ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ বাংলাদেশ কাথলিক মন্ডলীতে সিনড এবং সিনোডালিটি বিষয়ক সেমিনার

বাংলাদেশ কাথলিক মন্ডলীতে সিনড এবং সিনোডালিটি বিষয়ক সেমিনার

0
115
বর্তমান জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ পৃথিবীতে নেতৃত্ব অনুশীলনে সিনোডালিটি একটি নতুন পথ।

ফাদার সাগর কোড়াইয়া ।। ঢাকা

‘খ্রিষ্টমন্ডলীতে কয়েক বছর ধরে আলোচিত একটি বিষয় হলো ‘সিনড ও সিনোডাল মন্ডলী’। তবে মন্ডলীতে তা নতুন কোন ধারণা নয়। এম্মাউসের পথে যীশু নিজেই শিষ্যদের সাথে একত্রে পথচলার মধ্য দিয়ে সিনডের রূপ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ কাথলিক মন্ডলীতে অনুষ্ঠিত ‘সিনড ও সিনোডালিটি’ বিষয়ক সভা’ উল্লেক করেন বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর সেক্রেটারী বিশপ পল পনেন কুবি সিএসসি।

২৭-২৯ জুন, রাজধানীর ঢাকার মোহাম্মদপুর সিবিসিবি সেন্টারে (বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ কনফারেন্স) বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশের অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

তিনদিন ব্যাপী সেমিনারে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওমমআই, বিশপ জের্ভাস রোজারিও, বিশপ পল পনেন কুবি সিএসসি, বিশপ জেমস রমেন বৈরাগী, ভাটিকানের সিনড বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারী (অধীন সচিব) সিস্টার নাতালি, এফএবিসির সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের নির্বাহী সেক্রেটারী ফাদার জর্জ প্লাথোটাম এসডিবি এবং ৮০ জন ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার এবং খ্রিষ্টভক্ত অংশগ্রহণ করেন।

প্রথমদিন বিকালে ভাটিকানের সিনড সেক্রেটারীয়েটের আন্ডার সেক্রেটারী সিস্টার নাতালি ও এফএবিসি’র সামাজিক যোগাযোগ দপ্তরের নির্বাহী সচিব ফাদার জর্জকে বাংলাদেশ মন্ডলীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং পরে সন্ধ্যায় কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি’র পৌরহিত্যে উদ্বোধনী খ্রিষ্টযাগ হয়।

দ্বিতীয়দিনের অধিবেশনে ‘সিনডের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর সিনোডাল যাত্রা’ মূলভাবের ওপর আলোচনা করেন আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ ওমমআই। তিনি মন্ডলী কী, সিনড বিষয়ে পোপ ফ্রান্সিসের মান্ডলীক চিন্তা, সিনডের কয়েকটি বিশেষ দিক এবং সিনোডাল মন্ডলী গড়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আলোকপাত করেন।

আর্চবিশপ বলেন, ‘মন্ডলী শুধুমাত্র ফাদার, ব্রাদার এবং সিস্টারদের নয়; আমরা সবাই মন্ডলী। বাংলাদেশ কাথলিক মন্ডলীতে সংঘ-সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ, দেশে বিরাজমান অশুভ রাজনৈতিক প্রভাব ও মূল্যবোধের মতই ক্ষমতা, অর্থ, দলাদলি, অসহনশীলতার প্রভাব লক্ষ্যণীয়। পোপ ফ্রান্সিসের চিন্তা প্রসূত সিনোডাল মন্ডলীর আলোকে অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে পারলে এই সমস্যা দূর হবে।’

