শিরোনাম :
ভাওয়াল অঞ্চল ও নদ্দায় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ (ভিডিও)
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
নদ্দা ও ভাওয়াল অঞ্চলের মঠবাড়ী, নাগরী, তুমিলিয়া ও দড়িপাড়া এলাকায় ধারাবাহিকভাবে ত্রাণ বিরতণ করে ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশন।
২০ আগস্ট সকাল ৭টায় নদ্দায় ঢাকা ক্রেডিট ইউনিয়ন স্কুল চত্বরে ত্রাণ বিরতণ করা হয়। এরপরই ধারাবাহিকভাবে সকাল ৯টায় মঠবাড়ীতে ঢাকা ক্রেডিট রিসোর্ট এন্ড ট্রেনিং সেন্টারে, বিকাল ২টায় নাগরী গির্জার জ্যোতি ভবনে, বিকাল সাড়ে ৩টায় তুমিলিয়া ক্রেডিটের হলরুমে, বিকাল সাড়ে ৫টায় দড়িপাড়া গির্জা প্রাঙ্গণে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা, সেক্রেটারি লিটন টমাস রোজারিও, সদস্য ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, সদস্য রতন পিটার কোড়াইয়াসহ ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর সজল যোসেফ গমেজ, মনিকা গমেজ, আনন্দ ফিলিপ পালমা, সলোমন আই. রোজারিও, প্রত্যেশ রাংসা, ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান লিনুস সজল ক্রুশ, সেক্রেটারি জনি গমেজ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশন।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘ফাদার ইয়াং আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের যেন দুর্দশা দূর হয়। এই উদ্দেশেই ফাদার ইয়াংকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা তাঁর নামে ফাউন্ডেশন করেছি। এমন কোনো সমবায়ী নেই, যারা ফাদার ইয়াং-এর নাম শোনেনি। ফাদার ইয়াং-এর আদর্শ সকলের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের এই ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই করোনা অতিমারিতে অসংখ্য মানুষ দুর্দশায় পতিত হয়েছেন। আমরা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। এই ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে অসহায় দুস্থদের সহযোগিতা করা। এ ছাড়াও এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি প্রদান ও গবেষণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।’
ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি লিটন টমাস রোজারিও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছি। হয়তো এক সময় এই করোনার ক্রান্তিলগ্ন থাকবে না, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে আমাদের একত্রিত প্রচেষ্টায়। ঢাকা ক্রেডিট এই ফাউন্ডেশনে অনেক বড়ো অংশিদারিত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায়ও সহযোগিতা পেয়েছি এবং অনেক প্রতিষ্ঠানও এই প্রক্রিয়ার অংশ নিতে অঙ্গিকার করেছে। সুতরাং আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই অতিমারি আমরা মোকাবেলা করতে পারবো বলে আশা করছি। আমরা ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে সাধারণ সদস্যদের জন্য সরাসরি কাজ করতে পারি, কিন্তু এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ হয়েছে।’
ফাউন্ডেশনের সদস্য ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সদস্য ও দেশের মানুষের কথা ভাবে। তাই ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করোনা সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যারা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুঃখে-কষ্টে দিনানিপাত করছে, তাদের মাঝে খাদ্য শস্য বিতরণ ও স্বাস্থ্য সামগ্রী প্রদান করে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা আত্মমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছি। আশা করি সকলের সহযোগিতায় আমরা আরও বেশি সহযোগিতার হাত প্রসারণ করতে পারবো।’
ফাউন্ডেশনের সদস্য রতন পিটার কোড়াইয়া বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট শুধু সদস্যদের জন্য সরাসরি কাজ করতে পারে। কিন্তু ফাউন্ডেশন সকলের জন্য কাজ করতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে পারছি। ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যহত থাকবে। আপনারাও আপনাদের সামার্থনুযায়ী আমাদের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন।’
