ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা প্রবন্ধ খেলাপী ঋণের অসুবিধা

খেলাপী ঋণের অসুবিধা

0
1507

গোটা খ্রীষ্টান সমাজকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করেছে আমাদের সমবায় সমিতি বা ক্রেডিট ইউনিয়ন। সমবায় সমিতি থেকে ঋণ গ্রহণ করে অনেক সদস্য-সদস্যা অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সমবায় সমিতির ঋণ সেবা পেয়ে অনেকে লাভবান ও উপকৃত হয়েছেন; এটা বলাই বাহুল্য। এত সহজ কিস্তিতে এবং স্বল্প সুদে ও ঝামেলাবিহীনভাবে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া যায় বলে মনে হয় না। সমবায় সমিতি সদস্য-সদস্যাদের সকলের। সকলে এর মালিক। সদস্য-সদস্যা হিসেবে সকলে সমান এবং সকলের অধিকারও সমান। সদস্য-সদস্যাগণ সমিতিতে টাকা জমা রাখেন এবং তা থেকে ঋণ গ্রহণ করে উপকৃত হন। এই ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের উপর ভিত্তি করে সদস্য-সদস্যাদের নিম্নলিখিত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(১) নিয়মিত (Regular) : যে সকল সদস্য-সদস্যা ঋণ গ্রহণ করে প্রতি মাসে সমিতি প্রদত্ত শর্তানুসারে নিয়মিত কিস্তি, সুদ ও শেয়ারের টাকাসহ অন্যান্য টাকা (ক্ষেত্র মতে) সময়মত পরিশোধ করেন তারা নিয়মিত সদস্য-সদস্যা।

(২) অনিয়মিত (Irregular) : যে সকল সদস্য-সদস্যা সমিতি থেকে ঋণ গ্রহণ করে প্রদত্ত শর্তানুসারে কিস্তি, সুদ ও শেয়ারের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করেন না (কম-বেশী পরিশোধ করেন) তারা অনিয়মিত সদস্য-সদস্যা।

(৩) খেলাপী (Defaulter) : যে সকল সদস্য-সদস্যা সমিতি থেকে ঋণ গ্রহণ করে মাসিক কিস্তি, সুদ ও শেয়ার প্রদান করা বন্ধ করে দেয় তারা খেলাপী সদস্য-সদস্য।

ঋণ গ্রহণ করে তা নিয়মিত পরিশোধ করলে কোন সমস্যা নেই। অনেক সদস্য-সদস্যা এ ঋণ নিয়ে নিয়মিত পরিশোধ করেন না। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। ঋণ নিয়ে তা নিয়মিত পরিশোধ না করলে অন্য সদস্য-সদস্যাদের প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন না। যদিও সমিতির টাকার উপর সকল সদস্য-সদস্যার অধিকার সমান। ফলে অন্য সদস্য-সদস্যা ঋণ প্রাপ্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং তার অসুবিধার সময় তিনি ঋণ নিয়ে উপকৃত হতে পারছেন না। এরূপ অবস্থা চলতে থাকলে সমবায় সমিতির গতিধারা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই ঋণ নিয়ে নিয়মিত তা পরিশোধ করে পবিত্র দায়িত্ব পালন করা প্রতিটি সদস্য-সদস্যার একান্ত কর্তব্য। খেলাপী বা অনিয়মিত সদস্য-সদস্যাদের কি ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় সে সম্পর্কে এখানে কিছুটা আলোকপাত করা হল।

(১) আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক (Inter-Personal Relation) নষ্ট : আমাদের সামাজিক জীবনে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সমবায় সমিতির মধ্যমে সদস্য-সদস্যাদের মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বৃদ্ধি লাভ করে। সমিতিতে প্রতিটি সদস্য-সদস্যা একটি বড় পরিবারের অর্ন্তভূক্ত থাকে। তাদের মধ্যে থাকে পরস্পর সুসম্পর্ক। একজন সদস্য অন্যজন সদস্যকে সাহায্য করে; বিপদে এগিয়ে আসে। কিন্তু কোন সদস্য-সদস্যা ঋণ নিয়ে অনিয়মিত বা খেলাপী হলে এ সম্পর্ক আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। খেলাপী সদস্যের উপর অন্য সদস্যের বিশ্বাস নষ্ট হয়। তাছাড়া খেলাপী সদস্য-সদস্যা অন্য সদস্য-সদস্যার সুনজরে আসে না। ফলে খেলাপী সদস্য-সদস্যা নিজেকে অসহায় মনে হয় এবং নিজে নিজে কষ্ট অনুভব করে।

