শিরোনাম :
সকলের প্রিয় অধ্যাপক গাব্রিয়েল মানিক গোমেজকে শেষ বিদায়
হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বিদায় নিলেন সকলের প্রিয় মানিক স্যার (৭৫)। অধ্যাপক গাব্রিয়েল মানিক গোমেজ ঠাঁই নিলেন মাটির ঘরে।
শনিবার (২৪ জুন), বিকাল ৩টায় ঢাকার তেজগাঁও চার্চে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে গাব্রিয়েল মানিক গোমেজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি এতে পৌরহিত্য করেন। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রার্থনা শেষে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ চার্চের সামনে রাখা হয়। একে একে কার্ডিনাল, বিশপ, রাজনীতিক আ স ম আব্দুর রব, বাপ্পা মজুমদার, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: ঢাকা, ওয়াইএমসিএ, দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:, পাদ্রীশিবপুর ক্রেডিটসহ বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রয়াত মানিক গোমেজের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
খ্রিষ্টযাগের পূর্বে স্বর্গীয় অধ্যাপক গাব্রিয়েল মানিক গোমেজের বড় ছেলে জর্জ সিলভেস্টার গোমেজ তার পিতার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করে বলেন, বরিশালের পাদ্রিশিবপুর ধর্মপল্লীর মাটিভাঙ্গা গ্রামে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। পরে সেন্ট আলফ্রেড হাইস্কুলে, নটর ডেম কলেজ ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি ঢাকা ওয়াইএমসিএ, ঢাকা ক্রেডিট, খ্রিষ্টান হাউজিং সোসাইটি, রাজনৈতিক প্লাটফরমসহ বিভিন্ন সংঘ-সমিতিতে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত হয়ে কাজ করেন।
খ্রিষ্টযাগে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বলেন, ‘অধ্যাপক মানিক ছোটকালে আমার সহাপঠি ছিলেন। বিভিন্ন সরকারি প্রশাসন ও বেসরকারি উচ্চপর্যায়ে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি একটি সুন্দর শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার খ্রিষ্টীয় জীবনও ছিল সুন্দর। সমাজচেতানা ছিল তীক্ষ্ন। বৃহত্তর সমাজের সাথেও ভাল সম্পর্ক’ রেখে বসবাস করেছেন।’
খ্রিষ্টযাগের শেষে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ বলেন, ‘অধ্যাপক মানিক গোমেজকে ঈশ্বরের বিশেষ উপহার হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম। দেশকে, সমাজকে অনেককিছু দিয়েছেন। তার সাথে আামদের সম্পর্ক পারিবারিকভাবেও অনেক গভীর।’ প্রেসিডেন্ট আরো জানান, তাঁর হাত ধরেই তার নিজের নেতৃত্বে আসা। তাঁর নির্দেশনা ও নেতৃত্বের গুণাবলী আজকের দিনে অনেকেরই অনুকরণীয়।
দি মেট্রাপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগস্টিন পিউরীফিকেশন তার স্মুতিচারণে বলেন, এদেশে খ্রিষ্টানদের অস্তিত্বের জন্য যারা অকাতরে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক মানিক গোমেজ-এর অবদান রয়েছে, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। যে ২৭ জন খ্রীষ্টান হাউজিং প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের মধ্যেও অধ্যাপক মানিক অন্যতম। ‘আমি তাঁকে কৃতজ্ঞতাসহকারে স্মরণ করি।’ শোক যেন শক্তিতে পরিণত হয়, তার জন্য তিনি সবাইকে আহবান জানান।
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর ফাদার বেঞ্জাবিন কস্তা জানান, অধ্যাপক মানিক ১৯৬২ সালে নটর ডেম কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। ‘একাত্তরের যুদ্ধের পর তাকে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। নটর ডেম কলেজে তিনি ছিলেন প্রথম খ্রিষ্টান শিক্ষক।’ আরো জানান, স্থানীয় মন্ডলীর আন্দোলন তার হাত ধরেই শুরু হয়।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি তথা কাককোর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও স্মৃতিচারণে বলেন, তার মৃত্যুতে খ্রিষ্টান সমাজ স্তম্ভিত ও মর্মাহত। খ্রিষ্টান সমাজের বাইরের সমাজও ছিল তার সমাজ। ৮৭ থেকে ৮৯ এই তিন বছর তিনি বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন অভিভাবক ও শিক্ষক। অহিংসক নেতা।
বরিশালের পাদ্রীশিবপুরে ১৯৪২ সালে গাব্রিয়েল মানিক গোমেজের জন্ম। তিনি ঢাকার নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরবর্তীতে তিনি সত্তর দশকে ঢাকার নটর ডেম কলেজে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় মানিক স্যার।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি তাঁর স্নেহধন্য অসংখ্য ছাত্রও উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতি সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ও প্রেসিডেন্ট, ঢাকা হাউজিং এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ঢাকা ওয়াইএমসিএর প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্থাভাজন গাব্রিয়েল মানিক গমেজ ১৯৭১ সালের, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পবিত্র বাইবেল পাঠ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২৩ জুন সন্ধ্যা ৭টায় মনিপুরিপাড়া নিজ বাসভবনে অধ্যাপক মানিক গোমেজ প্রাণত্যাগ করেন।
আরবি/আরপি/২৫ জুন, ২০১৭