ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কালো দিবস পালন

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কালো দিবস পালন

0
392

ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা

দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কালো দিবস পালন করে ৯ জুন। ১৯৮৮ সনের এই দিনে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে আইনে পরিণত করা হয়। এর পর থেকে ৯ জুনকে প্রতি বছর ঐক্য পরিষদ প্রতি বছর কালো দিবস হিসেবে পালন করে।

কালো দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে ঐক্য পরিষদ। ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক। স্বাগত বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ ও আওয়াসী লীগ নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবীর, ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, অসীম কুমার উকিল, ড. বীরেন শিকদার প্রমুখ। ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হেমন্ত আই কোড়াইয়া, সাংবাদিক বাসুদেব ধরসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন।

সভায় বক্তাগণ বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শুরু ১৯৭৫ সনের পর থেকে। এই সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব পড়ে সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতিতে। এর শিকার দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সময় ১৯৮৮ সনে ৯ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি যুক্ত হয়। দেশের অসাম্প্রদায়িক নানা শক্তি তখন এর বিরোধিতা করে।

আলোচনায় উঠে আসে দেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় একটি কমিশন, মন্ত্রণালয় ও আইন দরকার। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্মী ইসলামকে অবলুপ্ত করে তাঁরা ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এই দেশের মানুষ, ১৯৮৮ সনে ৯ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী সেই চেতনার পরিপন্থী ও সাংঘষিক। আগামীতে ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোন বিকল্প নাই বলে তাঁরা মনে করেন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রানা দাশগুপ্ত তাঁর সূচনা বক্তব্যে সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও কালো দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও গবেষক আবুল বারকাতের সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায় ‘সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ শোভন সমাজের অশোভন প্রতিপক্ষ’ থেকে একটি অংশ থেকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সংবিধানের পরিবর্তনে দেশের বিকাশ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পশ্চাদমুখী পরিবর্তন ঘটেছেÑশোভন সমাজ ব্যবস্থামুখী থেকে অশোভন ব্যবস্থামুখী। তখন থেকেই সবকিছু চলছে উল্টোপথে, যে পথ থেকে বাংলাদেশ কখনো তার ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তস্নাত পথে ফেরেনি, কেউ ফেরাতে পারেনি। এই প্রক্রিয়া যৌক্তিভাবেই সমাজ অর্থনীতি রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকীকৃত করেছে। ধর্মের রাজনৈতিকীকরণ আর রাজনীতিকৃত ধর্ম এখন সমাজ অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবেশ করেছে। এই প্রক্রিয়াটার প্রতিফল দাঁড়িয়েছে এমন যে, তার সমাজ সংস্কৃতি কৃষ্টিসহ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মন মননের অন্তস্থ আলোকিত অসাম্প্রদায়িক প্রবণতাকে আপাত পশ্চাদমুখী করে ছেড়েছে। সর্বব্যাপ্ত এই সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী প্রবণতা রাষ্ট্রের চরিত্র পাল্টাতেও প্রভাবকের কাজ করেছে, করছে। এমনই বাধ্য করেছে যে, একদিকে ধর্মীয় আচার রূপান্তরিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় আচারে, আর অন্যদিকে রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারিত্ব প্রদানে। রাষ্ট্রটাই এখন ধর্মভিত্তিক হয়ে সাংবিধানিকভাবে জন্মসূত্রে অসাম্প্রদায়িত বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রের ধর্ম বানিয়ে ছেড়েছে।