ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় প্রতি মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমকে দাঁড়াতে হয় পাঠকের কাঠগড়ায়

প্রতি মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমকে দাঁড়াতে হয় পাঠকের কাঠগড়ায়

0
910

উজ্জ্বল গমেজ

একবিংশ শতব্দী। নতুন বিশ্ব, নতুন চ্যালেঞ্জ। তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ও উৎকর্ষের সুবাদে একুশ শতকে এসে দ্রুতই বদলে যাচ্ছে মানব সভ্যতার দৃশ্যপট। বিগত শতকে সংবাদপত্রের কার্যক্রম ছিল কাগজ, কলম, নোটবুক আর ম্যানুয়েল ক্যামেরা নির্ভর। একুশ শতকে এসে তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে কাগজ, কলম, প্যাড, নোটবুক আর সনাতনী ক্যামেরার স্থান বদলে দিয়েছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, ডিএসএলআর  ডিজিটাল ক্যামেরা, এমনকি উন্নত প্রযুক্তির স্মার্টফোন ও মাল্টিমিডিয়ানির্ভর যন্ত্রকৌশল। আর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের কাগজ-ছাপাখানাহীন অনলাইন নিউপোর্টালের তো কোনো জুড়ি নেই।

আজকের দিনে মানুষের চিন্তা-দৃষ্টিভঙ্গি, মনন-রুচি, বিশ্বাস-মূল্যবোধ সৃষ্টিতে এককভাবে যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি তা হলো সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যম মানব জীবনের দর্পণ স্বরূপ। সেখানে প্রতিষ্ঠিত মানব জীবনেরই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর স্বপ্ন। চলমান জীবনের ঢেউ, চমক, স্পন্দন আর অনিয়ম নিয়েই সংবাদমাধ্যমের পথ চলা। আর তাই তো পাঠক/দর্শক সব সময় চায় ভিন্ন স্বাদের নতুন কিছু। কোনো সংবাদ পাঠককে উল্লসিত, উজ্জীবিত বা আন্দোলিত করবে তার হদিস না রেখে সাফল্যজনকভাবে কোনো সংবাদমাধ্যম চালানো কঠিন। পাঠকের খুঁত খুঁতে বিচারশীল মনকে বেঁধে রাখতে হয় নিত্য তার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী খবর পরিবেশন করে।

প্রত্যেক পাঠকের কাছে আলাদা আলাদাভাবে চিত্তাকর্ষক হলেই ঘটনা তার কাছে পায় খবরের মর্যাদা। পাঠক তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার মাপকাঠিতে বিচার করে  যে কোনো সংবাদের তাৎপর্য। তার উপলব্ধির সঙ্গে মিলে গেলেই স্পস্ট হয়ে ওঠে খবরের অর্থ। পাঠকের মনের মতো খবর পরিবেশন করতে না পারলে সংবাদমাধ্যম তার জনপ্রিয়তা হারাবে। এই কারণে সংবাদমাধ্যমকে প্রতি মুহূর্তে বিশ্লেষণ করেতে হয় পাঠকের মানসিকতা। সংবাদমাধ্যমকে প্রতি মুহূর্তেই দাঁড়াতে হয় পাঠকের কাঠগড়ায়। জেরায় উত্তীর্ণ হলেই সংবাদমাধ্যমের সাফল্য।

newspaper

আজকাল দেশের দৈনিক পত্র-পত্রিকার সংখ্যা যেমন বেড়ে চলছে, তেমনি বাড়ছে প্রচার সংখ্যাও। একাধিক সংস্করণ, পৃষ্ঠা সজ্জার নান্দনিকতা, উপস্থাপনায় নতুনত্ব, লেখার কৌশল আর বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এসেছে বিষ্ময়কর বদল। দৈনিকগুলো যেভাবে পাল্লা দিয়ে বিষয় বৈচিত্র্যে সাজুগুজু হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক ম্যাগাজিনগুলো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।

অনলাইন মিডিয়াকে বলা হয় নিউ মিডিয়া টেকনোলজি। এরই একটা অংশ হলো অনলাইন নিউজপোর্টাল। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের কাগজ-ছাপাখানাহীন অনলাইন সংবাদমাধ্যম। অন্যভাবে বলা যায় এটি একটি আধুনিক সংবাদ পরিবেশন মাধ্যম। এই মাধ্যমের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৪ সালে ‘নিউজ রিপোর্ট’ নামে প্রথম অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশিত হয়। এরপর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র তাদের অনলাইন সংস্করণ চালু করে। তবে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত ‘সাউথপোর্ট রিপোর্টার’ আধুনিক অনলাইন নিউজপোর্টাল হিসেবে পরিচিতি পায়। সে হিসেবে খুব কম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশে অনলাইন নিউজপোর্টালের যাত্রা শুরু হয়েছে।

