শিরোনাম :
দি মেট্রেপিলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির উদ্যোগে আন্তার্জাতিক নারী দিবস পালন
‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরে কর্মজীবন ধারা’ মূলভাবের ওপর ভিত্তি করে দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি ছয় শতাধিক নারী-পুরুষ, নেতা-নেত্রী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতে মহাসমারোহে নারী দিবস-২০১৮ পালন করে।
তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারের প্রদীপ প্রজ্বালনের পাশাপাশি ‘আগুনের পরশ মণি’ গানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা করা হয়। প্রদীপ প্রজ্বালন করেন সংশ্লিষ্ট হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, ঢাকা ক্রেডিট নারী কমিটির আহ্বায়ক পূর্ণিমা মারীয়া গমেজ, যুগ্ন আহ্বায়ক মার্সিয়া মিলি গমেজ, হাউজিং সোসাইটির ডিরেক্টর এবং নারী কমিটির আহ্বায়ক কল্পনা ফলিয়া, বিশেষ অতিথি সমাজকর্মী শিলা আহমেদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তার এবং বিশিষ্ট অভিনেত্রী তাহমিনা সুলতানা মৌ। একই সাথে সকল অতিথিকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়।
একদল গারো আদিবাসী মেয়ের উদ্বোধনী নৃত্যের পর পরই অনুষ্ঠান শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন দি মেট্রেপিলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন। স্বাগত বক্তব্যে তিনি নারী দিবসের সংক্ষিপ্ত পটভূমি তুলে ধরে বাংলার মহীয়সী নারী প্রীতিলতা, বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা এবং (যিশুর মা) মা মারিয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সমাজে ও পরিবারে এঁদের অবদান অনস্বীকার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাউজিং এবং ঢাকা ক্রেডিটে নারীকর্মীদের আনুপাতিক সংখ্যা শতকরা ৫০ জন । নারীদের যথাযথ সম্মান দেখানো সকল পুরুষের নৈতিক দায়িত্ব।’
বিশেষ অতিথি ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘আমি দি মেট্রেপিলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করি আগামী বছর যেন নারী দিবস আরো বড় পরিসরে পুরুষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে পালন করা হয়। হাউজিং এবং ঢাকা ক্রেডিট নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। বর্তমানে নারীদের সব দিকেই দক্ষতা রয়েছে। তারাও হিসাব বিজ্ঞান, অর্থনীতি,ব্যবস্থাপনা ও নানা বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, আমি মনে করি তাদের পুরুষদের পাশাপাশি সবকিছু করার যোগ্যতা আছে।’ প্রেসিডেন্ট গমেজ আরও বলেন, ‘নারীদের ক্রেডিট ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশগ্রহণ আরো জোরদার হোক আমি সেই আশা ব্যক্ত করি।’
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোেিয়শনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন,‘ঢাকা ক্রেডিট ২০০৮ সাল থেকে নারী দিবস পালন করে আসছে। আজকের নারী সমাজ পুরুষের দ্বারা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে, নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা এবং স্বাবলম্বী হওয়া। রোজারিও আরও বলেন, ‘নারীরা বর্তমানে এগিয়ে এসেছে অনেক সমানের দিকে, আরও অগ্রসর হোক, এটাই আমি প্রত্যাশা করি।’
বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট সমাজকর্মী শিলা আহামেদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘একুশ বছর আগে আমি স্কুল থেকে ফেরার পথে কিছু ছেলের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছি। ২০১৮-এর ৭ই মার্চ একইভাবে কিছু মেয়ে জনসমুখে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু নারীদের প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি তথা মাসকিতার পরিবর্তন হয়নি। শিলা বলেন, ‘আমি লাঞ্ছনার শিকার হয়েও থেমে থাকিনি।’ অন্য কোনো নারী যেন থেমে না গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়, তার জন্য তিনি নারীদের উৎসাহিত করেন।
বিশেষ অতিথি অভিনেত্রী তহমিনা সুলতানা মৌ বলেন, ‘মেয়েদেরকে নারী না বলে মানুষ বলা হোক, কারণ আমরা সবাই মানুষ। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমাদের শিক্ষার মধ্যে সমস্যা রয়েছে, ছোটবেলায় একটি ছেলে এবং মেয়েকে আমরা নিদিষ্ট করে দেই ছেলেরা হাড়ি-পাতিল দিয়ে কোনো খেলা করতে পারবে না, মেয়েরা মাঠে ফুটবল খেলতে পারবে না। আমাদের মধ্য থেকে এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে হবে।’ তাই তিনি এসব ভ্রান্ত ধারণা উপেক্ষা করে সকল নারীকে সমানের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি নাজমা আক্তার হাউজিং সোসাইটির নারী কমিটির আহবায়ক কল্পনা ফলিয়া এবং অন্যন্য নারী নেত্রী তাদের বক্তব্যে নারীদের অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখার আহবান জানান এবং নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য অনুপ্রেরণা দেন।
এ অনুষ্ঠানের সভাপতি তথা হাউজিং সোসাইটির নারী কমিটির আহবায়ক কল্পনা ফলিয়া এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল বিশেষ অতিথিকে তাদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এই অনুষ্ঠানে আদিবাসী নৃত্য, গান এবং অন্যন্য পরিবেশনায় নারীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে দিবসটিকে মহিমান্বিত করেন।
এইচআর/আরপি/আরআর/০৯/০৩/২০১৮