শিরোনাম :
বিউটি পার্লার কর্মীদের মালিকানা নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে ঢাকা ক্রেডিট
সাধারণ মানুষের অংশীদারিত্ব নিয়ে নিজেদের উন্নয়নের জন্য ঢাকা ক্রেডিট কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ।
ঢাকায় বিউটি পার্লার কর্মীদের এক মতবিনিময় সভায় প্রেসিডেন্ট গমেজ বলেন, গতানুগতিকভাবে মেয়েরা ঋণ নিয়ে ঘরের ফার্নিচার কিনে, বিয়ে করে বা ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে। এতে মানুষের চলমান জীবন উন্নয়ন হয় না। কিন্তু জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে ঋণ নিয়ে তা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। যে কারণে আমরা জনগণের দক্ষতার জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই।
আজ রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা ক্রেডিট প্রধান কার্যালয়ে ঢাকায় বিভিন্ন পার্লারে কর্মরত গারো সমাজের মেয়েদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রেসিডেন্ট গমেজ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা ক্রেডিট ৫ম ত্রি-বার্ষিক কর্মকৌশল পরিকল্পনায় বিউটি পার্লার সেক্টরে কমরত মেয়েদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কীভাবে কাজ করা যায়, বিনিয়োগ করা এবং উন্নয়ন করা যায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ‘আমাদের সমাজের গারো মেয়েদের একটি বড় অংশ এই সেক্টরে কাজ করে। তাদের অংশিদারিত্বের মাধ্যমে মালিকানা নিশ্চিত করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ঢাকা ক্রেডিট একটি বড় প্রকল্প করার পরিকল্পনা করছে।’
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট জানান, ঢাকা ক্রেডিট বিউটি পার্লার প্রকল্পের অধীনে নদ্দায় একটি নিজস্ব ভবন নির্মাণ কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ এখানে বিউটিশিয়ানদের (গারো মেয়েদের) প্রশিক্ষণ-এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ছাড়াও পার্লারের সাথে জড়িতদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মালিকানা নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই প্রকল্পের অধীনে অনেকগুলো আউটলেট থাকবে এবং শেয়ারের মাধ্যমে এর মালিক হবে সদস্যরা। শুধু তাই নয়, শেয়ার ক্রয় করার জন্য অর্থ না থাকলে, তার ঋণ প্রদানও করবে ঢাকা ক্রেডিট।
অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, ঢাকা ক্রেডিট শুধু অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে, তবে মূল মালিক হবে সাধারণ শেয়ার গ্রহণকারী সদস্যরা। শুধু তাই নয়, একজন অংশীদারি মালিক কর্মী হিসেবেও এখানে কাজ করতে পারবে। একদিক থেকে সে মালিকানার লভ্যাংশ পাবে, অন্যদিকে কর্মী হিসেবেও আয় করতে পারবে।
এ দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হেমন্ত হেনরী কুবি এবং দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল মানকিন। এ ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজসহ ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তা ও ফারজানা শাকিল, পার্সোনার মতো বিভিন্ন বিউটি পার্লারের গারো বিউটিশিয়ানরা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, গারো মেয়েরা এখনো অন্যান্য কমিউনিটি থেকে পিছিয়ে রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে তারা অনেক এগিয়েছে এবং তার জন্য মিশনারীদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তবে এখনো গারো সমাজের এগিয়ে যাওয়ার পথ অনেক বাকি রয়েছে।
তারা বলেন, ৯০ দশকে গারো মেয়েরা বিউটি পার্লারের সাথে জড়িত হতে শুরু করে এবং বর্তমান দশকের শেষেই বিউটি পার্লারের কর্মীর মধ্যে ৯৯ শতাংশ কর্মী হলো গারো মেয়ে।
পার্লারগুলো যদিও গারো মেয়েদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে, কিন্তু সেখানে তাদের অধিকার বা নিরাপত্তা কতটুকু? বড় বড় পার্লারগুলো বিভিন্নভাবে আন্ডারগ্রাউন্ড দ্বারাও নিয়ন্ত্রিত, এই ক্ষেত্রে অধিকারের অনেককিছু পাওয়া কঠিন। যে কারণে পার্লারে কাজ করা মেয়েদের একটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় বলা হয় যে, গারো সমাজ, গারো সংগঠন বা বিভিন্ন গারো ছাত্র সংগঠন কিন্তু এসব নিয়ে ভাবেনি। অথচ ঢাকা ক্রেডিট গারো পার্লারকর্মীদের নিয়ে অনেক বড় একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার প্রয়াস নিয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে যে, এই মেগা প্রকল্পের কারণে সকলের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে একজন গর্বিত মালিক সুযোগ যেমন সৃষ্টি হবে, তেমনি এই উদ্যোগ নিশ্চিত কর্মক্ষেত্রও তৈরি করবে।
আরবি/আরপি/৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