ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় শাস্তি তো আসবেই, এটা সত্য

শাস্তি তো আসবেই, এটা সত্য

0
803

|| এ্যাগনেস আনন্দ ম্যাকফিল্ড ||

আর সদাপ্রভু নোহকে কহিলেন, তুমি সপরিবারে জাহাজে প্রবেশ কর,

 কেননা এই কালের লোকদের মধ্যে আমার সাক্ষাতে তোমাকেই ধার্মিক দেখিয়াছি।

আদিপুস্তক ৭:১পদ

প্রচন্ড এক সাইক্লোনের আশংকা করা হচ্ছে। যা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

  তাতে করে দেশে মৃত্যু, মহামারী ও ধ্বংসলীলা দেখা দিবে।

নোহ কে?-

মানুষকে পরিবর্তনের জন্য ঈশ্বরের প্রেরিত পৃথিবীতে আগত এক মহা নবীই নোহ।  প্রায় সাড়ে নয়শত বছর আয়ু লাভ করেছিলেন তিনি।  পৃথিবীর পথ ভুলার মানুষকে পথে আনার জন্য দিনের পর দিন কাজ করেছেন।  কিন্তু জাগতিক মানুষ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাঁর আধ্যাত্মিক বাক্যকে অগ্রায্যই করেছে। যারা তাঁর বাক্য গ্রহণ করেনি তাদের উপরের ঈশ্বরের গজব নেমে এসেছিল।

জাহাজ কী?

জাহাজ এক ধরনের বৃহদাকার জলযান যা নদী কিংবা সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী করে যাত্রী কিংবা মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়।  আধুনিক সভ্যতার বিস্তারেও জাহাজের অবদান অনস্বীকার্য। এখনও পর্যন্ত জাহাজ তথা নৌ পরিবহনই হিসেবে সবচেয়ে বিবেচিত হয়।

মহামারী কী

যেকোনো সংক্রামক রোগ যা দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক লোককে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ স্বল্প সময়ের মধ্যে সংক্রামক রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া, সাধারণত দুই সপ্তাহ বা তার কম সময়ের মধ্যে জনসংখ্যার  একটি বৃহৎ সংখ্যক লোককে বিপর্যস্ত করে তোলার রোগের নামই মহামারী।

সাইক্লোন কী?

সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্ট যে কোন  ঘূর্ণিঝড়কেই সাধারণত সাইক্লোন বলা হয়।  ভারত মহাসাগরীয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় সামুদ্রিক  ঘূর্ণিঝড়কে তিনটি নামে অভিহিত করা হয়। এর ভিতরে ভারত মহাসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কেই বিশেষভাবে সাইক্লোন বলা হয়।

হঠাৎ  করেই যদি উপরোল্লিখিত কথাগুলো আমরা রেডিও বা টেলিভিশনে শুনতে পাই এবং মনে করি শুধু আমার বাড়ীতেই একটি রেডিও আছে তবে একমাত্র আমিই এই বিপদের কথা জানি। তখন আমি কি বোধ করতাম?  আমার অগ্রনী ভূমিকা কি থাকতো? যতদূর সম্ভবত:  নিজের পরিবারের কথাই আমার প্রথমে মনে পড়বে।  পরিবারের সকলকে সর্তক করে দিয়ে বলতাম;  চলো  আমরা বাঁচার চেষ্টা করি। তারপর হয়তো আশ-পাশের লোকদের বলতাম। এক প্রচন্ড সাইক্লোন আসতে যাচ্ছে।  চলো আমরা সকলে কোন এক সাইক্লোন সেন্টার বা নিরাপদ  স্থানে চলে যাই।

ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলা, তাঁর রব শোনা এবং তাঁর কাছ থেকে নির্দেশ লাভ করা এই ব্যাপারটি আমাদের কাছে কেমন  বলে মনে হয়? এমন অনেক ভাববাদী আছেন; অতীতে তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছিলেন বলেই আজ আমরা পবিত্র বাইবেলের মাধ্যমে  জানতে পারছি। আব্রাহাম, মোশী, দায়ুদ এবং প্রভু যীশুর মত লোকেরা কীভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে বাণী লাভ করেছিলেন তা আমরা অবগত আছি। তাদের জীবন  ও কাজ সম্বন্ধে বুঝতে পারি কীভাবে আমরাও ঈশ্বরের রব শুনতে পারি ও আরো ভালভাবে তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারি।