২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডিনিউজ২৪.কম। এর প্রধান সম্পাদক ও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন সাংবাদিক আলমগীর হোসেন। তবে আর্থিক সংকটের কারণে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিডিনিউজের মালিকানা কিনে নেন বিবিসি’র সাবেক সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালেদী। এর কিছু সময় পরেই যাত্রা শুরু করে আরেক অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘দ্য এডিটর ডট নেট’।

২০০৭ সালে আলমগীর হোসেন আবারও শুরু করেন নতুন একটি অনলাইন নিউজপোর্টাল ও বার্তা সংস্থা একাত্তর নিউজ সার্ভিস (ইএনএস)। তবে যাত্রা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই এটিও বন্ধ হয়ে যায়। বিডিনিউজের পরে অনলাইন সাংবাদিকতায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘শীর্ষ নিউজ ডট কম’। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট যাত্রা শুরু করা শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুল হক ২০১১ সালের শেষ দিকে গ্রেফতার হওয়ার পর পোর্টালটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১ জুন নতুনভাবে আপডেট শুরু করে শীর্ষ নিউজ।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আলমগীর হোসেন আবারও শুরু করেন নতুন অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম’। এর কয়েক মাস পরেই সাংবাদিক সরদার ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে ‘বার্তা টুয়েন্টিফোরডটনেট’। গণমাধ্যম বিষয়ক সংবাদ প্রকাশের জন্য এই পোর্টালটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে ২০১২ সালের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায় ‘বার্তা টুয়েন্টিফোরডটনেট’। এরপর তারই নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ‘নতুন বার্তাডটকম’। ২০১২ সালে বাণী ইয়াসমিন হাসি শুরু করেন ‘বিবার্তা২৪ডটকম’। বর্তমানে এটি বিবার্তা২৪ডটনেট হিসেবে সমসাময়িক অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে দেশে বেশ কিছু অনলাইন নিউজপোর্টাল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলামেইল২৪ ডটকম, প্রিয় ডটকম, দ্য রিপোর্ট ডটকম, পরিবর্তন ডটকম, রাইজিংবিডি ডটকম।

এই নিউজ পোর্টালগুলোও অল্প সময়েই সংবাদের ‘বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের দেশে অনলাইন সংবাদমাধ্যম শৈশব ছেড়ে কেবল কৈশোরে পা দিচ্ছে; যৌবনে পা রাখতে আরও সময় লাগবে। তখনই মূলত সংবাদপত্র সত্যিকার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যদিও এ নিয়ে এখন বিস্তর বিতর্ক চলছে। বিতর্ক হচ্ছে- সংবাদপত্র কি মানুষের সংবাদ-আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবে, নাকি নিউজ পোর্টালগুলো সংবাদ জোগানের ‘বিকল্প’ থেকে ‘মূলধারা’ হয়ে দাঁড়াবে?

তবে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের অগ্রযাত্রায় সংবাদপত্রের ভিত্তি যে নড়ে উঠেছে তা সহজেই বলা যায়। বিশ্বের নামী-দামী পত্রিকাগুলো তাদের প্রচারসংখ্যা ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন তাদের পাঠকসংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিপরীতে নিউজ পোর্টালের পাঠকসংখ্যা বেড়েই চলেছে। যে কারণে শুধু মুদ্রণ ভার্সনে ভরসা রাখতে পারছেন না সংবাদপত্রের নীতি নির্ধারকরা। ফলে তারা কাগজের পাশাপাশি ‘ই-পত্রিকা’ হিসেবে অনলাইনেও প্রকাশ করছেন সংবাদপত্র। ই-পেপার মুদ্রণমাধ্যমে দেখতে যেমন, ওয়েবেও ঠিক একই রকমভাবে পাওয়া যায়। একই সাথে প্রতিটি সংবাদপত্রের রয়েছে অনলাইন ভার্সন।পরের দিনে প্রকাশিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো ঘটনার সাথে সাথেই অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ করা হয়। তবে ওই খবরের বিস্তারিত থাকে মুদ্রণমাধ্যমে। একই সঙ্গে প্রায় প্রতিটি পত্রিকাই একই নামে অনলাইন নিউজপোর্টাল হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করছে। যেমন নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেনডেন্ট- তিনটি পত্রিকারই একই নামে অনলাইন ভার্সন রয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নামী-দামী পত্রিকাগুলো অনলাইন পোর্টালে চলে গেছে। শুধু পত্রিকা কেন, অনলাইনের সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকেও। তারাও এখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন পোর্টালে তাদের প্রকাশিত খবরগুলো প্রচার করছে।

সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে পড়ছে সব জায়গায়। দেশজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। বিশ্বায়নের যুগে সারা বিশ্বের ব্যস্ত পাঠকের কাছে এর জনপ্রিয়তা অনেক। যখন ঘটনা, তখনই সংবাদ।এ সংবাদমাধ্যমে যেকোনো সংবাদ মুহুর্তের মধ্যেই  ছড়িয়ে দেওয়া যায় সারা বিশ্বে। আগে কোনো ঘটনা ঘটলে তার জন্য অপেক্ষা করতে হতো পরের দিন সকাল পর্যন্ত। কখন সংবাদপত্র আসবে, কখনইবা খবরটা পড়বো। এখন প্রযুক্তির সুবাদে সেই অপক্ষোর অবসান হয়েছে। পত্রিকা কেনার জন্য এখন আর হকারের দোকানে যেত হয় না। স্মার্টফোনটা ওপেন করে ইন্টারনেটের সার্চ দিলেই পৃথিবীর সব সংবাদমাধ্যম পাওয়া যায়।

বিভিন্ন জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, অনলাইন পাঠকসংখ্যা পত্রিকার চেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এতেই প্রমাণিত হয়, পাঠক এখন অনলাইন নিউজের দিকে ঝুঁকছে। তাই বলা যায়, মুদ্রণযন্ত্রের পর সংবাদমাধ্যম অর্থাৎ গণমাধ্যমের দ্বিতীয় বিপ্লব এনেছে ইন্টারনেট। কারণ এখন সংবাদের জন্য পাঠকরা অপেক্ষা করেন না, পাঠকদের জন্য সংবাদ অপেক্ষা করে। আর এ সম্ভব হয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কল্যাণেই। ইন্টারনেটের এই যুগে হয়ত একদিন ঘুম থেকে জেগে দেখা যাবে নাস্তার টেবিলে আর নেই আজকের কাগজ। আমরা যেমন ছেড়ে এসেছি গ্রামোফোন, টেপরেকর্ডার, ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগ, ঠিক তেমনি করেই হয়ত আগামী দিনে ভুলে যেতে হবে খবরের কাগজের যুগ।

বিশ্বব্যাপী অনলাইনের সংবাদ, বিজ্ঞাপন, আন্দোলন, প্রচারণা, ই- কমার্স জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও অনলাইনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে তুমুলভাবে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে আনলাইনের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। ব্যবসা- বাণিজ্যেও অনলাইনের প্রভাব বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। ফলে নিজেদের টিকিয়ে রাখতেই অনলাইন নির্ভর হচ্ছে মানুষ। অনলাইন সবুজবান্ধব প্রযুক্তি হিসেবেও সমাদৃত হচ্ছে। আর প্রযুক্তির যুগে এর সম্ভাবনা অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী। আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে এটার ব্যবহার করা হবে। এজন্যই আগামীতে এর পাঠক বাড়বে, গুরুত্ব বাড়বে, প্রভাব বাড়বে।

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সম্প্রসারণে যেমন নিজেদের ওয়েবসাইটে নানা সেবা দিচ্ছেন তেমনি অনলাইন নিউজপোর্টালসহ বিভিন্ন ওয়েব সাইটেও নিজেদের বিজ্ঞাপণ দিচ্ছে। কারণ এখন ব্যবসার প্রতিযোগিতা বিশ্ববাজারের সঙ্গে। অনলাইনের মাধ্যমে তাই এগিয়ে থাকতে তৎপর হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট দুনিয়া। বিশ্বের শীর্ষ পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমগুলো অনলাইনে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চেষ্টা করছে। বিশ্বব্যাপী ছাপানো পণ্যের দাম অপ্রত্যাশিত হারে বেড়ে যাওয়ায় খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে ছাপানো সংবাদমাধ্যমের। তাই অনলাইন বিকল্প সমাধান। তাই দেশে অনলাইনের পাঠকশ্রেণীও বিশাল।

