শিরোনাম :
ফ্ল্যাটের মালিক হলেন যেভাবে …
লিখেছেন… সুমন কোড়াইয়া
চয়ন হিউবার্ট রিবেরুর জন্ম তুমিলিয়া মিশনের চড়াখোলা গ্রামে।
তিনি পড়াশোনা শুরু করেন তুমিলিয়া প্রাইমারি স্কুলে, তারপর তুমিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাশ সেভেনে পড়ার পর বান্দুরা হলিক্রশ হাই স্কুল থেকে এসএসসি, নটরডেম কলেজ থেকে ডিগ্রি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্ম জীবনে চাকরির পাশাপাশি তিনি গ্রীন ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইনান্সে এমবিএ এবং সেন্ট ফ্রান্সিস ইনিভার্সিটি কানাডার কডি (COADY Institute) থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর কর্ম জীবন শুরু হয় ক্যাথলিক সেবাদল (ছাত্রাবস্থায়), তারপর কারিতাসে যোগদান করেন এবং এখনো সেখানে কর্মরত রয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সুপ্রিমকোর্টের আইজীবী, এক ছেলে সেন্ট যোসেফ হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে এবং এক মেয়ে হলিক্রশ গার্লস্ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর মা জীবিত আছেন, তাঁর সাথে থাকেন। তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন। বড় বোন পিমে সম্প্রদায়ের একজন সিস্টার।
তিনি ছাত্র জীবনে দুই দিন ক্লাশ করে ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য হন। তাঁর ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য নম্বর: ৬৭৭৬।
তিনি ঋণ করে বিয়ে করেন ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে ১৪ জানুয়ারি। তখন তিনি কারিতাস ঢাকা আঞ্চলিক অফিসে কাজ করেন শিক্ষাকর্মকর্তা হিসেবে। যা বেতন পেতেন, তার সিংহভাগ চলে যেতো ঘরভাড়া ও ঋণ শোধে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজাবাজার থাকতেন। তখন ঢাকা শহরে ফø্যাট ক্রয় করা মানে কল্পনার অতীত। ঠিক এ সময় তাঁর এক বন্ধু খবর দিলেন মনিপুরীপাড়া ভোলা নামের এক ব্যক্তি কম খরচে ছোট ফ্ল্যাট খ্রিষ্টানদের জন্য দিচ্ছে। তখন বেশি পাত্তা দেননি। চয়ন স্মৃতিচারণ করে বলেন, “একদিন হঠাৎ ভোলাদার সাথে সাক্ষাত হলো। তিনি আমাকে ফ্ল্যাট নেয়ার জন্য বললেন এবং আমি তাকে আমার বাস্তবতার কথা বলি। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি এক কাজ করো, আমাকে অল্প টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুকিং দাও এবং প্রতি মাসে যা পারো অল্প অল্প করে দিও। যখন ফ্ল্যাট নির্মাণ শেষ হবে, তখন তুমি ঢাকা ক্রেডিট থেকে ঋণ নিয়ে আমাকে দিয়ে দিবে।’ আমি বললাম, ‘আমি ঘরভাড়া দিয়ে হাতে তো তেমন কিছুই থাকে না।’ তিনি বললেন এখন বুকিং দাও, ‘আগামী দুই বছর পর তোমার বেতন বাড়বে এবং তোমার স্ত্রী আয় রোজগার করতে শুরু করবে’।”
উল্লেখ্য, তখন চয়নের স্ত্রী আইন পেশা নিয়ে পড়াশোর প্রায় শেষ দিকে। ভোলা তাঁকে আরো বললেন, ‘আমি তোমার জন্য এটুকু করতে পারি, যেদিন আমি ফ্লাটের চাবি দিব, সেদিন তুমি ঢাকা ক্রেডিটের ঋণের চেক দিবে, তাহলে তোমার ঘরভাড়াটার টাকা আর কিছু যোগ করে ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারলা।’ এ বিষয়টি নিয়ে চয়ন তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু জোনাস গমেজের (যিনি ঢাকা ক্রেডিটে কর্মরত আছেন) সাথে আলোচনা করেন এবং কীভাবে ঋণের আবেদন করলে, তিনি বেশি বারডেনে (বোঝা) পড়বেন না ইত্যাদি বিষয়ে জোনাস পরামর্শ ও সাহায্য করেন।