এ্যাগনেস আনন্দ ম্যাকফিল্ড

হয়তো তখন কেউ আমার কথায় কান দিবে না। আর আমি এটাও জানি যে, তারা বলবে  আমি নাকি পাগল হয়ে গেছি, খুব তাড়াতাড়ি পাবনার পাগলা গারদে নিতে হবে। তারা আমাকে  এও বলবে আমি কোন এক আবহাওয়াবিদ বা কোন বিশেষজ্ঞ নই। আবার হয়তো  বলবে বড় বড় ঝড়ের গল্প শুনলে আমরা ভয় পাই না, আমরা আজ আমোদ-প্রমোদ করছি আপনি চলে যান তো, আপনি গেলেই তো আমি বাঁচি। এদেশে এর আগে কখনও এমন ঝড় হয়নি, আর হবেও না। আমরা আপনার কথা বিশ্বাস করি না।

ঠিক এরকমই একটা ঘটনার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন নোহ। অবশ্য তিনি রেডিও বা কোন টেলিভিশনে এই খবর পাননি। সরাসরি ঈশ্বরের কাছ থেকেই একটি খবর পেয়েছিলেন। একমাত্র নোহ-ই জানতেন যে, এক মহা জল-প্লাবন এসে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ঈশ্বরের আদেশে তিনি একটি বড় জাহাজ নির্মাণ করেছিলেন। পাশাপাশি লোকদেরও সাবধান করেছিলেন কিন্তু তারা কেউ তাঁর কথা শুনেনি। তখন আকাশ ছিল উন্মুক্ত। সবাই যার যার মত মিথ্যা দুষ্টামীর আনন্দে মেতে উঠেছিল। ঈশ্বর দেখলেন মানুষ তখনও তাদের স্বভাব পাল্টায়নি। অনেকেই বিপদগামী হয়েছিল। তাদের দেহ- মনকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিল। দৈহিক আনন্দে, খাদ্য পানীয়, বড় বড় উৎসব অনুষ্ঠানের কথাই চিন্তা করত। ঈশ্বরের  প্রয়োজন অনুভব করত না।  আর ঈশ্বর দেখলেন, মানুষের দ্বারা পৃথিবী দৌরাত্মে পূর্ণ হয়েছে। পৃথিবীর অবস্থা দেখে ঈশ্বর মোটেই সন্তুষ্ট ছিলেন না।

আসলে পাপ কাকে বলে? এর সংজ্ঞা আমরা নিজেদেরই প্রশ্ন করি। পবিত্র কিভাবে হতে হয় তাও আমরা জানি না।  ঐগুলো চিন্তা করার যথেষ্ট সময়ও আমাদের হাতে এখন নেই।  আমরা মনে করি শুধু খারাপ কাজ করাকে পাপ বলে। মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সড়ে যাওয়ার ফলে তাদের যে অন্তরের দুরাবস্থা …আমি মনে করি তা-ই পাপ। ঈশ্বর বিভিন্নভাবে আমাদের মাঝে ধরা দেন। তাঁকে বিভিন্নভাবে জানা যায়।  বর্তমানে  পরিবর্তিত  অনেক মানুষ তাদের জীবন সাক্ষ্য দিয়ে কত রকমের আত্মিক জাগরণমূলক বিভিন্ন বই প্রকাশ করেছেন।  হতাশার সুরে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে- এই তো সেদিন নজরে পড়ল একটা দৃশ্য- স্টলে সাড়ি সাড়ি করে রক্ষিত পাশাপাশি সিদ্দিকা কবিরের “রেসিপি বই” এবং আরেকটি “ধর্মীয়  আত্মিক জাগরণমূলক” বই। রেসিপির বইয়ের দাম ৫০০টাকা , ধর্মীয় বই মাত্র ১৫০টাকা। দেখা গেল  কম দামী ধমীর্য় বইটি যেভাবে ছিল সেভাবেই পড়ে রয়েছে। রেসিপির বই কিন্তু শেষ।  মানুষ এখন কি খাবে কি পরবে এই নিয়ে ব্যস্ত। ঈশ্বর যদিও  এখনও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু সামনে এমন এক সময় আসছে যে, তাঁকে অতি শ্রীঘ্রই ঘোষণা করতে হবে তিনি আর জগৎকে মানুষের পাপাচারে কলুষিত হতে দিতে পারেন না।  এখানেই সেই তিন জন শিশু লুসি, ফ্রান্সিস ও জাসিন্তাকে  দেওয়া মারীয়ার ভাবষ্যত বাণীর সততা মিলছে যে, মানুষ ধর্মের প্রতি  মাত্রাতিরিক্তভাবে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।  তারপরও আমরা তাকিয়ে আছি সেই নতুন ভোরের সুর্যোদয়ের মুখ দর্শনের অপেক্ষায়।

