শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক-বড়দিন ও বিজয় দিবসের মিলন মেলায় আনন্দের ফোয়ারা!
‘বিজয় দিবস খুব আনন্দের। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, তা খুব কষ্টের।’ মন্তব্য করেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকার তেজতুরী বাজারের বটমলী হোমস্ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃক আয়োজিত প্রাক-বড়দিন ও বিজয় দিবসের মিলন মেলায় এসব কথা বলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক।
এ সময় কার্ডিনাল প্যাট্রিক আরো বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালি জাতির জন্য বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন।’
এ ছাড়াও তিনি বলেন, ‘আজকের এই মিলনমেলা আমাদের মাঝে সৌহার্দ্ধ প্রকাশ করছে। আজকের এই দিনে বড় একটা সমাবেশে আমি আসতে পেরে কৃতজ্ঞতা জানাই সবাইকে। আমার মনে হয় এই বিজয়ের মাসে পোপ মহোদয়ের আগমনের মাধ্যমে আরেকটি বিজয় নিয়ে এসেছেন। সেই বিজয় হলো, শান্তি ও সম্প্রীতি। আমাদের সম্প্রীতি বাহ্যিক কিছু নয়। এটা আমাদের কৃষ্টিগত, সংস্কৃতিগত। পোপের সফর বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে, আমাদের দেশ বড়, অনেক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বিশ্বের মাঝে।’
‘বড়দিন একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বড়দিন আমাদের কাজকর্মে, বড়দিন আমাদের চিন্তা-চেতনায়। ভালবাসা ও মিলনের বহি:প্রকাশ হলো বড়দিন।
মানুষের মাঝে একটি সন্ত্রাসবাদ আছে। এই সন্ত্রাসবাদ হলো পরনিন্দার চর্চা করা। অন্যকে ছোট করা, হেয় করা, অপমান করে আমরা প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস করছি।
বড়দিন শান্তি আনুক, মানুষকে সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত করুক এই কামনাই করি।’
মিলন মেলায় ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট ৬০০ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। আর এর অংশীদার আপনারা সবাই। আজকের এই আয়োজন আপনাদের জন্য। আপনারা জানেন, দুইজন ব্যক্তির মামলার কারণে ঢাকা ক্রেডিটের নির্বাচন এবং বার্ষিক সাধারণ সভা প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়েছে। যার ফলে আপনার বার্ষিক সাধারণ সভার মতো মিলনমেলা থেকে আপনার বঞ্চিত। মূলত এর কারণেই আপনাদের জন্য এই মিলনমেলার আয়োজন।’
পোপের আগমন নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পোপ মহোদয়ের আগমনে দেশের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
তিনি এ সময় উপস্থিত সকলকে বড়েিদনর শুভেচ্ছা জানান।
সাহিত্যিক ও কলামিস্ট মাসুদা ভাট্রি বলেন, ‘বিশ্বে ধর্মে ধর্মে, ক্ষমতা নিয়ে আশান্ত পরিবেশ বয়ে চলেছে। পোপের আগমনে দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা বয়ে এসেছে’
তিনি বলেন, ‘বহুত্ববাদ দিয়েই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। দেশের কল্যাণের জন্য যেন আমাদের সকলেরই অংশগ্রহণ থাকে। এদেশে আমরা কেউ কারো শত্রু নই।’
তিনি এ সময় ঢাকা ক্রেডিটের প্রশংসা করে বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট আজ বিজয় দিবসের জাতীয় ইস্যুতে আমাকে অংশ নেওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে।’
এ দিন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ক্রেডিটর প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক ও কলামিষ্ট মাসুদা ভাট্রি, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, দি মোট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তণ প্রেসিডেন্ট তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়াসহ ঢাকা ক্রেডিটের অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মী এবং সদস্যবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘আজ গৌরবের দিন। এই বিজয়ের জন্য ৩০ লক্ষ বাঙালি আত্মহুতি দিয়েছিল। আজ আমরা শ্রদ্ধা ভরে তাদের স্মরণ করছি। আজ বাঙালি জাতির অহংকারের দিন। আমরা বড়দিনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। খ্রিষ্টের জন্ম উৎসব আমাদের জন্য শান্তি ও আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। আমরা যেন শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকি।’
এ দিন সকাল ১১টায় বিভিন্ন আঞ্চল থেকে ১৪টি দল কীর্তন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিচারকদের রায়ে ১ম পুরস্কার লাভ করে ঢাকা ক্রেডিট এ্যামপ্লয়ীজ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, ২য় পুরস্কার লাভ করে হলিক্রশ গার্লস হোস্টেল এবং তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে ঢাকা শহরস্থ সাভারবাসী খ্রীষ্টান সমবায় সমিতি।
মিলনমেলায় বড়দিন ও বিজয় উৎসব উপলক্ষে কেক কেটে সকলের সাথে আনন্দে অংশ নেয় অতিথিরা।
মিলনমেলার বিকেলে জিপিএ এ+ এবং এ পাওয়া এসএসসি, এইচএসসি, এ-লেভেল এবং ও-লেভেল পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণ ও স্মারক প্রদান করেন প্রধান অতিথি, সভাপতি এবং অন্যান্য বিশেষ অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে ঢাকা ক্রেডিটে উপর নির্মিত গৌরবের ৬২ বছর নামে প্রমান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়াও এদিন সন্ধ্যায় একটি জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আরবি/আরপি/১৬ ডিসেম্বর,২০১৭