ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা প্রবন্ধ ক্রেডিট ইউনিয়নে সেবা পক্ষ : একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

ক্রেডিট ইউনিয়নে সেবা পক্ষ : একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

0
1320
ছবি : ফাইল ফটো

কোনো ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় প্রতিষ্ঠানে সেবা মাস/ পক্ষ/ সপ্তাহ উদ্যাপন করা অনেকটা নতুন ধারনাই বটে।

বিভিন্ন ব্যাংক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা কোনো সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান তাদের সম্মানিত গ্রাহক/ কাস্টমারদের স›ন্তুষ্টি বিধানের লক্ষে সেবা মাস, পক্ষ বা সপ্তাহ হিসেবে উদ্যাপন করার প্রথা/ প্রচলন রয়েছে আমাদের এ দেশে। পুলিশ/ নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষে এ ধরণের কর্মসূচী উদ্যাপন করে থাকে। তখন এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক সেবার মান বৃদ্ধি করা হয় এবং গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সন্তুষ্টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু এ ধরনের সেবা মাস, পক্ষ বা সপ্তাহ ক্রেডিট ইউনিয়নে বা সমবায় সমিতিতে পালন করা অনেকটাই নতুন ধারনা। আমার জানা মতে, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) ২০০৮ সালের ১৭-৩১ মে ক্রেডিট ইউনিয়ন অঙ্গণে প্রথমবারের মতো এ ধরণের সেবা পক্ষপালন করে এ ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

উল্লিখিত ক্রেডিট ইউনিয়নটি ১৭-৩১ মে, ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সেবা পক্ষ সাফল্যজনকভাবে পালন করতে পেরেছে। এরই ধারাবাহিকতার ঢাকা ক্রেডিট প্রতি বছর সেবা পক্ষ পালন করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানটি ১-১৫ জুন, ২০১৭ সালে দশম বারের মতো সেবা পক্ষ পালন করবে। সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষে তুমিলিয়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: ও ধরেন্ডা খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: সেবা পক্ষ/ মাস/ সপ্তাহ পালন করেছে। এ ধরনের একটি বিষয়কে দেশের ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো ধারন করতে সক্ষম হয়েছে বলে ক্রেডিট ইউনিয়নের একজন সদস্য হিসেবে গর্ববোধ করছি।

সেবা পক্ষে কী কী কাজ করা হয় সে সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্তাকারে ধারনা দেয়ার প্রয়াস পাচ্ছি। প্রথমেই আসা যাক সাজ-সজ্জার বিষয়ে। সেবা পক্ষের সময় সমিতির অফিস সাজানো-গোছানো (পরিপাটি) রাখার প্রথা রয়েছে। একটি পরিপাটি অফিসে প্রবেশ করলেই সদস্য-সদস্যাদের মন আনন্দে উদ্বেলিত হয় এবং তারা প্রথমেই মানসিক প্রশান্তি ও স্বাচ্ছন্দ অনুভব করে। সাজানো-গোছানোর অংশ হিসেবে অফিসের বিভিন্ন স্থানে (যেখানে সদস্য-সদস্যাদের বিচরণ বেশি) সমবায়ের বিভিন্ন মর্মবাণী পোস্টারে লিপিবদ্ধ করে সংযোজন করা যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের রঙ্গিণ বেলুন ও ফেস্টুন দিয়ে অফিসকে সুসজ্জিত করে এ সময়ের (সেবা পক্ষের) তাৎপর্য ফুটিয়ে তোলা যায়।
কাগজ দিয়ে মাটির ব্যাংক তৈরী করেও অফিস সাজানো যায়। অফিসের প্রধান ফটকে বেলুনের তোড়ন দিয়েও সাজানো যেতে পারে। এর জন্যে তেমন কোনো খরচেরও প্রয়োজন পড়ে না।

