শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের উদ্যোগে ও নারী বিষয়ক উপ-কমিটির সহযোগিতায় পালন করা হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’ প্রতিপাদ্য নিয়ে হাজারো নারীর অংশগ্রহণে পালন করা হলো আর্ন্তজাতিক নারী দিবস-২০২২।
৮ মার্চ, বিকেল সাড়ে ৫টায় তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা ক্রেডিটের আয়োজনে ও নারী বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়। অনুষ্ঠিত নারী দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এমপি। তিনি ভার্চুয়ালিভাবে এই অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়াও গেষ্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ক্রেডিটের নারী বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক পাপড়ি প্যাট্রিসিয়া আরেং।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাহী সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া, প্রধান নির্বাহী অফিসার লিটন টমাস রোজারিও, দি মেট্রোপলিটন হাউজিং সোসাইটির ভাইস-চেয়ারম্যান অপূর্ব যাকোব রোজারিওসহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, ‘নারীদের সবাইকে শুভেচ্ছা। সেই সাথে সকল পুরুষকে যারা নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, কারণ এখনো নারীদের পেছনে ভাবা হয়। আমাদের নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, এবং সচেতন হতে হবে। আমাদের নারীরা নানাভাবে সমাজে ও রাষ্ট্রে নিগৃহীত হয়, মৌলবাদের মাধ্যমেও নির্যাতিত হয়, আমাদের নারীদের এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। আমরা শান্তি রক্ষীবাহিনীসহ বিভিন্ন সেক্টরে অংশগ্রহণ দেখেছি। আমাদের নারীদের পথ চলার পথ সুগম করে সকল বাধা দূর করার প্রত্যয়ে নারী দিবসের সফল কামনা করি। আমি আপনাদের সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
গেস্ট অব অনার অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, ‘আমরা এখনো সাম্প্রদায়িক প্রথার কথা শুনতে পাই, যারা এখনো আমাদের অন্ধ করে, আঁধারে রেখে অপশক্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যারা সাম্প্রদায়িক বাধা হয়ে দেশকে মুক্তি দিতে চাইছিল না, তারা এখনো নারীদের অবমননা করে। এখনো নারী বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে চায়। এখনো আমাদের অনেক দূর যাওয়ার বাকি আছে। এখনো আমরা নারীদের সম্পূর্ন মর্যাদা দিতে পারিনি। নারী অধিকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা পুরুষরা এখনো নারীদের শোষন করার চেষ্টা করি। আমরা দৃষ্টি খুলি, দেখি কি করে ধর্মীয় বেড়াজালে বন্ধী করে এখনো আমাদের শোষণ করছে। আমাদের বৈষ্যমের শেকল ভাঙতে হবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি পাপড়ি প্যাট্রিসিয়া আরেং বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট নিভৃতে নারীদের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে। ঢাকা ক্রেডিটের নারীরা এসে প্রথাগত দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে পারছে। বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দেশ ও সমাজ গঠনে অবদান রাখছে। নারীদের বৈষম্য বিলোপের জন্য নারীদেরও আরো সচেতন হতে হবে।’
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী এবং স্পিকারও নারী। নারীরা খেলাধুলা, ব্যবসায়সহ বিভিন্ন সেক্টরে এগিয়ে এসেছে। এত কিছুর পরও নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তাই শুধু আজই নয়, প্রয়োজন সামাজিক ও ধর্মীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘শুধু ঢাকা ক্রেডিট নয়, সব ক্রেডিটে নারীদের নেতৃত্বে যাওয়া উচিত। নারী সমবায়ীদের নিকট সমবায় সমিতি নিরাপদ। নারী অধিকারের একটি বিশেষ দিক হলো দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আমাদের নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সকলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।’
ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘নারী নেতৃত্ব আজ বিশ্বকে পাল্টে দিচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ দেওয়া হয় না। তাই নারীদের জায়গা করে নিতে হবে। নারী যখন নিজের মেধা ব্যবহার করতে এগিয়ে যেতে পারবে, তখন নারী ক্ষমতায়ন হবে। রাষ্ট্রে যতো উন্নয়ন হয়েছে সবকিছু পেছনেই নারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। তাই উন্নয়নের ধারায় নারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ও এসোসিয়েশনের মহাসচিব ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের যত সফলতা, তার জন্য নারীদের অবদান অনেক বেশি। ঢাকা ক্রেডিটের ঋণ খেলাপিদের মধ্য নারীরা ৩০ ভাগ, পুরুষরা ৭০ ভাগ। ঢাকা ক্রেডিট নারীবান্ধব সমবায় প্রতিষ্ঠান। নারীদের এখনো অনেকে পেছনের সারির মানুষ ভাবে। আমাদের মানসিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নারী বৈষম্য বিলোপ করে নারীদের সাথে নিয়ে চলতে হবে।’
ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন টমাস রোজারিও কর্মীদের পক্ষে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের ৪৫ ভাগ নারী সদস্য। তারা পুরুষের তুলনায় বেশি সঞ্চয় করেন, তবে তুলনামূলক কম ঋণ গ্রহণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নারীদের সমতার অংশিদার করতে চাই না। আমরা সবাই যেন আমাদের মানসিকতাটা পরিবর্তন করি, নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করি।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন ঢাকা ক্রেডিট কালচারাল একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ। এরপর পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন ঢাকা ক্রেডিটের ক্রেডিট কমিটির সদস্য উমা ম্যাগডেলিন গমেজ এবং প্রার্থনা পরিচালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরা। এরপর প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ অন্যান্য ব্যক্তিগণ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। এ দিন ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদের ৬ জন নারীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা ও অতিথিবৃন্দরা। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে নারী বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যবৃন্দরা গান পরিবেশন করেন।
নারী দিবসের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নারী বিষয়ক উপ-কমিটির কো-কনভেনর মঞ্জু মারিয়া পালমা।
শেষে ধন্যবাদ প্রদান করেন বোর্ড অব ডিরেক্টর পাপিয়া রিবেরূ এবং সমাপনী প্রার্থনা করেন বোর্ড অব ডিরেক্টর মনিকা গমেজ।