শিরোনাম :
দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস্ অব বাংলাদেশ’র ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী’র লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
৫০ বছরের জুবিলির (সুবর্ণ জয়ন্তীর) লোগো উন্মোচন করেছে সর্ববৃহৎ ছাত্র আন্দোলন সংগঠন দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস্ অব বাংলাদেশ।
২৬ জানুয়ারি, সাভার রেডিও কলোনীস্থ ওয়াইএমসিএ ইন্টারন্যাশনাল হাউজে এই লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএস অব বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট জনি হিউবার্ট রোজারিও। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক এলায়েন্স অব ওয়াইএমসিএএস’র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ওয়াইএমসিএএস্’র জুবিলি উৎসব কমিটির আহ্বায়ক বাবু মার্কুজ গমেজ, এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক এলায়েন্স অব ওয়াইএমসিএএস’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, ধরেন্ডা ধর্মপল্লীল পাল-পুরোহিত জয়ন্ত এস. গমেজ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিওসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়াইএমসিএএস’র সেক্রেটারি জেনারেল নিপুন সাংমা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সভাপতি জনি হিউবার্ট রোজারিও বলেন, ‘আজ এই সুবর্ণ জয়ন্তীর লোগো উন্মোচনের সময় আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি যারা দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিলেন। বিগত ৫০ বছর ধরে অনেকেই দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস অব বাংলাদেশ’র পথ চলায় যুক্ত ছিলেন। আজ জুবিলি লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব শুরু করলাম। ওয়াইএমসিএ’র অনেক গর্বের জায়গা রয়েছে। আমরা এখন ভিশন ২০৩০ নিয়ে কাজ করছি। ওয়াইএমসিএ’র কার্যক্রম আরো দৃশ্যমান করতে উদ্যোগ নিয়েছি। সবাইকে এই জুবিলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
জুবিলি উৎসব কমিটির আহ্বায়ক বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘সদ্য স্বাধীন হওয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ওয়াইএমসিএএস’র আগমন ঘটেছিল। কয়েকজন মহৎপ্রাণের সর্বপ্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালের ৩ মার্চ, দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএস অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়। আজ আমাদের জন্য এক মহতীক্ষণ। ২০ বছর পূর্বে নারীদের তেমন কোনো আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে নারীরা এগিয়ে এসে নেতৃত্বও দিচ্ছেন। আমরা যারা ওয়াইএমসিএ’র নেতৃত্ব দিয়েছি বা দিচ্ছি তাদের যুবাদের জন্য স্থান ছেড়ে দিতে হবে। যুবারা হলো সমাজ, দেশ তথা বিশ্বের প্রাণ। এই জুবিলি লোগো অনুষ্ঠানে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই।’
এ দিন প্রার্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে শুভ সূচনা হয়। এরপর অতিথিবৃন্দগণ সুবর্ণ জয়ন্তীর লোগো উন্মোচন করেন এবং সেক্রেটারি জেনারেল লোগোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব হিসেবে অতিথিবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারীগণ ৫০ বছরের প্রতীক হিসেবে ৫০টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।
১৯৭২ সালে বিশ্ব ওয়াইএমসিএ যুক্তরাজ্যের বিল হার্টকে বাংলাদেশে প্রেরণ করে যেন, সদ্য স¦াধীন দেশে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হয় এবং দেশ পুননির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখতে পারেন। বিল হার্টের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়ই যুদ্ধপরবর্তী সময়েই ১৯৭২ থেকে ৭৩ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম, বরিশাল, দিনাজপুর ও বিরিশিরি ৪টি স্থানীয় ওয়াইএমসিএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিল হার্ট-এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ওয়াইএমসিএ’র কার্যক্রম আরো সুনির্দিষ্ট এবং বেগবান করতে স্থানীয় ওয়াইএমসিএ’র নেতৃবৃন্দ প্রয়াত সুশান্ত অধিকারী, আলফ্রেড বি. আর. বাড়ৈ, আরনল্ড সি. গমেজ ও মাইকেল দাস একটি অভ‚তপূর্ব উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সর্বপ্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালের ৩ মার্চ, দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএস অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকেই বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি নতুন যাত্রা শুরু। উল্লেখ্য, মি. বিল হার্ট ছিলেন একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ, তিনি তৎকালীন সময়ে জনপ্রিয় আবহনী ক্লাবের প্রথম ফুটবল কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস্ অব বাংলাদেশ’ সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন এ্যক্ট’র অধীনে নিবন্ধন লাভ করে।
১৯৭৭ সালের আগস্ট মাসে বিশ্ব ওয়াইএমসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল রেভা: ফ্রেডরিক ফ্রাঙ্কলিন বাংলাদেশে ওয়াইএমসিএ’র কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। তিনি স্থানীয় ওয়াইএমসিএসমূহের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম দেখ মুগ্ধ হন। ১৯৭৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরিশ শহরে অনুষ্ঠিত ওয়াইএমসিএ কাউন্সিল সভায় ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস্ অব বাংলাদেশ বিশ্ব ওয়াইএমসিএ’র পূর্ণ সদস্যপদ লাভের আবেদন পত্রটি চুড়ান্তভাবে গ্রহণ ও অনুমোদিত হয়। যা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস্ অব বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হয়ে রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ন্যাশনাল ওয়াইএমসিএএস স্থানীয় ওয়াইএমসিএসমূহকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ওয়াইএমসিএএস-এ ১৬ জন প্রেসিডেন্ট এবং ১১জন জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সততা, নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে সংগঠনটিকে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছেন। বর্তমানে ১৫ জনের কার্যনির্বাহী কমিটি ‘দি ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএএস্ অব বাংলাদেশ’কে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
যুবদের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে ১৮৪৪ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে স্যার জর্জ উইলিয়ামস সমমনা ১২জন যুবকদের নিয়ে ওয়াইএমসিএ নামক এই যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যারা বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত ছিলেন তাদেরকে নিয়ে বাইবেল ক্লাস, পারিবারিক ও সামাজিক প্রার্থনা সভার আয়োজন করে তাদের আত্মিক উন্নয়ন সাধন করার লক্ষে শুরুর দিকে কাজ করেন। পরবর্তী ১০-১২ বছরের মধ্যে যুব আন্দোলনটি পশ্চিম ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ভারতে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ১৮৫৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৯টি ওয়াইএমসিএ-র ৯৯ জন প্রতিনিধি নিয়ে প্রথম ওয়াইএমসিএ বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে যুবাদের নিয়ে গড়ে ওঠা সবচেয়ে বৃহৎ যুব আন্দোলন হিসেবে ওয়াইএমসিএ স্বমহিমায় নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।
ওয়াইএমসিএ বিভিন্ন অর্জন ও আবিষ্কারের জন্যও নন্দিত হয়েছে। ১৮৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস্ অবস্থিত স্প্রিংফিল্ড আন্তর্জাতিক ওয়াইএমসিএ প্রশিক্ষণ স্কুলের শরীর চর্চা শিক্ষক জেমস্ নেইস্মিথ বাস্কেটবল খেলা এবং ১৮৯৫ সালে ওয়াইএমসিএ প্রশিক্ষণ স্কুলের প্রশিক্ষক উইলিয়াম মরগান যুক্তরাষ্ট্রের হলিইয়কে ভলিবল খেলার আবিস্কার ও প্রচলন করেন। এই খেলা দু’টি সারাবিশ্বের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়াও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ও অবদান রাখার জন্য ১৯০১ সালে হেনরী ডুনান্ট, ১৯৪৬ সালে জন আর. মথ ও ২০০৮ সালে মর্টি আন্টিসারি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।