ত্রাণ কার্যক্রমের অনুষ্ঠাগুলো সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশন। তিনি ত্রাণ বিতরণের পূর্বে সকলকে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষের সামার্থনুযায়ী এই মহতী কাজে অন্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
নদ্দায় অনুষ্ঠিত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন নদ্দা সেবা সেন্টারের আহ্বায়ক শিপন রোজারিও। এ ছাড়াও কালিগঞ্জের মঠাবাড়ীতে ত্রাণ বিতরণে অংশ নেন মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান সুরেন রিচার্ড গমেজ, ভাইস চেয়ারম্যান ডেভিড রোজারিও, মঠবাড়ী সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান রঞ্জন পেরেরা, বোর্ড অব ডিরেক্টর খ্রিষ্টফার রোজারিওসহ আরো অনেকে। নাগরী ত্রাণ বিতরণে স্থানীয়দের মধ্যে ছিলেন পাল-পুরোহিত জয়ন্ত এ. গমেজ, নাগরী ক্রেডিটের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রদীপ আগস্টিন গমেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তুষ রড্রিক্সসহ আরও অনেকে। তুমিলিয়া ত্রাণ বিতরণে স্থানীয়দের মধ্যে ছিলেন পাল-পুরোহিত ফাদার আলবিন গমেজ, তুমিলিয়া ক্রেডিটের চেয়ারম্যান বাবু ফ্রান্সিস রোজারিও, ভাইস-চেয়ারম্যান প্রদীপ ভিনসেন্ট রিবেরু, উপদেষ্টা বাদল বেঞ্জামিন রোজারিও, ম্যানেজার অসিম গমেজসহ আরো অনেকে। দড়িপাড়া ত্রাণ বিতরণে স্থানীয়দের মধ্যে ছিলেন পাল-পুরোহিত অমল খ্রীষ্টফার ডি’ক্রুশ, ইউপি মহিলা মেম্বার নয়ন গমেজ, প্যারিস কাউন্সিলের সেক্রেটারি পরিমল গমেজ মাষ্টারসহ আরো অনেকে।
ত্রাণ বিতরণে সুধীজনেরা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে এই ত্রাণ সহায়তায় আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে পাশে থেকেছেন। তারা করোনা অতিমারির এই ক্রান্তিক্ষণে দুস্থদের মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশনের কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। এই সহায়তার দ্বার উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরো কল্যাণমূলক কাজ এই ফাউন্ডেশন অব্যাহত রাখবে এবং অন্যরাও এই কাজের অংশিদার হতে এগিয়ে আসবে।’
এ দিন স্থানীয় গির্জার পাল-পুরোহিতে হাতে কবরখোরক ও সেবকদের জন্য মাস্ক, স্যানিটারাইজার, পিপিইসহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সামগ্রী তুলে দেন ফাউন্ডেশনের কর্তৃপক্ষ।
করোনা অতিমারি মোকাবেলা ও সাধারণ জনগণের পাশে থেকে এই দুর্যোগকালীন সময়ে সহযোগিতার হাত প্রসারণ করতে ফাদার চার্লস জে. ইয়ং ফাউন্ডেশন করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্যপণ্য ও স্বাস্থ্য সামগ্রী প্রদান করছে। ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশনের ত্বত্তাবধানে কয়েকটি ধাপে এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলবে।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ পণ্যের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, আলুসহ খাদ্য দ্রব্য এবং ৫টি করে মানসম্পন্ন মাস্ক ও স্বাস্থ্য সামগ্রী। এ ছাড়াও অংশ হিসেবে ছিল করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধী ডাক্তারী পরামর্শ। তাছাড়া এর অংশ হিসেবে থাকবে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের ফ্রি টেলিমেডিসিন সেবা। এ ছাড়াও বিভিন্ন চার্চের কবরখোরকদের জন্য প্রদান করা হয়েছে পিপি, হ্যান্ড স্যানিটারাইজ, মাস্কসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী।
এই ত্রাণ কার্যক্রমের সবচেয়ে বড়ো অংশিদার হয়েছে দেশসেরা সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিট। ফাউন্ডেশনটির মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রমে প্রায় ৭৫ শতাংশ অর্থ সহায়তা দিয়েছে ঢাকা ক্রেডিট। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্রেডিট, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়েও অর্থ সহায়তার মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।