শিরোনাম :
দড়িপাড়ায় খ্রিষ্টানদের উপর হামলার প্রতিবাদে মতবিনিময় সভা
পুলিশের এই নির্মম কর্মকান্ড অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন দেশে কখনোই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও। শুক্রবার দড়িপাড়ায় পুলিশের নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন ।
২৮ মার্চ, কালিগঞ্জের দড়িপাড়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর পুলিশি হামলার (২৪ মার্চ, শুক্রবার) প্রতিবাদে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের দড়িপাড়া শাখা এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। বিকাল সাড়ে ৪টায় দড়িপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দড়িপাড়া প্যারিস কাউন্সিলের সভাপতি স্বপন রোজারিওর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ঢাকা হাউজিং সোসাইটির ডিরেক্টর অপূর্ব যাকোব রোজারিও, এসোসিয়েশনের দড়িপাড়া শাখার সভাপতি মিলন কস্তা, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান শর্মিলী দাস মিলি, ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর পিটার রতন কোড়াইয়া, ডিরেক্টর আনন্দ ফিলিপ পালমাসহ ভাওয়াল ও গাজীপুরের খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সকল শাখা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ভাওয়াল-গাজীপুরের সকল কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংবাদিক, আইনজীবী এবং ভাওয়ালের যুব সংগঠনের সদস্যরা।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি রোজারিও দড়িপাড়ায় পুলিশি তান্ডবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমরা বাংলাদেশে অস্তিত্বের সংকটে রয়েছি। ২৪ মার্চ, শুক্রবার দড়িপাড়ায় পুলিশবাহিনী যে নির্যাতন করেছে, তা ঘৃণ্যতম একটি ঘটনা। ঘটনায় জড়িত ৪ জন পুলিশ সদস্যকে প্রশাসন প্রত্যাহার করেছে, এর মানে তারাই দোষী। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানের নামে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। পুলিশি নির্যাতনের পরেও স্থানীয় থানার পক্ষ থেকে দড়িপাড়ার ২৯ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, এছাড়াও আরো ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। যা কখনোই কাম্য নয়। প্রধান অতিথি রোজারিও এ সকল মামলা ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, রাতের অন্ধকারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় নারী ও শিশুদের ওপর হামলা কখনোই মানা যায় না। সরকারি উচ্চমহলের সাথে আলাপ করে এর প্রতিকার করতে হবে। শুধু তাই নয়, পুলিশি নির্যাতনে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ছাড়াও ঘটনার সাথে জড়িত ওসি এবং এএসপিকে অবিলম্বে কালীগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি পুলিশের দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী জঙ্গি দমনে নিজেদের প্রাণ দিচ্ছে, আর তাদেরই একটি আদর্শচ্যূত অংশ পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’
এ সময় অন্যান্য বক্তারা বলেন, দড়িপাড়ায় নিরীহ খ্রিষ্টানদের ওপর পুলিশের এই বর্বরোচিত হামলা একটি জঘণ্যতম ঘটনা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি চাই। ৭১ সালের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের ওপর এটাই প্রথম বড় ধরনের ঘৃণ্যতম হামলা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেই স্বাধীনতা বিরোধীরা ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে বলে এ সময় বক্তারা মন্তব্য করেন। তারা বলেন, ‘যে সকল পুলিশ চাঁদাবাজি করতে এসেছিলো তাদের থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সুতরাং তারাই আসল অপরাধী। আর যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, সেই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে যে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে নিরীহ মানুষের ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বক্তারা বিভিন্ন সময়ে পুলিশের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এবং তাদের হয়রানীমূলক চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান। তারা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের জন্য জনগণ সোচ্চার হচ্ছে। দেশের জাতীয় মিডিয়া এবং স্থানীয় মিডিয়াও থেমে নেই, তারা এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের বসে থাকলে চলবে না। সকলকে একযোগে এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২৪ মার্চ, শুক্রবার দড়িপাড়ায় পুলিশবাহিনীর কিছু সদস্য সিভিল পোশাকে স্থানীয়দের বাড়িতে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে চাঁদাবাজির চেষ্টা চালায়। এ সময় স্থানীয় জনগণ বাধা দিলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পুলিশ সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে নারী, পুরুষ এবং শিশুদের ওপর লাঠিচার্জ এবং গুলিবর্ষণ করে। এতে অসংখ্য স্থানীয় নিরীহ লোক আহত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী এবং নির্যাতনের শিকার পুষ্প কস্তা জানান, ‘রাতে হঠাৎ করে পাশের বাড়িতে প্রবেশ করে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে চাঁদাবাজি শুরু করে। দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করলে পরিবারের সদস্যরা ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করে। দড়িপাড়া গ্রামবাসী এতে সাড়া দিয়ে তাদের আটক করে স্থানীয় থানায় জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিবে এমন সময় একজন পুলিশ বাইরে এসে ওই অঞ্চলের একাধিক থানায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করে। এতে মুহুর্তের মধ্যেই অনেক পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত হয় এবং নির্বিচারে সাধারণ জনগণের ওপর লাঠিচার্জ এবং বুলেট ছুঁড়ে। এতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয় যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
দড়িপাড়া গ্রামের নির্যাতনের শিকার একজন গৃহিনী রাণী পিউরীফিকেশন জানান, ‘বিগত এক বছরে স্থানীয় যুবক ও অন্যান্যদের কাছ থেকে পুলিশ চাঁদাবাজি করে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ে পুলিশ সিভিল পোশাকে এসে মাদক সেবনের নামে প্রথমে যুবকদের আটক করে চাঁদা আদায় করে। রাণীর প্রতিবন্ধী দেবরের কাছ থেকেও গত মঙ্গলবার ৬২ হাজার টাকা পুলিশ হাতিয়ে নিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
২৮ মার্চ, মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের বিভিন্ন শাখা সংগঠন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, এলাকার যুব সংগঠন, ভাওয়াল-গাজীপুর এলাকার বিভিন্ন ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি সংঘটিত ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করবে বলে জানা যায়।
আরবি/ আরপি/ ২৮ মার্চ, ২০১৭