শিরোনাম :
ঋণ খেলাপী
ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় সমিতি থেকে ঋণ পাওয়া যেমন একজন সমবায়ীর অধিকার পাশাপাশি ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় সমিতি থেকে গৃহীত ঋণ নিয়মানুযায়ী প্রতি মাসে ফেরৎ প্রদান করাও সমবায়ীদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। অনেক সমবায়ী রয়েছেন যাঁরা ঋণ নিয়ে নিয়মিত পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক সদস্য রয়েছেন, যারা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঋণ আর ফেরৎ প্রদান করেন না।
এভাবে বিভিন্ন ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় সমিতিতে খেলাপীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পরিতাপের বিষয় হ’ল, ১০০/২০০ সদস্য-সদস্যা রয়েছে এমন সমিতিতেও বর্তমানে ঋণ খেলাপীদের পদচারনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিন দিন এ ঋণ খেলাপী সমস্যা আমাদের সামাজিক সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। মোটা দাগে বলতে গেলে, এভাবে ঋণ খেলাপীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সমিতিগুলো আর ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে না। তাই ঋণ খেলাপীর ব্যাপারে আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ঋণ খেলাপী যাতে না বাড়ে সেদিকেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় সমিতিতে ঋণ খেলাপী হয়ে গেলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে খেলাপী ঋণ আদায় করা সম্ভব।
আরো পড়ুন: সফল রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী আলফ্রেডের গল্প
(ক) খেলাপীদের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক : কোন সদস্য-সদস্যা খেলাপী হয়ে গেলে তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ও তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা একদিকে যেমন অফিস কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অন্যদিকে খেলাপী সদস্যের ও নৈতিক দায়িত্ব রয়ে যায় অফিসের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে তার প্রকৃত সমস্যার কথা জানানো। পারস্পারিক যোগাযোগ ও সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে খেলাপী সদস্য ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস করা হলে তা খেলাপী রোধকল্পে বিশেষ কাজে আসে। খেলাপী ঋণ আদায় করতে হলে খেলাপী সদস্য-সদস্যাদের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রেখে ঋণ ফেরতদানে উৎসাহিত করেই আদায় করতে হবে।
(খ) সামাজিক চাপ: সামাজিক চাপ বলতে ঋণ খেলাপীকে সম্মিলিতভাবে ঋণ পরিশোধের জন্য অনুরোধ করাকে বুঝানো হয়েছে। খেলাপী সদস্য-সদস্যা যাতে ঋণ ফেরৎ দিতে উৎসাহি হয় সেজন্য সামাজিক চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক বা মিশন ভিত্তিক কমিটি গঠন করে ঋণ খেলাপীদের প্রতি এ সামাজিক চাপ প্রদান করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন: টিনের ঘর থেকে অট্টালিকা
(গ) পত্রিকায় খেলাপীদের তালিকা মুদ্রণ: ঋণ খেলাপী সদস্যদের নাম, পিতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, ঋণের গ্রহণের পরিমাণ, বকেয়া ঋণের পরিমান এবং সম্ভব হলে ছবিসহ পত্রিকায় প্রকাশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ঋণ খেলাপীর সংখ্যা কমবে। কারণ, পত্রিকায় নাম প্রকাশ করা হলে সবাই খেলাপী সদস্য-সদস্যার নাম জেনে যাবে, তাই মান-সম্মান বাঁচানোর ভয়ে খেলাপী সদস্যগণ ঋণ পরিশোধ করতে আগ্রহী হবে।
(ঘ) জরিমানা মওকুফ: জরিমানা মওকুফ করা খেলাপী সদস্যদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ। কোন কোন ক্রেডিট ইউনিযনে দীর্ঘকালীন ঋণ খেলাপীদের ক্ষেত্রে এককালীন ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সাধারণত জরিমানা মওকুফ সুবিধা প্রদান করে থাকে। ঋণের জরিমানা মওকুফ করা হলে সদস্য-সদস্যাগণ খেলাপী ঋণ পরিশোধে আন্তরিক হয় এবং তার আর্থিক চাপ কিছুটা হলেও নিরসন হয়।
