শিরোনাম :
গৌরবের ৫০ বছর : তুমিলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের জুবিলী
সকাল থেকেই আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি! চারিদিকে সাজ সাজ রব। মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে তুমিলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ। নানা রঙে সেজেছে স্কুলের প্রাঙ্গণ। তুমিলিয়া স্কুল সফলতার ৫০টি বছর পার করেছে। সফলতা এবং হাজারো স্মৃতির মিলনমেলায় মুখরিত আজ তুমিলিয়ার এই ঐতিহ্যবাহী স্কুল ক্যাম্পাস।
১০-১১ মার্চ (শুক্র ও শনিবার), তুমিলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা হয়। পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসের সকল প্রাক্তন শিক্ষক, ছাত্র এবং বর্তমান শিক্ষক-ছাত্রদের মিলন মেলায় রূপ নেয় তুমিলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাভূমি।
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার তুমিলিয়া ইউনিয়নের তুমিলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এই জুবিলি উৎসবের আয়োজন করা হয়। হাজারো মানুষের আবেগ-অনুভূতির দোলাচলে ভারী হয়ে ওঠে স্কুলের মাঠ।
বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে দুই দিনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে আনন্দের-ফোয়ারায় মেতে ওঠে স্কুলটি। সকাল সাড়ে ৮টায় বর্ণাঢ্য র্যালি করে বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষক, ছাত্র এবং অতিথিরা স্কুল প্রাঙ্গণে সমবেত হয়। এ সময় বেলুন উড়িয়ে জুবিলি উৎসবের শুভ সূচনা করেন প্রধান অতিথি এবং অন্যান্যরা। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সাথে পতাকা উত্তোলন এবং দেশের প্রতি সম্মান জানানো হয়। আয়োজনে আরো ছিল সকল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, উদ্বোধনী নৃত্য, জুবিলির পঞ্চাশ বছরের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আসন গ্রহণ, শুভেচ্ছা বক্তব্য, স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, স্মৃতিচারণসহ আরো নানা কর্মসূচি।
১০ মার্চ, শুক্রবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার লিটন ফ্রান্সিস রিবেরুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাধু যোসেফ সংঘ প্রদেশের প্রদেশপাল ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্ সিএসসি। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের প্রতিনিধিত্বকারী ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. ফাদার তপন ডি’রোজারিও, তুমিলিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আবু বকর বাক্কু, স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফাদার স্ট্যানিসলাস গমেজ, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক গনেশ চন্দ্র দাসসহ আরো বিশেষ ব্যক্তিত্ব এবং প্রাক্তন শিক্ষক-ছাত্র ও বর্তমান শিক্ষক-ছাত্ররা।সভাপতির বক্তব্যে ব্রাদার লিটন বলেন, ২০১৭ সালে তুমিলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র, অসহায় ছাত্রদের মাঝে শিক্ষার আলো বিস্তারে ১৯৬৭ সালে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র আকারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বর্তমানে গাজীপুরের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তার পেছনে রয়েছে কল্যাণব্রতী ব্রাদারগণ এবং শিক্ষাব্রতী ও নিবেদিত শিক্ষকমন্ডলীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও অপরিমেয় সাধনা। তিনি বলেন, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়ে আজ অসংখ্য ছাত্র দেশের সেবায় নিবেদিত রয়েছে। কেউ কেউ আবার প্রবাসে থেকে সুনাম বয়ে আনছে। তিনি এ সময় বর্তমান এবং প্রাক্তন সকল শিক্ষার্থীদের সুন্দর জীবন কামনা করেন।প্রধান অতিথি ব্রাদার বিজয় বলেন, সাধু যোসেফ সংঘপ্রদেশের ব্রাদারগণ এই বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই সম্পৃক্ত রয়েছে। ব্রাদার এবং সাধারণ জনগণের কর্মপ্রচেষ্টায় এই বিদ্যালয় অগ্রগতির মহাসড়কে ধাবমান রয়েছে। এই বিদালয়ের মাধ্যমে অনেকেই আজ সফল মানুষ হয়েছে। আগামিতের এর অগ্রযাত্রা চলমান থাকবে এবং সকলের প্রত্যাশা পূরণে ব্রাদারগণও বদ্ধপরিকর থাকবেন। এ দিন বিকালে স্থানীয় প্রাক্তন ছাত্রদের পরিবেশনায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১১ মার্চ, শনিবারের আয়োজনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কার্ডিলান প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি। এছাড়াও বিগত দিনের অতিথিদের সাথে আরো যোগ দেন কালীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন পলাশ, হাউজিং সোসাইটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট অনিল লিও কস্তা, যুবলীগ, ছাত্রলীয়সহ নানা সংগঠন এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আরো অনেকে।এ সময় সভাপতি কার্ডিনাল প্যাট্রিক ঈশ্বরের সেবক আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলীর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আজ আমি সেই মহান পুরুষকে স্মরণ করছি। তিনি ১৯৬৭ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’
তিনি বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রদের দেশসহ সমাজে সেবা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সমাজে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেবা হবে প্রশংসার এবং কল্যাণমুখী।এ সময় তিনি জুবিলী উৎসবের আনন্দের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।এ ছাড়াও জুবিলী উৎসবে অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। জুবিলী অনুষ্ঠানে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, প্রাক্তন শিক্ষক, বর্তমান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের কল্যাণে অবদানকারী, কৃতী ছাত্র এবং অতিথিসহ মোট ১১৫ জনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আরপি/আরবি/এসক্রু/ ১১ মার্চ, ২০১৭