ঢাকা ,
বার : রবিবার
তারিখ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সাপ্তাহিক পরিক্রমা পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার বুলবুল রিবেরুর সাক্ষাৎকার

পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার বুলবুল রিবেরুর সাক্ষাৎকার

0
4123
পোপের জীবনের একটা দর্শন হলো, ‘সকল মানুষ যেন মর্যাদা পায়’ : ফাদার বুলবুল

আসছেন পোপ ফান্সিস, প্রস্তুত বাংলাদেশ! পোপ ফ্রান্সিস ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসবেন। থাকবেন তিন দিন, ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পোপের আগমন নিয়ে বাংলাদেশ এবং কাথলিক মন্ডলীসহ আন্তঃমন্ডলী ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও আলোচনা। পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে ডিজিনিউজের এবারের আয়োজন “পোপ ফ্রান্সিসের আগমন উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান কমিউনিকেশনের পরিচালক এবং সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার বুলবুল আগস্টিন রিবেরু’র সাক্ষাৎকার”। পোপের সফরের বিভিন্ন কমিটির মধ্যে মিডিয়া কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডিসিনিউজের সিনিয়র রিপোর্টার রবীন ভাবুক।

‘পোপ ফ্রান্সিসের আগমনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন’ এই প্রসঙ্গে ফাদার বুলবুল বলেন, বাংলাদেশ সফরের পূর্বে পোপ মহোদয় মিয়ানমার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। এরপর সরাসরি তিনি বাংলাদেশে আসবেন। পোপ দুইটি বিষয়ের কারণে বাংলাদেশ সফর করবেন। একটি হলো রাষ্ট্রীয় সফর এবং অন্যটি পালকীয় বা পৈরিতিক সফর। তিনি আসবেন এই ধারনার উপর ভিত্তি করে পূর্বে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। বাংলাদেশ বিশপ সম্মীলনী পূর্বেই পোপ মহোদয়কে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান, এর পরপরই বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোপ মহোদয়কে বাংলাদেশে আসার আহ্বান জানান। বারবার অনুরোধ এবং আমন্ত্রণের কারণে পোপ মহোদয় তাঁর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশে আসার সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

তিনি বলেন, মে মাস থেকেই পোপ মহোদয়ের আসার ইঙ্গিত পাওয়াতে প্রস্তুতি অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল এবং কিছু কমিটি গঠন করা হয় যেন তাঁর সফর আরো সাফল্যমন্ডিত হতে পারে। যেটা রাষ্ট্রীয় সফর তা রাষ্ট্র সম্পূর্ণ গ্রহণ করবে বা দেখছে, আর মান্ডলিক সফর বাংলাদেশ বিশপ সম্মীলনীর তত্ত্ববধানে গঠিত কমিটি প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

রাষ্ট্রীয় সফরের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্ব রয়েছে এর প্রেক্ষিতে ফাদার বুলবুল বলেন, পোপ ফ্রান্সিস যেহেতু ভাতিকান রাষ্ট্রের প্রধান তাই রাষ্ট্রীয় প্রধানকে যেভাবে প্রটোকল দেওয়া হয়, তেমনি পোপ ফ্রান্সিসকেও ঠিক একই ধারায় রাষ্ট্রীয় প্রটোকল দেওয়া হবে। অধিকন্তু পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের সকল কাথলিকদের ধর্মীয় গুরু, তাই রাষ্ট্র তাঁকে আরো নিখুঁতভাবে প্রটোকল দিবে। বিশেষ করে তাঁর নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র সচেতন আছে। রাষ্ট্র জানিয়েছে, পোপ মহোদয়ের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। পোপের বাংলাদেশ সফরের সবচেয়ে বেশি আলোচিত দিক হলো তাঁর নিরাপত্তা।

রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পোপের অবস্থানকালীন বাসগৃহে সাক্ষাতে যাবেন এ বিষয়ে ডিসিনিউজের সাথে আলাপে ফাদার বুলবুল বলেন, হয়তোবা পোপ মহোদয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পোপ মহোদয়ের অবস্থানকালীন বাস ভবনে যাবেন। তবে এ বিষয়ে তার কোনো সম্যক ধারণা নেই বলেন জানান ফাদার বুলবুল।

পোপ মহোদয়ের আগমনের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে কিনা এ ব্যাপারে তিনি বলেন, পোপ মহোদয় যখন কোনো রাষ্ট্র সফরে যান, তখন মূলত কিছু বিষয়ে জোড় দিয়ে যান। বাংলাদেশ সফরে মূলত তিনটি বিষয়ে জোড় দিচ্ছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। এর একটি বলা হয়েছে, পোপ প্রথমত আসছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে তীর্থ করতে। বাংলাদেশের মানুষের মনে যে শান্তি সম্প্রীতি আছে এটা তিনি জানেন এবং সেই শান্তি ও সম্প্রীতির সংস্কৃতিকে তিনি সম্মান জানাতে চান এ কারণেই তিনি বাংলাদেশের মানুষের মনে তীর্থ করতে চান। দ্বিতীয় কারণটি হলো, পূণ্যপিতার দর্শনে প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগণ বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে, তিনি বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন যেন তিনি এদেশের প্রান্তিক জনগণের প্রতি তাঁর ভালবাসা দেখাতে পারেন। আর তৃতীয় কারণটি হলো, বাংলাদেশে অল্প সংখ্যক খ্রিষ্টভক্ত থাকলেও তাদের সাথে দেখা করতে, পোপ মহোদয়ের দর্শনের কথা বলতে, সহভাগিতা করতে এবং এদেশে মানুষের সম্পর্কে আরো বেশি জানতে তিনি বাংলাদেশে আসতে চান।

