শিরোনাম :
সিলেটের কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধের দাবীতে নাগরিক সমাবেশ
ডিসিনিউজ।।নিউজডেস্ক
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, কুলাউড়া, সিলেটে আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন -এর আয়োজনে নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
নাগরিক সমাবেশের সহযোগিতায় ছিলো বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটি, কাপেং ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক, পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদ, এএলআরডি, বেলা, ব্লাস্ট, আরডিসি, ও বিপিআই।
সকাল ১১:০০ টায় র্যালীর মাধ্যমে নাগরিক সমাবেশ শুরু হয়। নাগরিক সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন প্রত্যুশ আসাক্রা, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, কুবরাজ আন্ত:পুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন। নাগরিক সমাবেশ সঞ্চালনা করেন হেলেনা তালাং, কাপেং ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি।
নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন ফা: যোসেফ গোমেজ, ওএমআই, সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন পুঞ্জির পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করেন ঝিমাই পুঞ্জির ম্যাগ্রি রানা সুরং। ধারণাপত্র পাঠ করেনফ্লোরা বাবলী তালাং, সাধারণ সম্পাদক, কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন।
মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি বনাঞ্চলে প্রায় ৮০টি খাসি পুঞ্জি রয়েছে যেখানে প্রধানত খাসি ও গারো আদিবাসীরা স্মরনাতীত কাল থেকে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বিশেষ কৃষিপদ্ধতিতে পানচাষ করে নিজেদের জীবন জীবিকা ও অস্তিত্ব রক্ষা করে আসছেন। এর পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর (বাঙ্গালী) সহস্রাধিক সদস্য পান চাষ, সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থেকে স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দুর্গম এসব পাহাড়ী অঞ্চলে এই আদিবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ বিহীন অবস্থায় যুগ যুগ ধরে কঠিন সংগ্রাম করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে আসছেন। এই আদিবাসীরা বংশপরম্পরায় মৌলভীবাজারের এই বিস্তীর্ণ বনভূমিতে বসবাস করে আসলেও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় ৫২বছর পার হয়ে গেলেও প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমিতে তাদের মালিকানা স্বীকৃত হয়নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করেন যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার স্বীকৃত এবং অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র তা বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ। তা সত্ত্বেও বিগত ৫০ বছরেও এতদঅঞ্চলের আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমির মালিকানা স্বীকৃত না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা নানাভাবে বনবিভাগ ও প্রভাবশালীদের দ্বারা উচ্ছেদ, হামলা, মামলা ও হয়রানির স্বীকার হয়ে আসছেন। খাসিদের ভোগদখলীয় প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের সম্পৃক্ত করে একদিকে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে অন্যদিকে আদিবাসীদের সাথে তাদের সংঘাতময় পরিস্থিতি দাঁড় করানো হয়েছে।
নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেন যে ঝিমাই পুঞ্জিতে ৭২ টি খাসি আদিবাসী পরিবার বসবাস করে। ঝিমাই পুঞ্জির ভোগদখলীয় বনভূমি পানজুমে রয়েছে হাজার হাজার প্রাকৃতিক গাছ। প্রাকৃতিক বন-পাহাড়ি জায়গায় এই ৭২টি পরিবারের বসতবাড়ি ছাড়াও পুঞ্জিতে রয়েছে আদিবাসীদের পবিত্রসমাধি ক্ষেত্র বা কবরস্থান, তিনটি ধর্মীয় উপাসনালয়, খেলার মাঠ, যুব-ক্লাব, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খাসিয়া মাতৃভাষা শিক্ষাকেন্দ্র ও একটি বেসরকারী প্রাথমিক স্কুল। শতাধিক বছর ধরে খাসি আদিবাসীরা এই পুঞ্জিতে বসবাস করলেও ২০০৮ সালে প্রথম কেদারপুর টি. কোম্পানী ঝিমাই পুঞ্জির দঘলীয় ভূমির একাংশ নিজেদের দাবি করে এবং প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা শতবর্ষী দুই সহস্রাধিক গাছ কাটার জন্য নানাবিধ পাঁয়তারা শুরু করেন । ২০১১ সালে খাসিয়া আদিবাসীরা ঐ বনভূমিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছে দাবী করে পুঞ্জির মন্ত্রী রানা সুরং সরকার বরাবরে লীজ আবেদন করলেও আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার এবং প্রথাগত জীবনধারা ও অস্তিত্বের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে, অজ্ঞাতসারে সরকার গত ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট কেদারপুর টি কোম্পানী লিমিটেড- এর পক্ষে লায়লা কবিরের অনুকূলে ঝিমাই চা বাগানের জন্য ৬৬১.৫৫ একর ভূমির লীজ নবায়ন করে। এখানে উল্লেখ্য যে, পুঞ্জির সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত মি. ফিল পতাম ১৯৯১ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ১৯৯৬ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি মারা যাবার পর পুঞ্জিবাসীদের মধ্য থেকে আরো দুজন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনসেবায় দায়িত্ব পালন করেছেন। অতীতে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচনে ঝিমাই পুঞ্জির খাসিরা এই পুঞ্জির বাসিন্দা হয়েই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। অথচ ঝিমাই পুঞ্জির ভোগদখলীয় ভূমি কেদারপুর টি কোম্পানী লিমিটেডের বরাবরে লিজ প্রদান করে খাসি আদিবাসীদের শতবছরের অস্তিত্বকে এখানে অস্বীকার করা হয়েছে।