ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ ১৬ বছরেও বানিয়ারচর হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল হয়নি

১৬ বছরেও বানিয়ারচর হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল হয়নি

0
858

সংখ্যালঘুদের কারা হত্যা করে, কারা নির্যাতন করে এবং কার মদদে করে? কারো মদদ না থাকলে এদেশে সংখ্যালঘুদের উপর এমন বর্বরতা বার বার হতো না বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মেজবাহ কামাল।

আজ (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৪টায় বানিয়ারচর গির্জা ঘরে হত্যাকান্ড এবং সুনিল হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশ এবং স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন; বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, যুগ্ম সম্পাদক নির্মল চ্যার্টাজী, সিপিবির প্রেসিডেন্সিয়াম সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, দেশে বৃহত্তর সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেস্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তাসহ বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ জনগণ।

প্রতিবাদ সমাবেশে অধ্যাপক মেজবাহ আরো বলেন, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ আবারো এখানে এসে দাঁড়াতে হয়েছে। গত বছরও এসেছিলামা একই দাবি নিয়ে। দুর্ভাগ্য আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না। বার বার সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা শান্তি প্রিয়। তারা কখনোই প্রতিহিংসামূলক কাজ করে না। মদদ না থাকলে বার বার একটি শ্রেণি এ ধরণের কাজ করতে সাহস পায় না। ১৬ বছরেও বানিয়ারচর হত্যাকান্ডের কোনো চার্জশীট দেওয়া হয়নি, এটাও এক ধরণের মদদ।

তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, এখনো বিচার না হওয়ার বিষয়ে আমি রাষ্ট্রকে সরাসরি দায়ি করি। সরকার পরিবর্তন হয়, কিন্তু ন্যায় বিচার আসে না। মৌল্যবাদীদের কারণে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন হয়, ভাস্কর্য অপসারন করা হয়, সরকারই তার বাস্তবায়ন করে দেয়। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। কিছুদিন পূর্বে ভাস্কর্য অপসারনের পর অনেক প্রতিবাদ হওয়াতে তা আবার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, এতে মানুষ খুশি হয়নি, বরং সরকার দেউলিয়া হওয়ার প্রমান দিয়েছে।
মানুষ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করেছে, তাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশে যা যা করা দরকার, তা অচিরেই করবে বলে আশা করছি।

02প্রতিবাদ সভায় এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘আমরা প্রতিবার এখানে আসি, কিন্তু কোনো সমাধান হয় না। আজ আমরা শোকাহত এবং মর্মাহত!

বাংলাদেশে বানিয়ারচরসহ অন্যান্য স্থানে নির্মমভাবে সংখ্যালঘু খুন এবং অত্যাচার করা হয়েছে। একদল বিকৃত মানসিকতার লোক এসব জঘন্য কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ভাবে জানান দেওয়ার জন্য এমন ধরণের হত্যাযজ্ঞ করা হয়েছে, যেমনটা করেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুনিলের সাথে।

তিনি এসব হত্যার বিচার সম্পর্কে বলেন, এখনো ১৬ বছর পরও বানিয়ারচর এবং এক বছর পূর্বে সুনিল হত্যার চার্জশীট দাখিল করা হয়নি। আমরা অচিরেই এসব হত্যার বিচার চাই। বানিয়ারচর হত্যায় মুফতি হান্নানের হাত থাকলেও, রাষ্ট্র তাকে অন্য একটি মামলায় ফাঁসি দিয়েছে, কিন্তু বানিয়ারচর হত্যায় দায়ে তাকে কিছুই বলেনি। এসব হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চাই। আমরা অচিরেই সকল হত্যা এবং নির্যাতনের বিচার চাই।

এসোসিয়েশনের সংগ্রামী মহাসচিব হেমন্ত কোড়াইয়া প্রদিবাদ সমাবেশের সঞ্চালনায় সোচ্চারভাবে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে বলেন, দেশে যতদিন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং এসব হত্যাকান্ডের বিচার হবে না, ততদিন দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা আসবে না।

এছাড়াও অন্যান্য বক্তারা বলেন, যারা মৃত্যুবরন করেছেন, তাদের পরিবার এখনো বিচার চায়। সঠিক বিচার পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। জনগণের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এর সঠিক বিচার দিবেন বলে আজ আবার এখানে এসেছি।

তারা বলেন, সন্ত্রাসীদের এমন শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন যাতে করে কোনো সন্ত্রাসী এ ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।

মৌল্যবাদ নিয়ে তারা বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ীরাই এ ধরনের অপকর্ম করে। সংখ্যালঘুদের তারা হত্যা করে, নির্যাতন করে বিতারিত করতে চায়, কিন্তু এ ধরণে দুষ্কৃতিকারীদেরই দেশ থেকে বিতারিত করা প্রয়োজন। ধর্ম ব্যবসায়ী মৌল্যবাদিরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান বানাতে চয়। কিন্তু তা কখনোই এদেশে সম্ভব হবে না। সংখ্যালঘুরা এ দেশকে সোনার বাংলা বানাতে চায়।

তারা সংখ্যালঘু হত্যা এবং নির্যাতন নিয়ে বলেন, এখন মনে হচ্ছে, সরকার বানিয়ারচর হত্যার বিচার চায় না। সরকার দুষ্কৃতিকারীদের অখুশি করতে চায় না। কিন্তু এই গণতান্ত্রিক দেশে আমরা রাষ্ট্রের কাছে এই দাবি করি, রাষ্ট্র যেন বৈষম্য না করে শুধু একটি পরিচয়ই সবাইকে দেয়, তা হলো নাগরিক।

বক্তারা আরো বলেন, কোনো হত্যাকান্ড বিচারহীনভাবে হারিয়ে যেতে পারে না, ইতিহাস এ কথা বলে না। এদেশে এক শ্রেণির জন্য এক ধরনের আইন আর অন্যদের জন্য আরেক ধরনের আইন তা হতে পারে না।

আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচনে বলেছিল তারা ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাবে, তাই জনগণ তাদের ভোট দিয়েছে। কিন্তু সরকার এখনো তা বাস্তবায় করতে পারেনি। আমরা ৭২ এর সংবিধান অনুসারে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চাই।

প্রতিবাদ সমাবেশ এবং স্মরণ সভায় বানিয়ারচরে বোমা হামলায় নিহতদের এবং সুনিলের আত্মার কল্যাণে এক মিনিট নিরবতা এবং প্রার্থনা করা হয়। সমাবেশ শেষে সবাই জাতীয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে মিছিল করে আবার পূর্বের স্থানে এসে প্রতিবাদ এবং স্মরণ সভা শেষ হয়।

আরবি/আরপি/২ জুন, ২০১৭