শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের নারী নিরাপত্তা কর্মীদের জীবনের গল্প
সুমন কোড়াইয়া ॥ ঢাকা
রংপুরের পীরগঞ্জের সাবিনা টুডু (৩৬) কোনোদিন ঢাকা আসেননি। তাঁর নানি ঢাকায় চাকরি করেন। তিনি নানির কাছে এসেছিলেন বেড়াতে। তখন তিনি খবর পান দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর সিকিউরিটি সার্ভিস প্রজেক্টে নারী নিরাপত্তকর্মী নিয়োগ হবে। দেশে না ফিরে সেখানে চাকরির ইন্টারভিউ দিলেন। তাঁর চাকরি হলো। তিনিই ওই কোম্পানির প্রথম নারী নিরাপত্তকর্মী। সিকিউরিটি সার্ভিস প্রজেক্ট থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বাসায় নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, ‘গ্রামে বেকার ছিলাম অনেক দিন। চিন্তা করলাম ঢাকা চাকরি করি। যদিও প্রথম প্রথম নারী নিরাপত্তকর্মী হিসেবে কাজ করতে লজ্জ্বা লাগতো। এছাড়া পরিচিতরা সমালোচনা করতো। বলতো সিকিউরিটি গার্ডের কাজ হলো পুরুষদের কিন্তু তুমি কর কেন? বাস্তবে দেখলাম, নিরাপত্তার জন্য নারী সিকিউরিটি গার্ডেরও প্রয়োজন। এ ছাড়া আমি যখন বেকার ছিলাম, তখন তো কেউ এগিয়ে আসে নাই চাকরি দেওয়ার জন্য। তাই পাছে লোকে কিছু বলে- এতে কান না দিয়ে চাকরি করছি।’
মাস শেষে বৃদ্ধ বাবা-মাকে টাকা পাঠান সান্তাল ক্ষুদ্র নৃ-গাষ্ঠীর সাবিনা। তিনি বলেন, ‘এখন আমি স্বাবলম্বি। বেকার না থেকে টাকা আয় করতে পারছি। তাই পরিবারে আগের তুলনায় এখন আমার সম্মান বেশি। এখানে চাকরি করতে পারায় নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখি।’ অফিস থেকে তাঁকে থাকার জায়গা দেওয়া হয়েছে। খাবার খরচ নিজেকে বহন করতে হয়।
সাবিনার মতো আরেকজন গারো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সীমা নেকলা (২৫)। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ মধুপুরের চাপাইগ্রামের অধিবাসী সীমা ঢাকায় এসেছিলেন ২০১৭ সনে। কিন্তু চাকরি হচ্ছিলো না। এক বছর বেকার থেকে তিনি দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা-এর সিকিউরিটি সার্ভিস প্রজেক্টে নারী নিরাপত্তকর্মী পদে চাকরি পান। গ্রামে তাঁর স্বামীসহ ছয় বছরের ছেলে থাকে। সীমা মগবাজারের মনিং স্টার নামের একটি সমবায় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তকর্মী হিসেবে সেবা দেন। নারী নিরাপত্তকর্মী হিসেবে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় এই বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম প্রথম তাঁর নিজের সংকোচ ও লজ্জ্বাবোধ হতো। এখন আর হয় না। বরং তিনি যখন নিরাপত্তাকর্মীর ইউনিফরম পরে ডিউটি করেন, তখন তিনি সম্মান পান। আগে বেকার ছিলেন। সংসারের অনেক চাহিদা মেটাতে পারতেন না। এখন ছেলের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের খরচ বহন করতে পারছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি যে সমবায় সমিতিতে নিরাপত্তা প্রদান করি, সেখানকার কর্মকর্তা ও কর্মীরা আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমি খুব সামান্য নিরাপত্তা কর্মী কিন্তু আমার ওপর ন্যাস্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব। আমার পেশাতে আমি খুব খুশি।’
বরিশালের উজিরপুরের পুরুলিয়া গ্রামের রত্না বাড়ৈ একজন সিঙ্গেল মাদার। দুই সন্তানের জননী রত্না হেরে যেতে শিখেননি। নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করে তিনি দুই সন্তান নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা ক্রেডিট ছাত্রী হোস্টেলে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। তাঁর ডিউটি সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আট ঘন্টা ডিউটি করার পর ওভারটাইম পান।
রত্না, সীমা ও সাবিনার মতো ১৫ জন নারী নিরাপত্তাকর্মী চাকরি করছেন সমবায় প্রতিষ্ঠান দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা-এর সিকিউরিটি সার্ভিস প্রজেক্টে। তাঁদের বিনামূলে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানটি। নারী নিরাপত্তাকর্মীরা চাকরিতে যোগদানের আগে এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। তারা জানিয়েছেন, দিন দিন নারী নিরাপত্তাকর্মীদের চাহিদা বাড়ছে। তাই তাদের পেশাও জনপ্রিয় হচ্ছে। আগে কিছু পুরুষ নারী নিরাপত্তা কর্মীদের পেছন থেকে বাজে মন্তব্য করলেও, এখন তা কমে এসেছে বলে তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া তাদের স্বজনরাও সহজভাবে নিয়েছে এই পেশাটিকে। সবচেয়ে বড় কথা, সৎভাবে চাকরি করে তারা পরিবারের অভাব দূর করতে পারছেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা ক্রেডিট সিকিউরিটি সার্ভিস প্রজেক্ট