তারপর আসা যাক সদস্য ও কর্মী আচরণগত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে। সেবা পক্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো; সদস্য-কর্মী আচরণগত দিক। এ বিষয়টিকে প্রথমেই প্রাধান্য দিতে হবে। সদস্য-কর্মী আচরণ সুন্দর ও মানসম্মত হলে নিঃসন্দেহে বলা যায় সেবা পক্ষ স্বার্থক হয়েছে। আর সদস্য-কর্মী আচরনগত দিক সঠিক না হলে সেবা পক্ষে যত কিছুই করা হোক না কেন, সেবা পক্ষ কোনোভাবেই অর্থপূর্ণ হবে না। সেবা পক্ষে কোনো সদস্য-সদস্যা কোনো সেবা নেয়ার জন্য অফিসে আসলে তাকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করাই হবে প্রধান কাজ। তাঁকে ‘নমস্কার’/ শুভ সকাল/ শুভ বিকাল’ সম্ভাষণপূর্বক তাঁর কাজটি হাসিমুখে করে দেওয়া উচিত। কাজ শেষ হলে তাকে ‘ধন্যবাদ’ জানানোর মাধ্যমে বিদায় দিতে হবে। শুধু এই আচরনটুকু সুন্দরভাবে করা হলে সদস্য সন্তুষ্টি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সেবা পক্ষ অর্থপূর্ণ হবে।

দ্রুত সেবা প্রদান সেবা পক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেবা পক্ষের মূল উদ্দেশ্যই হল ‘সদস্য সন্তুষ্টি।’ সদস্য সন্তুষ্টির সাথে দ্রুত কাজ করে দেয়ার একটি সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। তাই দ্রুত সদস্য সেবা প্রদান করা হলে সদস্য সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়। এতে প্রতিষ্ঠানও লাভবান হয়। তাই সেবা পক্ষে দ্রুত সদস্য সেবা প্রদান করার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

সেবা পক্ষ উপলক্ষে ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় সমিতি থেকে প্রচার পত্র বা ডকুমেন্টারি প্রকাশ/ প্রচার করা যায়। এই প্রচারপত্র/ ডকুমেন্টারির মাধ্যমে ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রডাক্ট সম্পর্কে এর সুবিধাভোগী সদস্য-সদস্যাদের অবহিত করা যায়, যা একটি ইউনিয়নের জন্য খুবই জরুরী। তাছাড়া সেবা পক্ষ উপলক্ষে ক্রেডিট ইউনিয়নের তথ্য সম্মলিত সিডি প্রকাশ করা যায়। এর মাধ্যমে যারা সদস্য-সদস্যা এবং সুবিধাভোগী হতে আগ্রহী তারা বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারে।

সেবা পক্ষে কর্মীদের পোষাক পরিচ্ছদের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেবা পক্ষে কর্মীদের মার্জিত পোষাক পরিধান করা অত্যাবশ্যক। মার্জিত পোষাক তার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলে। তা সেবা পক্ষের মর্যাদাকেও বাড়িয়ে দেয় অনেকাংশে। সেবা পক্ষে সদস্য-সদস্যাদের ফুল দিয়ে বরণ করা যায়। প্রথমদিন সদস্যদের মিষ্টি মুখ করানো যায়। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে (যেখানে সদস্য-সদস্যাগণ যাওয়া আসা করেন) ক্যান্ডি রাখা যায়, যা সদস্য-সদস্যাগণ সহজে নিতে পারে। এ সকল আয়োজন সেবা পক্ষকে স্বার্থক করার জন্য করা যেতে পারে।

দেশের প্রতিটি ক্রেডিট ইউনিয়ন অথবা সমবায় সমিতি তাদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সেবা পক্ষ বা সেবা সপ্তাহ বা সেবা মাস পালন করতে পারে। সেবা পক্ষ/ মাস/ সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে ক্রেডিট ইউনিয়নে বা সমবায় সমিতিতে সদস্য সেবার মান বৃদ্ধি করা হলে দেশের ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো দিনের পর দিন সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে এবং তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সেবা পক্ষ পালনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সেবা পক্ষের স্পিরিট সব সময় অন্তরে ধারন করা এবং সদস্য সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপোষ না করা। সেবা পক্ষের সময় সদস্য সেবা বৃদ্ধি করে অন্যান্য সময় তা অব্যাহত না রাখলে সেবা পক্ষ পালনের কোনো অর্থই থাকেনা। কাজেই সদস্য সেবা যেন সব সময় সেবা পক্ষের মতোই হয়। এটাই হল সেবা পক্ষ পালনের মূল কথা।

লেখক : স্বপন রোজারিও, সমবায় কর্মী।

আরবি/আরপি/৯ মে, ২০১৭