২৭-২৯ জুন, রাজধানীর ঢাকার মোহাম্মদপুর সিবিসিবি সেন্টারে আটটি ধর্মপ্রদেশের অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সিস্টার নাতালি সিনোডালিটির বিষয়ে বলেন, ‘সিনোডালিটি হচ্ছে মন্ডলীর গতিশীল দর্শন। আর গতিশীল দর্শনের পরিচয় চলমান লক্ষ্য নির্ধারণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এছাড়াও সিনোডালিটি হচ্ছে ত্রিত্ব পরমেশ্বরের দর্শনের মতো; যুগের পরিক্রমায় মানুষের পরিত্রাণের জন্য পিতা, পুত্র ও পবিত্রাত্মা যেমন কাজ করেছেন তেমনি সিনোডাল মন্ডলী যুগের চাহিদা পূরণে কাজ করে। যীশু যেমন শিষ্যদের সাথে এম্মাউসের পথে যাত্রা করেছেন তেমনি সিনড হচ্ছে যীশুর সাথে যাত্রা।’

সেমিনারে আলোচনার প্রতিটি ধাপে সিনড প্রক্রিয়ার আলোকে ব্যক্তিগত অনুধ্যানে পবিত্র আত্মার কণ্ঠস্বর শুনে দলীয় আলোচনার মধ্যদিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিপিবদ্ধ এবং দলীয় উপস্থাপন করা হয়।

সিনোডালিটি সংক্রান্ত এশিয়া মহাদেশীয় সমাবেশের চূড়ান্ত দলিলের ওপর আলোচনা করেন ফাদার জর্জ। তিনি এশিয়া মহাদেশের বাস্তবতার আলোকে এশিয়ায় সিনোডালিটি বিষয়ক চিন্তা, মন্ডলীতে নারীর সম্পৃক্ততায় সমস্যা, যুবদের নিয়ে ভাবনা, দরিদ্রদের বিষয়ে ভাবনা, যাজকতন্ত্রবাদের (Clericalism) উত্তেজনা, অভিবাসী, উদ্বাস্তু এবং বাস্তুচ্যুতজনগণ, অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং আতিথেয়তা ও এশিয়ার কৃষ্টি-সংস্কৃতির আলোকে ‘জুতা খোলা’: এশিয়ান সিনোডাল যাত্রা বিষয়ে সহভাগিতা করেন।

দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে ‘সিনোডাল নেতৃত্বে যুব, নারী ও খ্রিষ্টভক্তদের দায়িত্ব ‘মূলভাবের ওপর সিস্টার নাতালি আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘সিনোডালিটি হচ্ছে অভিজ্ঞতা ও অনুধাবনের বিষয়। সিনোডাল মন্ডলীতে আমরা সবাই একই দীক্ষাপ্রাপ্ত মিশনারী হিসাবে সমমর্যাদার অধিকারী। বর্তমান জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ পৃথিবীতে নেতৃত্ব অনুশীলনে সিনোডালিটি একটি নতুন পথ।’

সেমিনারের শেষ দিনের ধন্যবাদ মূলক অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে সিনোডালিটি অনুশীলনের বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব পিউস কস্তা বলেন, ‘অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের সাথে আমার পথচলা। তাই অন্যদের সাথে আমার সিনোডালিটি রক্ষা করতে হয়। আমি অন্যদের বলি, আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার সেবক। তেমনি আমিও আপনাদের সেবক হিসাবে কাজ করি। এই সেমিনার থেকে আমি যা অভিজ্ঞতা করেছি তা আমার কর্মজীবনে প্রতিফলন ঘটাবো বলে আশ্বাস দিচ্ছি।’

যীশুর কন্যা সম্প্রদায়ের সিস্টার লোরি বলেন, ‘পবিত্র আত্মা আমাদের পরিচালনা ও শক্তিদান করেন। তাই বাংলাদেশ মন্ডলীর আলোকে সিনোডালিটি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে পবিত্রাত্মার সাহচর্য দরকার।’

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, ‘সিনড এবং সিনোডালিটির ওপর এই সেমিনারের আয়োজন করাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপ্লুত। সেমিনার পরিচালনা দানকারী সিস্টার নাতালে ও ফাদার জর্জ আমাদের নিকট পোপ ফ্রান্সিসের স্বপ্নগুলো তুলে ধরেছেন। খ্রিষ্টভক্তজনগণের সমালোচনা না করে বরং তাদেরকে নিয়ে একসাথে পথচলা ও পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের প্রদত্ত মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।’