পোপ মহোদয়ের সফরে কোন বিষয়ে বেশি জোড় দেওয়া হবে এই প্রসঙ্গে ফাদার বুলবুল বলেন, মূলত শান্তি ও সম্প্রীতিকে জোড় দিয়েই পোপ মহোদয়ের সফরটা হবে। যেখানে সম্প্রীতি রয়েছে সেখানে শান্তি আসবেই। আর এই সম্প্রীতি বাংলাদেশে সম্ভব। ধর্মীয় অল্পকিছু গোড়ামী থাকতে পারে, তবে তেমন বড় কোনো মৌল্যবাদ বাংলাদেশে নেই। এ দেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও মৌল্যবাদ এতটা বেশি মাথাচাড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। সম্প্রীতির একটা আবহ এবং কৃষ্টি বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে। দেশীয় এবং মান্ডলিকভাবে পোপ মহোদয় এসে সম্প্রীতির ধারাটাকে আরো বেশি বেগবান করবে।

পোপের সফরে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কোনো ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এ বিষয়ে ফাদার বুলবুল বলেন, বাংলাদেশে মানুষের মাঝে যে সম্প্রীতি তাতে মনে হচ্ছে না খারাপ কিছু হবে। সবাই চায় পোপ বাংলাদেশে আসুক। তবে ভ্রান্ত এবং বিপদগামী মানুষ যে বাংলাদেশে নেই, তা বলা যাবে না। কিন্তু এতে তেমন কোনো খারাপ প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।

ফাদার বুলবুল আগস্টিন রিবেরুর সাক্ষাৎকার

পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশে আগমনে খ্রিষ্টানদের অবস্থান কেমন হবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, পোপ আসুক বা না আসুক বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের অবদান অনেক বেশি। বিশেষ করে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবায় অবদান অনেক বেশি। তবে পোপ মহোদয় আসার কারণে সেটা আরো বেশি প্রচার পাবে। বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশের খ্রিষ্টানরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বড় একটা রেমিটেন্স আসে প্রবাসী খ্রিষ্টানদের মাধ্যমে। তারা বিদেশে কাজ করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক অর্থ বাংলাদেশে পাঠায়। তবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একট দাবি থাকবে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে সকল বিষয়ে যেমন সরকার অন্যান্যদের সুযোগ দেয়, তেমনি খ্রিষ্টানদেরও সুযোগ দিবে। সেবা দেওয়ার জন্য খ্রিষ্টানরা সব সময় উদগ্রীব, সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, কেউ যেন এই সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।

তিনি আন্তঃধর্মীয় এবং আন্তঃমান্ডলিক সম্পর্কের বিষয়ে বলেন, পোপের সফরে এই দুটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যেন সকল মানুষ পোপের সান্নিধ্য পায়। এখানে শুধু কাথলিক খ্রিষ্টান নয়, সকল খ্রিষ্টানরা এবং সকল ধর্মের মানুষেরা যেন পোপ ফ্রান্সিসের সান্নিধ্যে যেতে পারে সেজন্য কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পোপ নিজেও চান আসল বাস্তবতা দেখার জন্য। তিনি নিজেই চাচ্ছেন সকল মানুষের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক থাকবে, আর বাংলাদেশ মন্ডলীও সেই মতো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একারণেই আন্তঃধর্মীয় এবং আন্তঃমান্ডলিক সম্পর্ক জোড়দার হবে।

‘পোপের জীবনের একটা দর্শন হলো, ‘সকল মানুষ যেন মর্যাদা পায়’। কোনো মানুষকে তিনি ছোট ভাবতে চান না, কোনো ধর্মের মানুষ সেটা তাঁর কাছে বড় বিষয় নয়। মানুষের মধ্যে তিনি বিভেদ করতে চান না। সে কারণেই তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেন যেগুলো ধর্ম নিয়ে বিচার করলে ঠিক নয়। তিনি মানুষ হিসেবে সেই কথাগুলো বলেন, যে কারণে পোপ ফ্রান্সিস এত জনপ্রিয় এবং আমরা তাঁকে উদারপন্থী বলি। যারা মানুষকে মর্যাদা দান করে না, পোপ তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলেন।’ বলেন পরিচালক ফাদার বুলবুল রিবেরু।

পোপের সফরের অনুষ্ঠানগুলোতে সাধারণ মানুষ কিভাবে অংশ নিতে পারবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু পোপ ফ্রান্সিস একজন রাষ্ট্র প্রধান আবার একজন ধর্মীয় গুরু তাই তাঁর নিরাপত্তার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠানগুলো সাজানো হয়েছে। সাধারণ জনগণ কীভাবে অংশ নিবে তার জন্য বিভিন্ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য পোপ ফ্রান্সিসের এই বাংলাদেশ সফর রাষ্ট্রীয় এবং মান্ডলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সবাই দেখছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সূত্রে জানা যাব। ১৯৭০ সালের ২৬ নভেম্বর পোপ ষষ্ঠ পল বাংলার মাটিতে আসেন, যা ছিল কোনো পোপের বাংলাদেশে প্রথম আগমন। এরপর ১৯৮৬ সালের ১৯ নভেম্বর পোপ দ্বিতীয় জন পল রাষ্ট্রীয় এবং পালকীয় সফরের জন্য বাংলাদেশে আগমন করেন এবং তা বাংলাদেশে পোপের আগমনের দ্বিতীয় ঘটনা। এবং তৃতীয়বারের মতো কোনো পোপ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। পোপ ফ্রান্সিস তৃতীয় পোপ যিনি বাংলাদেশ সফর করবেন।

আরবি/আরপি/১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