শিরোনাম :
পাদ্রীশিবপুরের মেলকাম ডি’কস্তার হত্যা: প্রতিবাদে বিসিএ এবং পিসিডব্লিউএ-এর প্রতিবাদ কর্মসূচী
বিশেষ প্রতিবেদন ।। পাদ্রীশিবপুর
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রীশিবপুরে মেলকাম ডি’কস্তার হত্যা ও পরিবারের উপর নাশকতা এবং ডাকাতির প্রতিবাদে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন (বিসিএ) ও পাদ্রীশিবপুর খ্রীষ্টান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, ঢাকা’র (পিসিডব্লিউএস) একটি প্রতিনিধি দল পাদ্রীশিবপুর পরিদর্শনসহ প্রতিবাদ ও এই নারকীয় ঘটনার বিচার দাবি করেন।
৬ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে এবং সভা সমাবেশসহ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে সাক্ষাৎ করে উক্ত ঘটনার জন্য দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূল শাস্তির দাবি করেন প্রতিনিধি দল ও স্থানীয় অধিবাসীরা।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও পাদ্রীশিবপুর খ্রীষ্টান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট যোসেফ ডি’রোজারিও’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল স্থানীয়দের সাথে একাত্মতা জানিয়ে ঘৃণ্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান ও ঘটনার দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচার দাবি করেন তারা।
প্রতিনিধি দলের মধ্যে আরো ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের যুগ্মমহাসচিব যোসেফ ডি’সরকার, নির্বাহী সদস্য ভিক্টর রে, ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য পংকজ বার্নার্ড ডি’রোজারিও, উপদেষ্টা রবার্ট শিমন গমেজসহ মাইকেল বাড়ৈ, জর্জ গোমেজ প্রমুখ।
সকাল সাড়ে ৯টায় পাদ্রীশিবপুর চার্চে ফাদার ভিনসেন্ট রোজারিও সিএসসি’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ও স্থানীয় পিস এন্ড জাস্টিস কমিটি একটি সভায় মিলিত হন। এ সময় ফাদার ভিনসেন্ট চার্চের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে তিনি ঘটনার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিাবের পাশে রয়েছেন ও থাকবেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন ও ওয়েলফেয়ারে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় পিস এন্ড জাস্টিস কমিটি গঠনের মাধ্যমে তিনি উক্ত ঘটনার তদন্ত ও বিচার এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও স্থানীয়দের পাশে রয়েছেন এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সকলপ্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সভা শেষে প্রতিনিধি দল মেলকাম ডি’কস্তার বাড়ি পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও’কে ঘটনার বিবরণ দেন এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘আমরা উক্ত ঘটনায় সত্যি মর্মাহত। আপনাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং পাশে থাকারও নিশ্চয়তা দিচ্ছি। সেই সাথে এই নারকীয় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য যা করার, যেখানে যাওয়া দরকার সবই করবো। আপনারা যা সহ্য করেছেন, তা যেন অন্যদের বেলায় পুনরায় না ঘটে তার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে নিশ্চয়তা চাইবো।’
পরিদর্শন শেষে পাদ্রীশিবপুরের স্থানীয়দের সাথে এক মতবিনিময় ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ফাদার ভিনসেন্ট রোজারিও’র সভাপতিত্বে এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও ওয়েলফেয়ারের প্রেসিডেন্ট যোসেফ ডি’রোজারিও উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার, তদন্ত ও সঠিক বিচার কামনা করেন। কোনোভাবেই যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দোষীরা পাড় না পায় এবং তদন্ত ও বিচার কার্য বিলম্বিত না হয় সেই বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জানান, এর আগেও শান্তি গমেজের সাথে জঘণ্যতম ঘটনা ঘটেছিল। তখন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দোষীরা জামিনে বের হয়ে যায় এবং সেই ঘটনার কোনো বিচারই হয়নি যা এখনো ঝুলে রয়েছে। মেলকাম ডি’কস্তার হত্যা ও পরিবারের সাথে যা হয়েছে, এই ঘটনায় যারা জড়িত, তারা যেন কোনোভাবেই পার না পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনকে ব্যবস্থাগ্রহণ সাপেক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশ শেষে প্রতিনিধি দল বাকেরগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন মিলনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় ওসি মিলন ডিসিনিউজকে জানান, ‘আমরা ঘটনার পর থেকেই দোষীদের খুঁজে বের করতে তৎপর রয়েছি। ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে গ্রেপ্তারও করেছি। প্রাথমিক তদন্তে কিছুটা সত্যতাও আমরা খুঁজে পেয়েছি। আশা করি, খুব শিঘ্রই আমরা দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।’
এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও ওয়েলফেয়ারের প্রেসিডেন্ট যোসেফ ডি’রোজারিও’কে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের তদন্ত কাজে সহযোগিতা করবেন, যেন দ্রুত দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওয়তায় নিয়ে আসতে পারি। এখানে খ্রীষ্টান ভাইবোনেরা শান্তিপ্রিয়। আজ খ্রিষ্টানদের, কাল হিন্দুদের, পরে মুসলমানদের সাথে দুষ্কৃতিকারীরা ঘৃণ্যতম ঘটনা ঘটাবে। যারা দুষ্কৃতিকারী, তাদের কোনো চরিত্র থাকে না, তারা যেকোনো সময় যেকারো উপরই চড়াও হতে পারে। তাই এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃতি না হয়, সেই জন্য পুলিশ প্রশাসনের সাথে আপনার সহযোগিতা করবেন।’
এরপর প্রতিনিধি দল বরিশাল কাথিড্রালের ভিকার জেনারেল লাজারুস গমেজ ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিমের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং মেলকাম ডি’কস্তা হত্যা ও পরিবারের উপর নারকীয় ঘটনার সঠিক বিচারের জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এই বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন।
স্থানীয় যুব প্রতিনিধি মার্ক দীপ গোমেজ ডিসিনিউজকে জানান, ‘৭ ফেব্রুয়ারি মেলকাম ডি’কস্তার ছেলে ডিউক ডি’কস্তা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন তাদের কার্যতৎপরতাও শুরু করেছেন।’
উল্লেখ্য, ২৯ জানুয়ারি বরিশালের বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুরের দিঘির পাড় এলাকার মেলকাম ডি’কস্তার পরিবারের সকল সদস্যকে রাতের আঁধারে চেতনানাশক খাইয়ে সর্বস্ব লুট করে নেয়া হয়েছে। ওই সময় বাসার সবচেয়ে সিনিয়র নাগরিক মেলকাম ডি কস্তা (৯১)কে মারধর করা হয়। শনিবার রাতের এই ঘটনায় সোমবার সকালে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগেও গত বছর একই এলাকায় শান্তি গোমেজ নামের এক ব্যক্তির বাসায় একই ঘটনা ঘটে এবং তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। সেই ঘটনায় মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যা রাতে এক যুবক পানি খেতে এসে ডি কস্তার বাসায় খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়। ওই খাবার খেয়ে রাতে একে একে সকলে অসুস্থ হয়ে পড়লেও মেলকাম ডি’কস্তার কিছুটা চেতনা ছিল। এসময় খোলা জানালা দিয়ে অন্তত ৩ যুবক বাসায় প্রবেশ করলে ডি কস্তা তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাকে মারধর করা হয়।
পরে তিনিও অচেতন হয়ে পড়লে যুবকেরা ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যায়।
মার্ক দীপ গোমেজ ডিসিনিউজকে জানান, মেলকাম ডি কস্তা, তার ছেলে ডিউক, নাতি এবং পুত্রবধূসহ ৫ জনকে রোববার সকালে প্রতিবেশীরা অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে এবং স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মেলকাম ডি কস্তা, নাতি এবং পুত্রবধূকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল। মেলকাম ডি’কস্তা হত্যা ও পরিবারের সাথে পরিকল্পিত ঘটনার প্রতিবাদের ইতিমধ্যে পাদ্রীশিবপুরবাসী প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী সম্পন্ন করেছেন। দোষীদের বিচার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচী চলমান থাকবে।