শিরোনাম :
৫০ বছরে পদার্পন: বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন
‘আগের থেকে এখন আমরা অধিকারের দিক থেকে অনেক বেশি সচেতন’ বলে মন্তব্য করেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের ৫০ বছরের জুবিলী উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তীর শুভ উদ্বোধন ও লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে কার্ডিনাল প্যাট্রিক বলেন, বাংলাদেশ জন্মের পর আমরা অনেক ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু এখন আমরা অনেক বেশি সচেতন। বিশেষ করে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন তাদের মধ্যে একটি।
তিনি এসোসিয়েশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। কিন্তু রাজনীতি এবং সমাজের মধ্যে থেকে আমাদের কাজ করে যেতে হয়। আমাদের বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বাংলাদেশের চেতনায় এক হতে হবে।’
জুলাই ১৭ তারিখে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা ক্রেডিটের বি কে গুড কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের ৫০ বছর জুবিলী উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এসোসিয়েশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেক কেটে আনন্দ সহভাগিতা করা হয়।
অনুষ্ঠানে কার্ডিনাল প্যাট্রিক আরো বলেন, ‘খ্রিষ্টান সমাজ থেকে কখনো যদি কেউ আমাকে কোনো দায়িত্ব দিতে চায় বা পৃষ্ঠপোষকতা করতে বলে, তবে আমি তাতে রাজি হবো না, কারণ আমার পদাধিকার বলে সব সময় আমি আপনাদের সাথে রয়েছি।’
‘বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন ৫০ বছর ধরে এদেশে মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। এদেশে মানুষ মূল্যবোধের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে, তাই এই দেশকে ভালবেসে সংগঠিত হতে হবে’, বলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাহী সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, এসোসিয়েশনের উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি জর্জ রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেস্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের ভিকারজেনারেল ফাদার ডেভিড গমেজ, ড. ফাদার মিন্টু এল. পালমাসহ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শাখা সমূহের সদস্যবৃন্দ।
‘যারা এই সংগঠনের বন্ধু প্রতীম এবং কার্যক্রমের সাথে সমমনা, তাদেরও এই জুবিলী পালন অনুষ্ঠানে আহ্বান জানানো হবে। আজকে ঢাকার আশেপাশে এবং ঢাকার বাইরে থেকে এত মানুষের আগমনে বোঝা যায়, এই সংগঠনকে আপনারা কতটা ভালবাসেন।’ বলেন নির্মল রোজারিও।
তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবাইকে অধিকার আদায়ের জন্য এর পতাকা তলে জড়ো হতে হবে। আমাদের পিতৃপুরুষের রোপিত বৃক্ষ আমরা পরিচর্যা করছি, একদিন মানুষের দাবি আদায়ে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘হিন্দু-খ্রিষ্টান আমাদের সাড়ে ৪ কোটি মানুষের মধ্যে কোনো যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার ছিল না। সর্বোচ্চ ত্যাগস্বীকার আমরাই করেছি। তাই আমাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেসব অপশক্তির সাথে মিলে সংখ্যালঘুদের ওপর নানা সময়ে নির্যাতন করেছে, দখল করে নিয়েছে আমাদের জমি। ভোট এবং জমি এক সাথে আর দেওয়া যাবে না।’
তারা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন, এ ধরনের জনপ্রতিনিধিদের মনোনয়ন যেন না দেওয়া হয়। আগামী নির্বাচনের আগেই সংখ্যালঘু সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। কোনো ধর্মীয় স্থান যেন নির্বাচনের প্রচারণার জায়গা না হয়। আমরা কখনোই ধর্মভিত্তিক বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করিনি।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের ৫০ বছরের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় অতিথিরা জুবিলীর লোগো উন্মোচন করেন।
আরবি/আরপি/এসআর/১৮ জুলাই, ২০১৭