্তর্বতীকালীন লভ্যাংশ, ০.৫% লভ্যাংশ এবং ১০% রিবেট দেওয়া হয়েছে।
বিদ্রোহী কবি সমবায় সংগীতের শুরুতেই সমবায়কে দুঃখজয়ের নবীনমন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন: ” ওরে নিপীড়িত, ওরে ভয়ে ভীত শিখে যা আয় রে আয়/ দুঃখ জয়ের নবীন মন্ত্র সমবায় সমবায়।।”
ঢাকা ক্রেডিট এর কার্যক্রম ও সাফল্য দেখলে বিদ্রোহ কবির সেই কথার যথার্থতা পরিস্কারভাবে বুঝা যায়।
১৩। এজিএম চলাকালে বক্তাগণ সমবায় সমিতির লাভের ওপর সম্প্রতি আরোপিত ১৫% আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং যুক্তি তুলে ধরেন। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি আছে। আমরা এই দাবিটি বাস্তবায়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করবো।
১৪। ঢাকা ক্রেডিট কতখানি গণতান্ত্রিক?
সমিতিটি ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। নিয়মিত নির্বাচন হয়। সুতরাং সমিতিটির গণতান্ত্রিক চরিত্র এবং সুপরিচালনা নিয়ে কোনো সংশয় থাকার অবকাশ নেই। তবে একটি বিষয় আমার মনে খটকা সৃষ্টি করেছে। সমিতির ৪৬% সদস্য নারী। কিন্তু ১২ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ৩ জন যা ২৫-২৭%। এটি আনুপাতিক হারে কম। তাছাড়া সভাপতি, সহ-সভাপতি, সেক্রেটারী, ট্রেজারার– এই ৪টি মূল পদের একটিতেও নারী সমবায়ী নেই। এই সমিতির সভাপতি পদে এযাবত কোনো নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বলে কোনো তথ্য আমি পাইনি। আমি আমার বক্তব্যে সমিতির নেতৃবৃন্দকে নারীর ক্ষমতায়নে এবং সমিতির গণতান্ত্রিক চরিত্রকে ভেতর থেকে আরও মজবুত করার স্বার্থে বিষয়টি সিরিয়াসলি ভেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছি। সমিতিটির সামনের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারী সমবায়ীগণ অংশগ্রহণ করবেন এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বে নির্বাচিত হবেন বলে আমার প্রত্যাশা ও প্রার্থনা।
করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে জয়ী হয়ে গতকাল সশরীরে অফিস করেছিলাম। আর আজ ঢাকা ক্রেডিটের ঈদ উৎসবের মতো জন সমাগমে মুখর ও উচ্ছলিত ৬০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করে আমার ভালো লেগেছে অনেক অনেক বেশি। সমিতির প্রেসিডেন্ট মি. পংকজ গিলবার্ট কস্তা, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মি. বাবু মার্কুজ গমেজসহ নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা আমাকে এবং আমার সহকর্মীদের মুগ্ধ করেছে। সর্বোপরি সাধারণ সমবায়ীদের মধ্যে যে আনন্দের উচ্ছ্বাস ও উৎসাহ দেখেছি, তা আমার করোনা ভাইরাসে পীড়িত প্রাণে নবশক্তির সঞ্চার করেছে। এটাকে প্রাণশক্তির রিফুয়েলিং বলা যেতে পারে।
ঢাকা ক্রেডিট ধারাবাহিক সাফল্যের পথ ধরে এই পর্যায়ে আসতে পারলে, বারিধারা মহিলা সমবায় সমিতি আসতে পারলে অথবা চাঁদপুরের শিক্ষিত বেকার বহুমুখী সমবায় সমিতি পারলে, অন্যান্য সমিতি পারে না কেন ? কেন? নিষ্ঠাবান দূরদর্শী সমবায়প্রেমী নেতৃত্বের অভাব? অদৃশ্য গডফাদার আর অসৎ নেতৃত্বের অশুভ যোগসাজশ?
আমরা সফল সমিতিগুলোর বিববরণ নিয়ে ‘সমবায়ের সাফল্যগাথা’ প্রকাশ করেছি। এবার যে সকল বড় আকারের সমবায় সমিতি অনেক সাফল্য অর্জনের পর ব্যর্থ হয়েছে অথবা ব্যর্থ হতে বসেছে, তাদের নিয়ে ‘ব্যর্থ সমবায় সমিতির গল্প’ নামে প্রকাশনা বের করতে চাই।
বলা হয়, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়ো। আমি বলি, একটি সমবায় সমিতি তার নির্বাচিত নেতৃত্বের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের সমান বড়ো। ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন ও বর্তমান নেতৃত্ব বিশাল ও মহত লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে সমিতিটিকে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর করে তুলেছেন। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। থাকবে।
এই সমিতি এবং সমিতির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ইতিপূর্বে বহুবার শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতির এবং শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কার পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে। সামনেও পাবেন বলে আমার বিশ্বাস। সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক হিসেবে ঢাকা ক্রেডিটকে নিয়ে আমি গর্বিত। আনন্দিত। অনুপ্রাণিত।
ঢাকা ক্রেডিটকে
অভিনন্দন!
জয়তু সমবায় !!
লেখক: নিবন্ধক ও মহা পরিচালক, সমবায় অধিদপ্তর

(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেওয়া)