আমাদের পৃথিবীতে আজও অনেক নোহ রয়েছে , যাদের দ্বারা যীশু এবং তাঁর মা  মারীয়া বার বার দেখা দিয়ে সজাগ করে যাচ্ছেন।  তিনজন শিশু সন্তান –  লুসি, ফ্রান্সিস ও জাসিন্তার নিকট মা মারীয়ার দর্শন দানের কথা নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে। তাঁদের মধ্যে বড় বোন সি: লুসিয়া মাত্র কয়েক বছর আগে মৃত্যবরণ করেন।  পর্তুগালের বাসিন্দা সিস্টার লুসিয়া। লুসিয়া পোপ দ্বাদশ পিউস-এর নিকট এক ভবিষ্যত বাণী প্রেরণ করেন, পোপ যখন এই ভবিষ্যত বাণী পাঠ করলেন, তিনি সংবাদটি চক্ষুর অন্তরালে সরিয়ে রাখলেন এবং তা প্রকাশ করলেন না। তার মৃত্যুর পর পোপ একবিংশ জন ও সংবাদটি গোপন রাখতে বললেন। এই সংবাদ প্রকাশের পর লোকদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিশৃংখলার কথা চিন্তা করে ভ্যাটিকান এই সংবাদটি প্রকাশ করতে চাননি। পোপ জনের পর পোপ ষষ্ঠ পলকেও ভ্যাটিকান এই সংবাদ সম্পর্কে অবহিত করেন। পোপ পল তা পাঠ করে খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এর মধ্য থেকে শুধুমাত্র কিছু অংশ তিনি সকলকে জানতে দেয়ার অনুমতি দেন। এই ঘটনা ঘটে ১৯৬৩-৬৪ সাল নাগাদ।

সময় ঘনিয়ে আসছে বলেই তিনি তা প্রকাশ করলেন। কারণ মাতা মারীয়া লুসিয়াকে বলেছিলেন, হে আমার সন্তান ১৯৫০-২০০০ সালের মধ্যে যেসব  ঘটনা  পৃথিবীতে ঘটবে তা তুমি সমস্ত লোকদের জানাও। ঈশ্বর মানুষের সামনে যে সব আজ্ঞা রেখেছেন, মানুষ তা শ্রবণ করে না। শয়তান পৃথিবীতে এবং মানুষে মানুষে ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে।  এমন সব আগ্নেয়াস্ত্র তৈরী হচ্ছে যা মানুষকে মুহূর্তের  মধ্যে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। মানুষ পাপে নিমজ্জিত হচ্ছে এবং শয়তান মানুষের মনে এমনভাবে বীজ বপন করছে যে, কেউ কাউকে সহ্য করতে পারবে না। মানুষ ধর্মের প্রতি উদাসিন হয়ে যাবে এবং ধর্মীয় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে এবং মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তাইতো শুনতে পাচ্ছি অধর্মের ঢামাঢোল- বিদেশের বিভিন্ন যায়গায় নাকি গির্জাঘর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। শূণ্য গির্জাঘর আর কোন কাজে আসছে না।  মানুষ আর গির্জায় যেতে পছন্দ করে না ।  মাঝে মাঝে কিছু জায়গায় যদিও গির্জায় আসছে শুধু বুড়ো-বুড়িরা কিন্তু যুবক-যুবতীরা কেউ না। আমরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? সময় করে একটু ভেবে নিতে হবে বৈকি।

