শিরোনাম :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের মতবিনিময়
সংখ্যালঘু জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষা ও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সংকট নিরসনের ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সাথে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় হয়েছে।
সভায় বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, আদিবাসী সংগঠন, ছাত্র-যুব প্রতিনিধিসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের হলরুমে ৩০ আগস্ট (২০১৭) সন্ধ্যা ৬টায় এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা সরকারের মধ্যে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে অচিরেই এদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে কী পন্থা নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও মতবিনিময় করেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত সংখ্যালঘু প্রতিনিধিগণ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও। প্রধান বক্তা ছিলেন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তথা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত।
বিগত একটি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের মা-বোনদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, গির্জা-মন্দির ভাংচুর হয়েছে, জমি-সম্পত্তি, বাড়ি-ঘর দখল করা হয়েছে। ভোট ও বাড়ি একসাথে দেওয়া যাবে না, বলে উল্লেখ করেন প্রধান বক্তা রানা দাস গুপ্ত।
রানা দাস গুপ্ত আরো বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে মৌলবাদ বারবার পরাজিত হয় বলেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন আসে। তাই দৃঢ়কন্ঠে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিরা যেন সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, তার তাগিদ ব্যক্ত করেন তিনি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে তিনি সেই বিষয়ে এখনই সবাইকে সজাগ থেকে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সচেতন করেন। ‘সম-মর্যাদা নিয়ে আমাদের জীবন বিকাশের পরিবেশ চাই,’ বলেন প্রধান বক্তা।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও মতবিনিময় সভার প্রেক্ষাপট বর্ননা করতে গিয়ে ৪ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ১৯টি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠন ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি মিলনায়তনে যে সংবাদ সম্মেলন করে সরকার, রাজনৈতিক দল, জোট, নির্বাচন কমিশন ও জাতির কাছে সংখ্যলঘুদের সম-অধিকার ও অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেন, তার উল্লেখ করে বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করেছেন, তাদেরকে এ নির্বাচনে বর্জন করতে হবে।’ তিনি আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে যে সংখ্যালঘুদের বিরাট গণজমায়েত করার পরিকল্পনা রয়েছে, সংখ্যালঘুদের সংগঠিত করে তা সফল করার আহবান জানান। সংখ্যালঘুদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫ দফা দাবিসম্বলিত স্মারকলিপি সরকার প্রধানের কাছে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
১৪ সেপ্টেম্বরের গণজমায়েতের উল্লেখ করে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি তথা দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কজ গমেজ বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ওইদিন গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে ১০ হাজার লোকের জনসমাগম করতে এলায়েন্সের প্রত্যেক সংগঠনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত ও নির্মল রোজারিওর বক্তব্যের সাথে সংহতি প্রকাশ করে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, বিসিএ-এর উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি জর্জ রোজারিও, হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জয়েন্ট সেক্রেটারি শ্রী মনিন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতা শ্রী পলাশ কান্তি দেউরী।
এ ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা-এর সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা। দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর কয়েকজন কর্মকর্তাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভার সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া ও প্রারম্ভিক সার্বজনীন প্রার্থনা পরিচালনা করেন নিরাপদ হালদার।
সভার পর্যায়ক্রমিক কর্মসূচির মধ্যে ছিল অতিথিদের আসন গ্রহণ, প্রারম্ভিক সার্বজনীন প্রার্থনা, অংশগ্রহণকারীদের পরিচিতি, বিসিএ-এর মহাসচিব কর্তৃক ৫ দফা দাবি পাঠ, সভাপতি নির্মল রোজারিওর শুভেচ্ছা বক্তব্য, প্রধান বক্তাসহ অন্যান্য অতিথির বক্তব্য, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিসিএ-এর ইউনিট প্রতিনিধিসহ অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামত প্রদানসহ ১৪ সেপ্টেম্বরের কর্মসূচিকে সফল করার জন্য কৌশল সম্বন্ধে মতামত প্রকাশ।
বিসিএ-এর সভাপতি নির্মল রোজারিওর ধন্যবাদ বক্তব্য ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়ার প্রার্থনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। সভার শেষে আন্ত:ব্যক্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের কর্মসূচি সফল করার জন্য ব্যাপক গণযোগাযোগ করার প্রস্তাব রাখা হয়।
আরপি/আরআর/৩১ আগস্ট ২০১৭