ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ বাংলাদেশের দুই গারো আদিবাসীর পোপ কর্তৃক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ক্রশ অব অনার’ প্রাপ্তি

বাংলাদেশের দুই গারো আদিবাসীর পোপ কর্তৃক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ক্রশ অব অনার’ প্রাপ্তি

0
3275
সুভাষ জেংছাম এবং মারিয়া চিরান। (বা থেকে) ছবি : ইউনিয়ন অব এশিয়ান কাথলিক নিউজ।

পৃথিবীটা টিকে আছে সুন্দর মনের মানুষের ভাল কাজের কল্যাণে। পৃথিবীকে সুন্দর ও সৃজনশীল করে গড়ার জন্য অনেক চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবি, সমাজসেবক নিরবে-নিভৃতে কাজ করে যান। অনেক সময় মানুষের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায় তাঁদের কীর্তি।

এমনি এক ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছে ময়মনসিংহ শহরবাসী। সম্প্রতি ময়মনসিংহে গারো সমাজের দুই গর্বিত আদিবাসী ব্যক্তিত্ব কাথলিক ধর্মের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস প্রদত্ত বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

২১ এপ্রিল, ২০১৭ (শুক্রবার) ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের কাথিড্রাল চার্চে সকাল ১০ টায় আনন্দপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পোপের প্রতিনিধি ভাতিকানস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি “চজঙ ঊঈঈখঊঝওঅ ঊঞদ চঙঘঞঊঋওঈঊ” (ক্রশ অব অনার) সম্মাননা প্রদান করেন গারো জাতির গর্ব বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবি সুভাষ জেংছাম ও বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ মারিয়া চিরানকে।

সকাল থেকেই এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে ময়মনসিংহ শহরের খ্রিষ্টানদের মধ্যে আনন্দপূর্ণ উত্তেজনা বিরাজ করে। তারা দলে দলে ময়মনসিংহ জেলা শহরের কৃষ্টপুরে কাথিড্রাল চার্চে জমায়েত হতে থাকে। অনুষ্ঠানকে তাৎপর্যপূর্ণ করার জন্যে আর্চবিশপ কোচেরি বিশেষ খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন।

খ্রিষ্টযাগের মাঝামাঝি সময়ে আর্চবিশপ কোচেরি সুভাষ জেংছাম ও মারিয়া চিরানকে “চজঙ ঊঈঈখঊঝওঅ ঊঞদ চঙঘঞঊঋওঈঊ” (ক্রশ অব অনার) সম্মাননা পদক তুলে দেন।
এ সময় গণ্যমান্য ব্যক্তি, গারো আদিবাসী নেতৃবৃন্দ, ফাদার-সিষ্টার এবং খ্রিষ্টভক্তগণ সুভাষ জেংছাম ও মারিয়া চিরানকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

দেশের কল্যাণ, মন্ডলিতে অবদান, বিশেষ করে গারো সমাজের জন্য সমাজ সেবামূলক কাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য এই দুজনকে পোপ ফ্রান্সিস সম্মাননা প্রদান করেন।

সুভাষ জেংছাম একাধারে একজন লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবি। তিনি গারোসহ বিভিন্ন আদিবাসি জাতিগোষ্ঠিদের নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন ও বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলোর মধ্যে “বাংলাদেশের গারো আদিবাসী”, “গারোদের সমাজ ও সংস্কৃতি” “পান্থজনের পাঁচালী” প্রভৃতি অন্যতম। তিনি দেশের জন্য, মন্ডলির জন্য বিশেষ করে গারো সমাজের জন্য বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। সামাজিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি উন্নয়ন এবং সাহিত্য বিকাশে সুভাষ জেংছামের অবদান অনস্বীকার্য।

বিশিষ্ট এই ব্যক্তিত্ব ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের দরগাছালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গারোদের মধ্যে প্রথম ১৯৯০ সালে সরকারি জেলা রেজিস্টার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

সুভাষ জেংছাম সম্মাননা লাভ করে অত্যন্ত আনন্দিত বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি আসলেই জানতাম না যে আমাকে এই সম্মাননা দেওয়া হবে। আমি সত্যিই এই সম্মানটা পাওয়ার যোগ্য কিনা জানি না! তবে এই সম্মানটা পেয়ে আমি অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত।

এই সম্মান শুধু আমার একার অর্জন নয়, সমস্ত আদিবাসীর অর্জন।” বলেন সম্মনায় ভূষিত জেংছাম।

অপর দিকে, মারিয়া চিরান গারো সামাজের একজন বিশিষ্ট মহিলা শিক্ষাবিদ। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন, জলছত্র মহিলা সমিতি, মারিয়া সেনা সংঘ, মনিকা সংঘ, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি জলছত্র করপোস খ্রীষ্টি উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন (প্রায় ৩০ বছর) প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন এবং সমাজ সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত আছেন।

মারীয়া চিরানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ‘এই সম্মাননা লাভ করে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত ও উত্তেজিত।’ তিনি বলেন, “এই সম্মাননা পেয়ে আমি ভীষণ খুশি, আমার ছেলে-মেয়েরাও অত্যন্ত আনন্দিত। তারা আমাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে এবং আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।”

সম্মাননাপ্রাপ্ত জেংছাম এবং চিরানের এই অর্জনকে কারিতাস ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলোঘর প্রকল্পের ম্যানেজার দুলেন আরেং নিঃসন্দেহে একটি মহতী অর্জন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘এমন মহতী উদ্যোগ আরো আগে থেকে হলে অনেক ভাল হতো। এমন অনেকে আছেন, যারা নিরবে নিভৃতে গারো তথা আদিবাসীদের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারাও এই স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার। এই সম্মাননা শুধুমাত্র কাথলিকদের মধ্য থেকে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যান্য মন্ডলীদের মধ্যেও অনেকে এমন সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য বলে আমি মনে করি।”

ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পল পনেন কুবি সিএসসি বলেন, “সুভাষ জেংছাম ও মারিয়া চিরান সমাজের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে, সাহিত্য ক্ষেত্রে, সমাজ সংস্কারে বিশেষ অবদান রেখেছেন। মারিয়া চিরান একাধারে প্রায় ৩০ বছর শিক্ষকতা করেছেন। তারা ধর্মীয় কাজে অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। কোনোদিন খ্রিষ্টযাগে অংশগ্রহণ করতে ভুলতেন না। তারা সত্যি এমন সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য। আমি মনে করি এই সম্মাননা উপযুক্ত ব্যক্তিদেরই দেওয়া হয়েছে।”

আরবি/আরপি/২৭ এপ্রিল, ২০১৭