যেভাবে সেই তিনজন শিশু মা মারিয়ার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন এবং মা তাঁর পবিত্র  বাণী প্রচার করার জন্য এই তিন জনকে এবং পৃথিবীতে আরো অনেক সাধুসাধ্বীদেরকে   বেছে নিয়েছিলেন ঠিক সেই ভাবে নোহ মানুষের স্বাভাবিক পাপের অধীন হলেও তিনি সৃষ্টিকর্তার খুব কাছাকাছি ছিলেন এবং তাঁর সংগে থাকতে ইচ্ছুক ছিলেন বলে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেয়েছিলেন। নোহ ঈশ্বরের সব সময় বাধ্য থাকতেন। ঈশ্বর তাকে তাঁর বহনকারী করতে চেয়েছিলেন। নোহকে একটি বিরাট জাহাজ তৈরী করতে বললেন, যা  জলের উপর ভেসে উঠতে পারে বন্যার সময়।  ঈশ্বরই সমস্ত নির্দেশে মাপ-ঝোপ বলে দিলেন।  নোহকে আরো বলা হয়েছিল যে, জাহাজ তৈরী শেষ হলে নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি শুরু হবে। পৃথিবী জলে ডুবে যাবে।  জাহাজে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া বাকী সব কিছুই জলে ডুবে যাবে। যাতে বন্যা শেষে আবার নতুন করে সব শুরু হতে পারে। শাস্তি যে আসবেই এই সত্যটি এবং পরিত্রাণের পথটিকে তুলে ধরবার জন্য ঈশ্বর ‘মানুষ নোহকে’ এবং একটি উপায় অর্থ্যাৎ ‘জাহাজটিকে’ ঠিক করে রেখেছিলেন।

  ‘বাঘ এসেছে বাঘ এসেছে’ গল্পটি হয়তো ছোট্ট থেকে বড় অনেকেরই মনে আছে। অত্যন্ত যর্থাততা ও সত্যতা রয়েছে এই গল্পে। মাঝে মাঝে আমরা ফেস বুকের মাধ্যমে, রেডিও, টি.ভি. ও পেপারের মাধ্যমেও  বহু সর্তক বাণী পাচ্ছি। কিন্তু কতজন সে দিকে নজর দিচ্ছি? ঈশ্বর নোহের সাথে নিয়ম স্থির করেছিলেন। তিনি এক বিশেষ কারণে এখানে ‘নিয়ম’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। নিয়ম একটা চুক্তির মত। যারা নিয়ম বা চুক্তিবদ্ধ হয়, তাদের সকলের একটা ‘পবিত্র দায়িত্ব’ থাকে। নোহ ঠিকই ঈশ্বরের আদেশ পালন করে পরিবারসহ রক্ষা পেলেন। পৃথিবীর উপর শাস্তি এলো। শুরু হলো এক ভয়ানক মহা জল প্লাবন।  চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত (আদিপুস্তক ৭:১৭-১৯পদ)।

ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের এবং তোমাদের ভাবী বংশধরদের সাথে আমার নিয়ম স্থির করি।” আর ঈশ্বর তাঁর চিহ্ন হিসাবে রংধনু দিলেন এইভাবে আবারও তিনি মানব জাতির জন্য তাঁর চিন্তা ও আশা প্রকাশ করবেন কিন্তু  এরকম মহা প্লাবণ দিয়ে নয় অন্যভাবে। তিনি চেয়েছেন, নোহের এই কাহিনী যুগ যুগ ধরে লোকেরা শুনবে। তাই নোহের কথা স্মরণ করতে হবে যে, তার সময়ে মহা জল প্লাবন এসে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত পাপী মানুষেরা যেমন তাঁর কথায় মনোযোগ দেয়নি, তেমনি ভবিষ্যতেও  এমন এক ভয়ানক দিন আসছে যখন ঈশ্বর এই পৃথিবীর বিচার করবেন।