শিরোনাম :
নির্যাতনের প্রতিবাদে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশ
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
সাম্প্রতিক হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
২৩ অক্টোবর, সকাল ৬টায় শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। আয়োজনে করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
গণঅনশনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী সাংসদ হাসানুল হক ইনু, সাংসদ শিরীন আখতার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা জোনাস গমেজ, মহাসচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়া, যুগ্ম মহাসচিব জেমস সুব্রত হাজরা, খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন বনানী থানার সেক্রেটারি পিটার রতন কোড়াইয়া, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং প্রমুখ।
প্রতিবাদী মানুষের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। যেখানে লেখা ছিল ‘যে হাতে মন্দির ভাঙ্গে সে হাত ভেঙ্গে দাও’, ‘সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই’, ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে’, ‘দৌঁড়ে পালিয়ে যেও না, অন্যায়কারী ও দুষ্কৃতিকারীদের মোকাবেলা কর’, ‘আশ^াস নয়, পদক্ষেপ চাই,’ প্রশাসন নীবর কেন, জবাব চাই’, ‘হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ ইত্যাদি।
গণঅনশন ও গণঅবস্থানে বক্তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধের সময় সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখানে সকলের শান্তিতে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মৌলবাদ অপশক্তি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বার বার আক্রমণ করছে। যা কাম্য নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে কোনোভাবেই থামছে না সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন। ক্রমাগত নির্যাতন সংখ্যালঘুদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের নিধন করা হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ, স্বাধীন ও সভ্য দেশে এটা হতে পারে না।
সংখ্যালঘু নেতারা দেশের সরকারকে যারা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বার বার হামলা ও নির্যাতন করছে, তাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি করেন। তারা বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা না থাকলে আপনাদেরও নিরাপত্তা থাকবে না। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের হামলা আর না হয় সেই দাবি তোলা হয়।
দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, চলুন আমরা সবাই সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতিরোধ করি, তা না হলে সব মানুষকে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির নিকট পরাজয় বরণ করতে হবে। তারা প্রশ্ন তোলেন, কোথাও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পর সেখানে কেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়? এর আগে কেন নিরাপত্তা দেওয়া হয় না।
শেখ হাসিনাকে মা জননী উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনার প্রতি আমাদের কোনো অভিযোগ করি কিন্তু যারা সাম্প্রদায়িক তাদের প্রতিরোধ ও প্রতিহত করুন যেন আমরা শান্তিতে এই দেশে বাস করতে পারি।’
গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিলে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর মনিকা গমেজ, ক্রেডিট কমিটির সদস্য উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, মহিলা ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভানেত্রী সিসিলিয়া রোজারিও, ঐক্য পরিষদের তেজগাঁও থানার সেক্রেটারি গিলবার্ট গমেজ, খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক স্বপন রোজারিও, আন্তর্জাতিক সম্পাদক থিওফিল রোজারিও, গুলশান থানার সেক্রেটারি এলিয়াস পিন্টু কস্তা, ট্রেজারার প্রত্যেশ রাংসা, লক্ষ্মীবাজার শাখার সেক্রেটারি ভিক্টর রে, ব্রাহ্মবাড়িয়া শাখার সেক্রেটারি মলয় নাথ, দোহার থানার সভাপতি ডমিনিক রঞ্জন গমেজ, অঞ্জয় সুক্ক, সুশান্ত কুবি, শিশির দিও, প্রতীক মৃ, রাজ্য মারাক, হিলারিউস হাউই, পংকজ গমেজের নেতৃত্বে তেজগাঁও সম্মিলিত গানের দল, জর্জ গমেজসহ আরও অনেকে।
গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশে উত্থাপিত দাবিসমূহ:
১. শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
২. সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুণর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যুন ২০ লক্ষ টাকা প্রদান বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করত হবে।
৩. নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৬. প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরকেও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।