তবে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর কয়েকটির মাঝে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত আর অশুভ প্রতিযোগিতা। অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের সত্যটা যাচাই ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ করে শীর্ষস্থানীয় অনেক নিউজ পোর্টাল। যেহেতু পরবর্তীতে সংবাদ পরিবর্তন বা সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে সেহেতু সবার আগে সংবাদ প্রকাশ করে পরে আবার তা পরিবর্তনও করছে অনেকে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজবকে ভিত্তি করে অনেক নিউজ পোর্টাল নানা রকম সংবাদ প্রকাশ করছে। যা সাংবাদিকতার নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুধু তাই নয়, নিউজ পোর্টালের পাঠক বৃদ্ধির জন্য অনেক পোর্টাল অশ্লীল ছবি ও ভিডিও যুক্ত করে নানারকম বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছে। তবে এই ধরনের পোর্টালের প্রতি পাঠকের তাৎক্ষণিক আকর্ষণ থাকলেও স্থায়ী গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে।

বর্তমানে দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালের পাঠক সংখ্যার ৭০ ভাগই তরুণ-তরুণী। এই তরুণ-তরুণীদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে নিউজ পোর্টালগুলো। এর মধ্যে রয়েছে নেতিবাচক প্রভাবও। সেই অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য অশ্লীলতামুক্ত নিউজ পোর্টালগুলোর দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। একই সঙ্গে ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ছাড়া অন্য পেইজগুলো থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ হিসেবে প্রকাশ না করার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিতে হবে নিউজ পোর্টাল সংশ্লিষ্টদের।

গত বছর আগস্ট থেকে সদস্যদের জন্য ঢাকাক্রেডিটনিউজ ডটকম নামে অনলাইন নিউজপোর্টাল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। খ্রিস্টান সমাজের মধ্যে গণমাধ্যমের আধুনিক সূত্রপাত করার লক্ষ্যেই এটা শুরু করা হয়েছিলো।এর মূল উদ্যোক্তা হলেন রবীন ভাবুক। নিউজপোর্টালটির শুরুর গল্পটা একটু অন্যরকম। জুনের দিকে সাপ্তাহিক প্র্রতিবেশির সাবেক তিন সাংবাদিক রবিন ভাবুক, স্তেফান উত্তম ও উজ্জ্বল এ. গমেজ একদিন আড্ডা দেয়ার সময় বাংলাদেশ মণ্ডলীর খবর ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একটা অনলাইন নিউজপোর্টাল শুরু করার কথা বলেন রবিন ভাবুক। কথা অনুসারে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। নাম দেয়া হয় ‘চার্চনিউজবিডিডটকম’। কয়েক দফায় মিটিং করে প্রজেক্ট, প্ল্যান, নক্সা, নীতিমালা, স্টাইল সীট সবই প্রস্তুত করা হয়। শুধু ফান্ডিংয়ের অভাবে ওই উদ্যোগটা শেষে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ওই একই আইডিয়াটা নিয়ে ভাবুক ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুস গমেজকে সময়ের দাবিতে সদস্যদের জন্য মাসিক প্রকাশনা ‘সমবার্তা’র অনলাইন ভার্সনের গুরুত্বটা বিস্তারিতভাবে বোঝাতে সক্ষম হলে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় এই ঢাকাক্রেডিটনিউজ ডটকম। উন্নত মনমানসিকতা এবং আধুনিক দিকদর্শন দাতা বাবু মার্কুজ সাদরে রবীন ভাবুকের চিন্তাটাকে গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

কিছুটা কর্মীদক্ষতা এবং রবীনের সময় সংক্ষেপের কারণে উক্ত পোর্টালটি আধুনিক রুপ নিতে পারেনি। শুরু থেকে ঢাকা ক্রেডিট সংবাদ, অন্যান্য সমিতি ও সংগঠনের সংবাদ,  দেশের সংবাদ, বিদেশের খবর, কেইস স্ট্যাডি/ফিচার, প্রবন্ধ, কলাম/সম্পাদকীয়, স্বাস্থ্য কথা, শিক্ষা, পথে প্রান্তরে/ভ্রমণ, সোনামণিদের পাতা, খেলাধুলার সংবাদ, সাহিত্যাঙ্গন, নোটিশ বোর্ড, সমবায়ী লেখা, আধ্যাত্মিক লেখা, কৃতিত্ব/সাফল্য, টিপস, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি/ঘরভাড়া, পাত্র-পাত্রী সন্ধান বিষয়ে নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে আসছে, যা সময়োপযোগি এবং জনপ্রিয় ছিলো না। কিন্তু সার্বিক মূল্যায়নে নিউজপোর্টালটির অবস্থা করুণ। ঢাকা ক্রেডিটের মতো একটা বড় জাতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য নিউজপোর্টালটি যেমন হওয়ার কথা ছিল, তার চার ভাগের এক ভাগ দাবি পূরণ করে মাত্র। তার মূল কারণ হলো পেশাধারীত্বের অভাব। নিউজপোর্টালটার মান খুবই নিম্ন। পেইজ সাজ-সজ্জা, মেকাপ-গেটাপ, খবরের মান, সংবাদ লেখার ধরণ, উপস্থাপনা শৈলীতে রয়েছে পেশাধারীত্বের অভাব।