(২) আর্থিক ক্ষতি (Financial loss) : কোন সদস্য-সদস্যা ঋণ খেলাপী হলে সমিতির বিধি মোতাবেক তার সমুদয় সুদের অর্ধেক জরিমানা দিতে হয়। এ জরিমানা কিন্তু নেহায়েত কম নয়। যেমন- কোন সদস্য-সদস্যা ১০,০০০.০০ (দশ হাজার) টাকা ঋণ গ্রহণ করে ১ (এক) মাস ঋণের কিস্তি প্রদান না করলে পরবর্তী মাসে ঋণ পরিশোধ করার সময় তাকে এক মাসের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৫০ টাকা এবং শেয়ারের জন্য ৩ টাকাসহ অন্যান্য জরিমানা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) দিতে হবে। অন্যান্য অসুবিধার সাথে এটা একটি বাড়তি অসুবিধা।

(৩) ঋণ উত্তোলনে অসুবিধা (Problem in withdrawing loan): কোন সদস্য-সদস্যা ঋণ গ্রহণ করে খেলাপী হলে তাকে পরবর্তীতে আশানুরূপ (ঋণ নীতিমালা অনুসারে) ঋণ প্রদান করা হয় না। বিধি মোতাবেক যত টাকা ঋণ মঞ্জুর করার কথা, খেলাপী সদস্য-সদস্যাদের সে পরিমাণ ঋণ সাধারণত মঞ্জুর না করে পূর্ব ঋণে খেলাপী থাকার কারণে কিছু কম পরিমাণ ঋণ মঞ্জুর করা হয়। অনেক সময় বেশী সময় ধরে খেলাপীদের অনুকূলে কোন ঋণ মঞ্জুর করা হয় না। কর্তৃপক্ষ অনেক সময় মনে করে খেলাপী সদস্য-সদস্যাকে ঋণ প্রদান করা হলে সে ঋণ পুনরায় খেলাপী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলশ্রুতিতে খেলাপী সদস্য-সদস্যা তার প্রয়োজনে, কোন কোন সময় জরুরী প্রয়োজনে কাঙ্খিত ঋণ গ্রহণ করতে পারেন না।

(৪) সিউরিটির (Surety) ক্ষেত্রে অসুবিধা : যারা ঋণ খেলাপী তারা পরবর্তীতে (খেলাপী ঋণ পরিশোধ কারার পর) ঋণ গ্রহণ করতে চাইলে জামিন বা সিউরিটি পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই অসুবিধা হয়। সচেতন সদস্য-সদস্যাগণ তাদের জামিন দিতে চান না। কারণ সদস্য-সদস্যাদের মনে এ ধরনের ধারণা কাজ করে যে, উক্ত খেলাপী সদস্য-সদস্যা ঋণ গ্রহণ করে পুনরায় খেলাপী হয়ে তাদের অসুবিধায় ফেলতে পারে। ঋণ উত্তোলনের সময় জামিন সংগ্রহ করতে সমর্থ না হলে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়।

(৫) রিবেট (Rebate) থেকে বঞ্চিত : ঋণ উত্তোলন করে কোন সদস্য-সদস্যা সমিতির নিয়ম অনুসারে সে ঋণ পরিশোধ করলে তিনি যত টাকা সুদ বাবদ পরিশোধ করেছেন তার ১২% (কম-বেশী) তাকে রিবেট হিসেবে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ঋণ খেলাপী বা অনিয়মিতভাবে (কিস্তি কম পরিশোধ করলে) ঋণ পরিশোধ করা হলে সদস্য-সদস্যাদের রিবেট প্রদান করা হয় না। ফলে যাদের ঋণ বেশী তারা অনেক টাকার রিবেট থেকে বঞ্চিত হন।

ঋণ খেলাপী হলে নিজেকে যেমন অসুবিধায় পড়তে হয় তেমনি যারা জামিন দিয়েছে তাদেরকেও অনেক কষ্ট ভোগ/স্বীকার করতে হয়। তারা (যারা জামিন দিয়েছেন) তাদের প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন না। তাই আসুন আমরা সকলে ঋণ গ্রহণ করে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করার শপথ গ্রহণ করি এবং সবাই শ্লোগান তুলি, “ঋণ খেলাপী হবো না, সমস্যায় পড়বো না।

আরবি/আরপি/২১ মে, ২০১৭