শিরোনাম :
অসহায় শিশুদের জীবনের ঠিকানা লাইফ প্রকল্প
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বিকালের দিকে হঠাৎ দেখা গেল অনেকগুলো ছোট ছেলেমেয়েদের কোলাহল। এগিয়ে যেতেই দেখা গেল, এক তরুণী কয়েকজন পথশিশু নিয়ে প্লাটফর্মের বামদিকে জড়ো হয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেল, ওই সব শিশুদের পথ-ঘাটই ঠিকানা। সেখানে জটলা দেখে কৌতুহলী হয়ে জানা গেল, এখানে শিশুদের অধিকার সচেতনতার বিষয়ে জানানো হচচ্ছে। শিশুদের জন্য মৌলিক অধিকারের কথা বলা হলেও, তাদের কপালে মেলেনা সেই সুযোগ।তাদের এই মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছে ‘লাইফ প্রকল্প’।
লেখাপড়া না করে ঘুরে বেড়ায়, বাবা-মা হারা, স্টেশনের ফুটপাতে দিন কাটানো, বাবামায়ের কথা-শাসন না মেনে মাদকাসক্ত এই চার বৈশিষ্ট্যের ৩০০ শিশু নিয়ে ২০১৫ সালে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে।
প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে এই শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম।গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে মাদক পরিহার, নৈতিকতা শিক্ষা, শিশুদের মৌলিক অধিকার, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসহ আরো সচেতনতামূলক বিষয় নিয়ে সাজানো হয় প্রতিদিনকার পাঠ।
ছবি আঁকা এবং গান শেখাও এই পাঠদানের অন্তর্ভূক্ত ।
‘লাইফ প্রকল্পে’ শিশুদের শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ফ্লোরা মূর্মু বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের সংগ্রহ করে প্রথমে আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করি। যারা মাদকাসক্ত তাদের সাথে কাউন্সিলের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করি্।’
লাইফ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা লুর্সিয়া মারান্ডী ডিসিনিউজকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা ৩০০ জন শিশু নিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে ২৩০জন শিশু রয়েছে। আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত এইসব পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছি। বয়স অনুযায়ী আমরা শিশুদের কারিগরি বিদ্যালয়ে পড়ার ব্যবস্থা করে থাকি।
তবে আশার কথা হচ্ছে শিক্ষা ও সচেতনতায় শিশুদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও অনেকটা উৎসাহী’। বিশেষ সুবিধা হিসেবে পথশিশুদের থাকা খাওয়ার ও ব্যবস্থা করা হয়।
শেল্টার হোমে থাকার কারণ জানতে চাইলে ১৪ বছরের পথশিশু মারুফ ডিসিনিউজকে বলে, ‘আমার মা বোতল কুড়ায়। আমি এখানে অনেকের সাথে থাকি, লেখাপড়া শিখি। ভালো লাগে ।’
এভাবে শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে একটি সংগঠন এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী মানুষ। যাদের শ্রম এবং শিক্ষায় বদলে যেতে পারে একটি শিশু। হয়তো কিছুটাও বদলাবে পৃথিবী!
আরবি/আরপি/১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