যে কোনো ভাল প্রতিষ্ঠান চালাতে দক্ষ লোকের বিকল্প নাই। প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো চালাতে দরকার কয়েজন ভাল শিল্পী যারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ। এখানে থাকেন প্রধান সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, চীফ রিপোর্টার, রিপোর্টার, বিজ্ঞাপন ম্যানেজার, আইটি ম্যানেজার ও অ্যাডমিন। এই মানুষগুলোর ২৪ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্তের সম্মিলিত আন্তরিক চেষ্টা, পরিশ্রম, মেধার সমন্বয়ে হয়ে ওঠে একটা মিডিয়া হাউজ। পেশাধারী কর্মী ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান তার কাজের মানে পেশাধারিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারবে না।সময়ের দাবীর জন্য আধুনিক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ নতুন করে চিন্তা করেন এবং নতুন করে এর দায়িত্ব বন্টনের পদক্ষেপ নেন। রবীন ভাবুক তখন নিজস্ব চাকরীর পাশাপাশি অল্পকিছু সময় দিতে পারতে উক্ত পোর্টালে। প্রেসিডেন্ট রাফায়েল পালমাকে এডিটর হিসেবে দায়িত্ব দেন ও সংবাদ মাধ্যমটিকে পুরোপুরি রুপ দিতে রবীন ভাবুককে আহ্বান জানান এবং বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেন। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা মাঠ পর্যায়ে সার্ভে শুরু করেন এবং রবীন ভাবুক সাংবাদিক ঘনিষ্ঠজনদের সাথে আলাপ করেন। স্তেফান উত্তম, উজ্জ্বলসহ কয়েকজনের সাথে শেয়ার করার পর নতুনভাবে কাজ শুরু করেন। তবে এরমধ্যে প্রথম দিকের আলাপ আলোচনা কিছু কিছু মানুষ শুনে ঢাকাক্রেডিটনিউজ শুরু করার পর দু একটি পোর্টাল শুরু করেন। তারা নাম সর্বোস্ব সংবাদ নিয়ে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু ঢাকাক্রেডিটনিউজ সবকিছুর বাইরে এসে নতুনত্ব নিয়ে আবার হাজির হয়েছে নতুন করে।

ঢাকাক্রেডিটনিউজ ডটকমই নতুন আঙ্গিকে, নতুন কলবরে ডিসিনিউজডটকম নামে আত্মপ্রকাশ করছে। বলা যায় একেবারে ছোট একটি বট বৃক্ষ। এটি একদিন বড় হবে, ডালপালা ও পাতা গজাবে। ফুলেফলে সুশোভিত হয়ে একটি পরিণত বৃক্ষে রূপ লাভ করবে। তখন এই বট বৃক্ষের ছায়াতলে হাজার হাজার ক্লান্ত পথিক এসে নিবে বিশ্রাম, পাবে আশ্রয়। সেই আশায় এই ছোট বৃক্ষটিকে বড় কারার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করছেন ডিসিনিউজডটকমের একটা দক্ষ মিডিয়া টিম। এই মহান কাজটি এই টিমের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রয়োজন সকলের আন্তরিক সগযোগিতা,  প্রচেষ্টা ও হৃদয়ের ভালোবাসা। সকলের সাহায্যের হাত থাকলে  এই স্বপ্ন  এক দিন সফল হবেই। আমাদের যে সব খ্রিস্টান সাংবাদিক ভাই-বোনেরা এখন বাংলাদেশের জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশের জন্য, জাতির জন্য বিবেকের কাজ করছেন, বড় বড় মিডিয়া হাউজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তারাও তখন এখানে নিজের প্রতিষ্ঠানে একই শ্রম দিয়ে, একই দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাবে।

গণমাধ্যম আধুনিক মানুষের জীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গ।  আজকের দিনের উন্নয়ন, জবাবদিহিতা, সুশাসন, জনমত সৃষ্টি কিংবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা ও চাপ সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের রয়েছে  সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা।  আমাদের খ্রিস্ট মণ্ডলীর জন্য একটা জাতীয় মিডিয়া খুবই প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের খ্রিস্টান ভাইবোনদের সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে, অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে এবং খ্রিস্টান সমাজের মিডিয়াশিল্প বিকাশে নিউজপোর্টালটি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক ও সাংবাদিক, বিবার্তা২৪ ডটনেট