(ঙ) কর্মস্থলে চিঠি: প্রত্যেক মানুষ তার কর্মস্থলে যথাসম্ভব ভাল থাকতে চায়। কর্মস্থলে কোন ধরণের সমস্যা মানুষ মেনে নিতে চায় না। কারণ, সবাই তার চাকুরীকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই বিবেচনা করে। তাই খেলাপী সদস্য-সদস্যাদের কর্মস্থলে ঋণ খেলাপী সংক্রান্ত চিঠি প্রদান করা হলে তা কাজে আসবে।
(চ) সমজাতীয় সমিতির সাথে সুসম্পর্ক: একজন ঋণ খেলাপী অন্য সমিতিরও সদস্য হতে পারে। ফলে বিভিন্ন সমিতির মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক জোরদার করা হলে কোন খেলাপী সদস্য খেলাপী থাকাবস্থায় অন্য সমিতি থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেননা। এর জন্য সর্বাগ্রে দরকার ঋণের বিষয়ে অন্যান্য সমজাতীয় সমিতির সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। এ সম্পর্ক উন্নয়নই পারে ঋণ খেলাপী সংখ্যা কমাতে। এ বিষয়ে কাক্কো (দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস লি:) বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলছে।
(ছ) খেলাপী ঋণ পুন:তফসিল: কোন সদস্য-সদস্যার ঋণ পরিশোধের সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে এবং তিনি সেই ঋণ পরিশোধে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হলে সেই ঋণ পুন:তফসিল করা হয়। পুন:তফসিলকরণের বিষয়টি হ’ল কোন খেলাপী সদস্যের অবশিষ্ট ঋণ, সুদ ও জরিমানার পরিমাণ যোগ করে তাকে একটি নতুন ঋণ ইস্যু করা হয়। ঋণ খেলাপী রোধে এ পদ্ধাতি ভূমিকা রেখে চলেছে।
আরো পড়ুন: ঘরে বসে অনলাইনে আয় করছেন খ্রীষ্টিনা
(জ) আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ: ঋণ খেলাপী রোধকল্পে সর্বশেষ পর্যায় হ’ল আইনগত ব্যবস্থা। সামাজিক চাপ প্রয়োগে কোন খেলাপী সদস্য-সদস্যা যদি তার ঋণ পরিশোধ না করে তবে বাধ্য হয়েই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কোন ধরনের উপায় না থাকলে বা সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর অনুসরন করে ঋণ প্রদান করা হলে খেলাপী ঋণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না।
(ক) ঋণের আবেদনপত্র পরীক্ষাকালে অবশ্যই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের গ্রহণকৃত ঋণের অবস্থা যাচাই-বাছাই করে ঋণ প্রদান করা এবং ১০০% ঋণ সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রদান করা।
(খ) ঋণ গ্রহীতার সাথে আলোচনা করে নিশ্চিত হওয়া, যে তিনি নিজেই এই ঋণ গ্রহণ করবেন কিনা? ঋণ নিয়ে অন্য সদস্যকে প্রদান করা হলে সে ঋণ সাধারণ খেলাপী হয়।
(গ) ঋণ গ্রহণকালে অথবা ঋণের আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় অবশ্যই ঋণ গ্রহিতাকে উপস্থিত হতে হবে।
(ঘ) পূর্ব ঋণের তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে বর্তমান ঋণ অনুমোদন দেয়া। পূর্বে ঋণ খেলাপী হলে তাকে পুনরায় ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
আরো পড়ুন: খেলাপী ঋণের অসুবিধা
(ঙ) ঋণ আবেদনপত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা। সমিতির কর্ম এলাকার বাহিরে অবস্থানরত সদস্যের ঋণের আবেদন পত্র গুরুত্বসহকারে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা। সম্ভব হলে তাদের ঋণ গ্রহণে নিরুসাহিত করা।
(চ) দলগত বা গ্রুপ ঋণ গ্রহণে সদস্য-সদস্যাদের নিরুৎসাহিত করা। কারণ, এ ধরনের ঋণগুলো সাধারণত: দলীয় কাজে ব্যবহৃত হয় এবং ফেরৎ দিতে হয় ব্যক্তি বিশেষের।
(ছ) ৩ মাস বা ৬ মাস টিএ. (টাইম এলটমেন্ট বা কিস্তি কমিয়ে ঋণ দেয়ার সুযোগ) প্রদানের পরও শর্তসাপেক্ষে পুনরায় টি.এ. অনুমোদন দেয়া।
(জ) ঋণের আবেদনপত্রে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রদান না করলে ঋণ অনুমোদন না করা।
লেখক : সমবায় কর্মী
swaponrozario2014@gmail.com
আরবি/আরপি/ ১৩ মে, ২০১৭