ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় বিজ্ঞান শিক্ষায় বাংলাদেশ

বিজ্ঞান শিক্ষায় বাংলাদেশ

0
1872

দেশে গত ২২ বছরে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ৪৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে। আর শিক্ষাবিষয়ক তথ্য ও গবেষণার সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশন ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (ব্যানবেইস) ১৯৯৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২০ বছরের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, সে হিসেবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমেছে ২০ বছরে ৪৭ শতাংশ।

২০১৪ সালে বিজ্ঞান শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়, গত আট বছরে মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমেছে। উচ্চমাধ্যমিকেও কমছে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মোট পরিক্ষার্থীর ৪২ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল বিজ্ঞানের আর বাকিরা মানবিক বিভাগের। তখনো পর্যন্ত ব্যবসায়িক শিক্ষা চালু হয়নি। ১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক স্তরে ব্যবসায় শিক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে ক্রমে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমতে থাকে। বাড়তে থাকে ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থী। ২০১০ সালে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আরও কমে গিয়ে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে এই হার ২২ দশমিক ০১ শতাংশ। ব্যানবেইস পরিসংখ্যান বলছে, উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) স্তরেও কমছে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। ১৯৯০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেয় মোট পরীক্ষার্থীর ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১০ সালে এসে দেখা যায়, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মোট পরীক্ষার্থীর ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। শিক্ষার্থী কমার হার ৩৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক দৈনিকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করছি বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চিন্তিত। এর ফলে দক্ষ শিক্ষকের স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে।’

বাস্তব অভিজ্ঞতা: রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আজাদ শালবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী রোখসানা খাতুন। অষ্টম শ্রেণী পাস করার পর বিজ্ঞান বিভাগে পড়বে বলে বইও সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বাবা-মা তাকে বিজ্ঞানে ভর্তি হতে দেননি। সে নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ভর্তি হয়। রোকসানার বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির মোট ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নয়জন বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। তার মতো অনেক শিক্ষার্থী ইচ্ছা থাকলেও বিজ্ঞানে পড়তে পারেনি। (সূত্র: ১২ এপ্রিল ২০১২ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা)।

২০১১ সালের নভেম্বরে দেশের ১১টি জেলা, উপজেলায় ২৫টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রায় সব বিষয়েই আলাদা প্রাইভেট পড়তে হয। এর বাইরে আছে ব্যবহারিকের খরচ। সব মিলে বিজ্ঞানশিক্ষা তুলনামূলক ব্যয়বহুল। (তথ্য: ১২ এপ্রিল ২০১২ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা)।

01কেন কমছে: জুন ২০১১ সালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞানে বিভাগে অধ্যয়ন করার পর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের প্রধান কারণটি আর্থিক। গবেষণার অন্তর্ভুক্ত জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৬৪ শতাংশ বলেছে, বিজ্ঞানশিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় তারা বিভাগ পরিবর্তন করেছে। সন্তান চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হবে- এমন চিন্তা থেকেই বেশির ভাগ অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করান। কিন্তু মাধ্যমিক স্তুরে দুই বছর যাওয়ার পর অভিভাবকেরা দেখেন, বিজ্ঞানশিক্ষা ব্যয়বহুল, কঠিন, ভালো শিক্ষক নেই। যার ফলে তারা সন্তানদের বিভাগ পরিবর্তনের কথা বলেন।

অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও নায়েমের গবেষণায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমার আরও কিছু কারণ বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান অধ্যয়ন তুলনামূলক কঠিন, বাজারে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতা, পাঠ্যসূচি তুলনামূলক বিস্তৃত, দক্ষ শিক্ষকের স্বল্পতা, গবেষণাগারে সুবিধা কম, নির্দিষ্ট সময়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠ্যসূচি শেষ না হওয়া, শিক্ষকদের অবহেলা, ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম পাওয়ার আশঙ্কা ও ব্যবহারিক পরীক্ষাভীতি। আর এসব কারণে শিক্ষার যত ওপরের স্তরে যাচ্ছে, বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ততই কমছে।

সুপারিশ: বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী বাড়াতে বিজ্ঞানের পাঠ্যসূচি আরও সংক্ষিপ্ত করা, বিষয়ভিত্তিক চাকরির সুযোগ বাড়ানো, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিত করা, সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া, বছরে দুবার বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করাসহ ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে বিজ্ঞানশিক্ষাকে সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দেওয়া, দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, প্রয়োজনীয় গবেষণা-সুবিধা ও উপযুক্ত বিজ্ঞানমনস্ক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা, বিজ্ঞানবিষয়ক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন, বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো, মেধা পাচার ও প্রশিক্ষিত জনশক্তির বিদেশ গমন কমানো এবং জাতীয় উন্নয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

লেখক : দাউদ জীবন দাশ,

আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস খুলনা অঞ্চল।

আরবি/আরপি/৩ মে, ২০১৭