চয়ন বলেন, ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সত্যিই আমার একটা প্রমোশন হয়। কারিতাস ঢাকা অঞ্চল থেকে প্রমোশন পেয়ে, কারিতাস কেন্দ্রীয় অফিসে আসি। ভোলদার কথা মতো ঠিকই ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে আমাকে ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে ঢাকা ক্রেডিটে উপস্থিত হয় আর বন্ধু জোনাস গমেজের পরামর্শ অনুযায়ী ঋণের আবেদন করি এবং ঐ দিন ঋণের চেক ঢাকা ক্রেডিট থেকে নেই এবং আরেক হাতে ফ্ল্যাটের চাবি ভোলাদার কাছ থেকে বুঝে পাই।’
চয়ন আনন্দিত হয়ে বলেন, ‘প্রথমে ধন্যবাদ জানাই ভোলাদাকে তার উদার সহযোগিতার জন্য আর ঢাকা ক্রেডিককে কৃজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করতে চাই কারণ এ ফ্ল্যাটের স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হতো না যদি না ঢাকা ক্রেডিট সে সময় আমাকে ঋণটা না দিত।’
চয়ন জানান, ঢাকা ক্রেডিটে ঋণ ছাড়া, তাঁর ছেলে-মেয়ের সঞ্চয় শিক্ষা হিসাব আছে, বি সেভার্স আছে, এইচডিপিএস, স্বাস্থ্য হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাবের ইত্যাদি সুবিধা পাচ্ছেন।
তিনি মনে করেন ঢাকা ক্রেডিটের ঋণ তাঁকে ঢাকা শহরে ফ্লাট কেনার মতো স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার উল্লিখিত ঘটনা তাই প্রমাণ করে এবং আমার বন্ধু জোনাস, ঢাকা ক্রেডিটে কাজ করেন, তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন, বিধায় আজ আমি একটি ফ্ল্যাটে মালিক হতে পেরেছি।”
এই সমিতি থেকে তিনি ও তাঁর পরিবার কীভাবে উপকৃত হয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে চয়ন বলেন, ‘প্রথমত একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছি, তাছাড়া আরো ছোটখাটো পারিবারিক কাজের জন্য ঋণ নিয়ে কাজ করেছে, যা আমাকে আজ একটা ভালো অবস্থানে আসার অবদান রেখেছে।’
ঢাকা ক্রেডিট থেকে চয়নের মতো যাঁরা ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ নিতে চান তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট থেকে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে সুপারিশ করি কারণ অন্য যে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান তারা তাদের নিজেরটা আগে বুঝে নেয়। প্রথমত অনেক ধরনের কাগজ পত্র যোগার করা, জামানত দিতে হয়, ফি দেয়া, হিডেন চার্চ এবং সহজে ঋণ শেষ হতে চায় না, কারণ তারা প্রথমে ঋণের সেবামূল্য বেশি বেশি কেটে নেয়, আসল কম কাটে আবার আপনি ইচ্ছা করলেই আপনার মতো করে আসল ফেরৎ দিতে পারবেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাদের নির্দিষ্ট অংকের বাইরে আপনি আসল ফেরত দিতে পারবেন না। অন্যদিকে ক্রেডিট ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি ঋণ অনুসরণ করে, রিবেট দেয় এবং যেকোন সময় আপনি যে কোন পরিমাণ আসল ইচ্ছা করলেই পরিশোধ করতে পারবেন।’
চয়ন বর্তমানে কারিতাস এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইনিয়ন লিমিটেড-এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শেষে তিনি বলেন: ‘আমরা যাঁরা খ্রিষ্টান তাঁদের ঢাকা শহরে থেকে খেয়ে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে চলাটাই খুবই কষ্টকর। তাই ক্রেডিট সকল খ্রিষ্টানদের জন্য কমমূল্যে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা, কমকিস্তিতে ও কমসুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের মত মধ্যবিত্ত সকলের ঢাকা শহরে মাথা গোজার একটা ব্যবস্থা করা যাবে।’
এটা শুধু চয়ন হিউবার্ট রিবেরুর গল্প নয়। তাঁর মতো ঢাকা ক্রেডিট থেকে ঋণ নিয়ে ৬০০-এরও অধিক সদস্য ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন।
আরো পড়ুন:
ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন ঋণ প্রোডাক্ট
ঢাকা ক্রেডিটের অ্যাপে যুক্ত হলো সিউরিটি স্টেটাস