শিরোনাম :
অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’র ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
ধর্মীয় এবং উৎসবমুখরভাবে পালন করা হলো বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর (সিবিসিবি) ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী।
২৭ মে, মোহাম্মদপুরের সিবিসিবি সেন্টারে সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন পোপীয় দপ্তরের কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি, ভাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, ঢাকার আর্চবিশপ ও সিবিসিবি’র প্রেসিডেন্ট বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই, সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং এমপি, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, বিশপ সম্মিলনির সকল বিশপগণ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, খ্রিষ্টান হাউজিং সোসাইটির সেক্রেটারি ইমানুয়েল বাপ্পী মন্ডলসহ ব্রতধারী এবং খ্রিষ্টভক্তগণ।
সকাল ৯টায় সিবিসিবি সেন্টারে শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, ভাটিকানের পতাকা, সিবিসিবি’র পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে জয়ন্তী উৎসবের সূচনা হয়। এরপর প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও কেক কেটে জুবিলি অনুষ্ঠানের আনন্দ সহভাগিতা করা হয়। বিকেলে ফার্মগেট তেজগাঁও চার্চে বিভিন্ন সংগঠনের স্টল পরিদর্শনের আয়োজন করা, সিবিসিবি’র উপর একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শন, জুবিলির স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন এবং খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয়।
আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ জুবিলি উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিগত ৫০ বছর সিবিসিবি’র জন্য ছিল অনেক ত্যাগ, দয়া এবং ভালবাসার সময়। অনের্ক অর্জন রয়েছে বাংলাদেশ বিশপ সম্মিলনির। সিবিসিবি’র জন্য যারা বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন, বিশপ কনফারেন্স গড়ে তুলেছেন তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও সম্মান জানাই। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার কল্যাণ কামনা করি। আশা করি ভবিষ্যতে সকলের সহযোগিতায় সিবিসিবি আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
সাংসদ জুয়েল আরেং বলেন, ‘সিবিসিবি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থসামাজিকভাবে আমাদের সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কাথলিক বিশপ-ফাদার-সিস্টার-ব্রাদারদের নির্দেশনা আমাদের পথ প্রদর্শনে সাহায্য করেছে। আমি তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’ সিবিসিবি নেতৃত্ব গঠনেও সাহায্য করছে বলে উল্লেখ করেন জুয়েল আরেং, এমপি।
সাংসদ ঝর্ণা সরকার বলেন, ‘সিবিসিবি ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সহাবস্থানেরও শিক্ষা দেয়। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও সিবিসিবি বিশেষ ভ‚মিকা পালন করছে। সিবিসিবি’র কমিশনগুলো সব সময় আর্তমানতার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠায় সিবিসিবি কাজ করছে।’
এ দিন মুক্তালোচনায় অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, সিবিসিবি শুরু থেকেই ব্যক্তির মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। সিবিসিবি’র বিভিন্ন কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষা, সংলাপ, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রকৃতির যত্ন ও সমন্বিত উন্নয়ন ঘটে চলেছে। দীর্ঘ পথ চলার এই পঞ্চাশ বছরে সিবিসিবি বিশ্বাসী ও ভালবাসার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর ফলশ্রুতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ‘বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী’ (Catholic Bishops’ Conference of Bangladesh) আত্মপ্রকাশ করে যা সংক্ষেপে সিবিসিবি নামে পরিচিত। কাথলিক ডিরেক্টরিতে বলা হয়েছে যে, সিবিসিবি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সিবিসিবি’র প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২-৪ ফেব্র্রুয়ারি, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে। এই সভাতে বাংলাদেশের বিশপগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, তিনজন বিশপের একটি প্রতিনিধি দল ভাটিকানে গিয়ে পোপ মহোদয়কে অনুরোধ করবেন যেন, ভাটিকান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে অতি সত্ত¡র স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং নতুন দেশটির সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর থেকেই সিবিসিবি’র কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ: ৫০ বছরের এ পথ অতিক্রম করে সিবিসিবি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানন্দে পালন করছে এর সুবর্ণ জয়ন্তী।
দেশে সিবিসিবির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ, সেন্ট যোসেফ কলেজসহ প্রায় তিন শতাধিক স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও কারিতাস বাংলাদেশও বাংলাদেশ বিশপ সম্মিলনি দ্বারা পরিচালিত সংস্থা। সিবিসিবি’র আরো রয়েছে প্রায় ১০০’র মতো হাসপতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিয়ে নিজেদের জীবনমান পরিবর্তন ও উন্নয়ন করছেন।