শিরোনাম :
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই: ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমাবেশে বক্তারা
পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার অবসান ও নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৬ জানুয়ারি, বৃহষ্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের জাতীয় সমন্বয় কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। নেতৃবৃন্দ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে বিরাজিত সাম্প্রদায়িকতায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা নি:সন্দেহে হুমকির মুখে পড়বে। তারা জাতীয় স্বার্থে এর জন্যে দায়ি ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিদানের জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বলেন, এতে গণতন্ত্রের বিকাশ অধিকতর সুসংহত হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, জগনাথ হল অ্যালুমিনাই এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হিন্দু লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র উপদেষ্টা সদস্য নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন যুগ্ন মহাসচিব জেমস সুব্রত হাজরা, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন তেজগাঁও শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জোনাস গমেজ, ব্যারিস্টার সুব্রত, ফাদার খোকন, নারী নেত্রী প্রিয়া সাহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, “আমাদের দুটি দাবি। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকরণ বা সাম্প্রদায়িতকতার অবসান ঘটানো এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। এটি ন্যায়সঙ্গত দাবি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে আধুনিক ও জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ভেবেছিলাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গণতান্ত্রিক ধারার আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকরণ করা হয়েছে। শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে পাঠ্যপুস্তকে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিষয় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কথা তার পরিবর্তে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা দু:খজনক।
সবার মিলিত রক্তস্রোতে দেশ স্বাধীন হয়েছে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গণতান্ত্রিক চেতনা প্রাধান্য পাবে। পাঠ্যপুস্তকেও তার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে অনেক বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে, বিচারের রায়ও কার্যকর করেছে। বিশ্বাস করি, কারো অযৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এমন কোন সিদ্ধান্ত নেবে না যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকৃত হয় বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে আমরা সরে আসি। পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, অসাম্প্রদায়িতার চেতনার প্রতিফলন ঘটবে এটাই প্রত্যাশা করি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন কাজেই তাঁর কাছে আমাদের আবেদন যা ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে তা যেন অনতিবিলম্বে সংশোধন করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন ফিরে আসে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকলে ভারসাম্য বজায় থাকে। সার্বজনীন বিষয়গুলি প্রাধান্য পায়।
নির্বাচন কমিশনে ধর্মীয় সংখ্যাঘুদের প্রতিনিধিত্ব আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রকে আরো সুসংহত করবে এবং নির্বাচন উত্তর ও পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। কাজেই জোর দাবি, গঠিত নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধ রাখতে হবে। এটা আমাদের প্রাণের দাবি। আমাদের প্রতিনিধি থাকলে নির্বাচন কমিশন আরও শক্তিশালী হবে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন, রাজনৈতিক দলগুলো ভেবে দেখবেন এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া বলেন, পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা অবিলম্বে বাদ দিতে হবে। এদেশ যেন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। প্রতিটি স্কুলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
২০০১ সালের নির্বাচনসহ পরবর্তী নির্বাচন উত্তর ও পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতনে শিকার হয়েছে। প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে একজন সদস্যের অন্তর্ভূক্তি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্বাচন উত্তর ও পরবর্তী নিরাপত্তা বিধানে জোড়ালো ভূমিকা রাখবে। এটা আমাদের জোর দাবি।
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:-এর প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। কাজেই আশা করবো সরকার এ ব্যাপারে দ্রুততার সাথে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবেন। পাশাপাশি তিনি নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।”
এসএন/আরবি/আরএস/আরপি/২৭ জানুয়ারি, ২০১৭