শিরোনাম :
যেখানে ওরা আশার আলো দেখে
খাগডহর এলাকার ২৬ বছরের জোছনা খাতুন। শুধু এক চাচা ছাড়া কেউ নেই।
আট বছর বয়সে হঠাৎ করেই পিঠে সমস্যা দেখা দেয় জোছনার। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। পিঠে ফোঁড়া হয় অস্বাভাবিক ভাবে। এরপর স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারে না জোছনা। কুঁজো হয়ে হাটতে হয় তাকে।
শারীরিক মানসিক সব সমস্যাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। বলতে গেলে সমাজের চোখে একজন অপ্রয়োজনীয় মানুষ। প্রতিবেশি ও সমাজের নানান ধরনের কটুক্তি ও অভিশাপ ছিল তার নিত্য সঙ্গী। হঠাৎ করে পিসিসি’র ওমেন্স ক্লাব এর ডাকে সারা দিয়ে এর সদস্য হয় জোছনা। সেখানে থেকে সে এমব্রয়ডারী ট্রেনিং নেয়। এমব্রয়ডারী কাজের পাশাপাশি স্ট্রোক রোগিদের প্রেসার মাপার কাজও করে জোছনা।
তিনি বলেন, “ওমেন্স ক্লাবের সাথে আমি কাজ করছি প্রায় ১২-১৩ বছর ধরে। এখানে কাজ করতে আমার ভালই লাগে। ওমেন্স ক্লাব প্রতিবন্ধী বোনদের জন্য একটি নির্ভরতার স্থান।”
তেমনি আরো একজন প্রতিবন্ধি ২৭ বছরের নোপালি চাম্বুগং। নেত্রকোনার রাণীখং গ্রামের বাসিন্ধা। এক ভাই, দুই বোন এবং কর্মক্ষমহীন মা রয়েছে। প্রতিবন্ধি হয়েও নোপালি একজন দক্ষ কার্পেট শিল্পী। এক সময় নোপালির খুব দুর্বিসহ সময় কাটছিলো। পা থেকে কোমড় পর্যন্ত অচল ছিলো। তবে পিসিসির সাহায্যে সে এখন হুইল চেয়ারের মাধ্যমে চলাচল করে।
নোপালি পিসিসির সহায়তায় কার্পেট সেলাই করে, যা বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে সে আমেরিকার জন্য একটি অর্ডারী কার্পেট বুননের কাজে ব্যস্ত আছেন। যা বুনতে সময় লাগবে ৩ মাস।
এমন আরো অনেক প্রতিবন্ধি রয়েছে এখানে। যেখান থেকে তারা জীবনের আশার আলো খুঁজে পাচ্ছে। খুঁজে পাছে জীবনে বেঁচে থাকার উপায়।
প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের উন্নয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলে উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষে ১৯৯৭ সালে ময়মনসিংহ শহরে প্রতিবন্ধী কমিউনিটি সেন্টার (পিসিসি) স্থাপিত হয়।
সংস্থার প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির উন্নয়নে পিসিসি বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও থেরাপি সেবা, শিক্ষা ও সহায়ক উপকরণ প্রদান, প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের হতদরিদ্র সমাজে সাবলম্বী দল গঠন, দক্ষতার উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড, মহিলা ক্লাব, যুব ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ও মাসকিউলার ডিসট্রোপিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য যুব ক্লাব, দাদু ক্লাব, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি।
পিসিসি প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের প্রতিভা বিকাশের জন্য ক্রিড়া প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও স্কুল ও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রতিবন্ধি/ অপ্রতিবন্ধি সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা খরচের জন্য স্টাইপেন্ড ও খাতা কলমসহ বিভিন্ন পড়ালেখার উপকরণ সহায়তা করে থাকে।
ব্রাদার ফ্রাংক মহোৎকর্মের এই উৎসধারা রচনা করে গেছেন। তাঁর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখানে বর্তমানে দশটি প্রকল্প রয়েছে।
ময়মনসিংহে প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের পিসিসি একটি নির্ভরতার নাম।
আরবি/আরপি/১৮ মে, ২০১৭