শিরোনাম :
পরমাণু বিশ্বে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ
‘বহুল প্রতীক্ষিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করলো পরমাণু বিশ্বে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য গৌরব ও আনন্দের।’ বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বর্জব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাশিয়ার স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন- রোসাটমের সঙ্গে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে আমি যখন কথা বলি, প্রথমেই বলেছিলাম বর্জটা নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশ ঘনবসতির দেশ, বর্জ এখানে রাখা সম্ভব না। তারা বর্জ নিয়ে যেতে রাজি হয়। এ বিষয়ে একটি চুক্তিও হয়েছে।
‘আমি বলবো এটা নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, টকশো-তে কথা বলছেন তারা তারা দুশ্চিন্তা ভুলে যান। ভালো কিছু চিন্তা করেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবেই’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে ১-২-৩ স্তরগুলোতে যারা থাকবেন, সেসব বাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ান ফেডারেশন সহ দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমারা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবো। তখন চিন্তায় বিষয় ছিল এই বিশাল অংকের টাকা পাবো কোথায়, এটা একটা ব্যাপার ছিল। আমি যখন রাশিয়া যাই তখন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলাপ করি, তিনি রাজি হন। পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এটা করে দিবে। এজন্য আমি রাশিয়া ও প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে রাশিয়া ও সেদেশের জনগণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের অবদান স্মরণ করছি আজ।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার মেতা বলিষ্ঠ নেতৃত্ব পেয়েছিলাম বলেই আমরা যুদ্ধের
ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। কিন্তু জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর দেশকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বক্তব্য রাখেন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টা ৫০মিনিটে হেলিকপ্টারে করে রূপপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর সকাল ১১টায় তিনি এ কাজের উদ্বোধন করেন।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে ১ হাজার ৬০ একর জমির উপর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে।
এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে (নিউক্লিয়ার নেশন) যুক্ত হবে। বাংলাদেশ হবে এ ক্লাবের ৩২তম দেশ। বর্তমানে বিশ্বের ৩১টি দেশে ৪৫০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট চালু রয়েছে।
রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হতে যাচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় আণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এএসই গ্রুপ অব কোম্পানিজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণে সরবরাহ করছে রাশিয়া। রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক ৩+ প্রজন্মের (থ্রি প্লাস জেনারেশন) ‘ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হবে।
আরবি/আরপি/৩০ নভেম্বর, ২০১৭