ঢাকা ,
বার : বৃহস্পতিবার
তারিখ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১২ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ তেজগাঁও গির্জায় ড. ফাদার বার্নাড পালমার শেষ কৃত্য

তেজগাঁও গির্জায় ড. ফাদার বার্নাড পালমার শেষ কৃত্য

0
1095

আজ (শনিবার) সকাল ১০টায় পবিত্র জপমালা রাণীর গির্জায় ফাদার বার্নাড পালমার শেষ কৃত্যের খ্রিষ্টযাগ অনুুষ্ঠিত হয়।

ড. ফাদার বার্নাড পালমা ঢাকার আর্চবিশপ হাউজে ২৩ মার্চ (শুক্রবার) সকাল পৌনে ৮টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি এবং ঢাকার সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজসহ আটজন যাজক।

খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গকালে ফাদার বার্নাড সম্বন্ধে বলতে গিয়ে কার্ডিনাল বলেন, ‘ঈশ্বরের বিশেষ দান হিসেবে আমারা ফাদার বার্নাডকে পেয়েছিলাম। তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় যাজক। তিনি শুধু কথা বা কাজ দিয়ে সেবা করেননি, সেবা করেছেন কষ্টভোগের মাধ্যমে। তিনি সবাইকে প্রার্থনা করতে বলতেন। ফাদার বার্নাড ছিলেন আমাদের প্রেরণার উৎস। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’

কার্ডিনাল আরো বলেন, ‘ফাদার বার্নাড খ্রিষ্টমন্ডলীর বাংলা সাহিত্য নিয়ে ভেবেছেন। তিনি ভাতিকানের দলিল এবং কাথলিক মন্ডলীর শিক্ষার দলিল বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি ছিলেন ঐশতত্ত্ববিদ যাজক। তাঁর জ্ঞানের ভান্ডার ছিল অপরিসীম। তিনি অনেক বই পড়তেন এবং প্রার্থনা করতেন। ফাদার বার্নাড ছিলেন একজন ধর্মসাধক ফাদার।’

এ সময় তেজগাঁও ধর্মপল্লির পাল-পুরোহিত ফাদার কমল কোড়াইয়া বলেন, ‘ফাদার বার্নাড ছিলেন আমাদের শিক্ষক। তিনি ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম থেকে শুরু করে ১৫-১৬টি বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তাঁর পান্ডিত্য ছিল অগাধ। তিনি ছিলেন একজন প্রার্থনাশীল মানুষ। তাঁকে হারিয়ে আমারা শোকাহত।’

খ্রিষ্টযাগের পরে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে ফাদার বার্নাডের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

পরে তাঁর পূর্বইচ্ছা অনুসারে তেজগাঁও কাথলিক কবরাস্থানে তাঁর মৃতদেহ সমাহিত করা হয়।

খ্রিষ্টযাগে উপস্থিত ছিলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, ঢাকার সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, ফাদার কমল কোড়াইয়া, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ফাদার, সিষ্টার, ব্রাদার, সেমিনারীয়ান এবং বিপুল সংখ্যক সাধারণ খ্রিষ্টভক্ত।

বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবন থেকে ড. ফাদার বার্নাড পালমা অবসর নেন ২০১৪ সালে এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি রমনা আর্চবিশপ হাউজে অবস্থান করছিলেন।

খ্রিষ্টযাগের এক পর্যায়ে ফাদার শিমন প্যাট্রিক গমেজ ফাদার বার্নাডের জীবনী উল্লেখ করে বলেন, গাজীপুর জেলার তুমিলিয়া মিশনের বান্দাখোলা গ্রামে ফাদার বার্নাডের স্থায়ী আবাসস্থল। কিন্তু পিতা আগস্টিন পালমা এবং মা মারিয়া রিবেরু কাটেখ্রিষ্ট হিসেবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে দীর্ঘকাল কাজ করার কারণে তারা ময়মনসিংহের মরিয়মনগর ধর্মপল্লিতে বাস করতেন এবং সেখানেই ১৯৪৩ সালের ২৪ নভেম্বর তাদের কোল জুড়ে আসেন বর্ণাঢ্য জীবনের মানুষটি ফাদার বার্নাড পালমা।

১৯৫০ থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি ভালুকাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৬-৬১ সাল পর্যন্ত বান্দুরা হলিক্রস হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা চালিয়ে যান। এরপর নটর ডেম কলেজ থেকে ১৯৬১-১৯৬৩ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৩-৬৫ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৬৫-৭১ সাল পর্যন্ত করাচীর ক্রাইস্ট ডি কিং মেজর সেমিনারীতে পড়াশোনা করেন। তৎকালীন আর্চবিশপ থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলী সিএসসি কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি যাজকাভিষেক লাভ করেন।

অভিষেকের পর তিনি রাণীখং মিশনের সহকারী পাল-পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৭১-১৯৭২ সালে ময়মনসিংহের সেন্ট প্যাট্রিক চার্চে, ১৯৭২ সালে হাসনাবাদ গির্জায়, ১৯৭২-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বালুচড়া গির্জায় এবং ১৯৮০ সালে তেজগাঁও গির্জায় সহকারী পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৮-১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি রমনা ইন্টারমিডিয়েট সেমিনারীতে রেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বনানী পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীতে প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ফাদার বার্নাড শিক্ষাজীবনকে আরো মজবুত ও কল্যাণমুখী করতে ১৯৭২-১৯৭৬ সালে লাইসেনসিয়েট ইন ডগমেটিক থিওলজি এবং ১৯৭৬-১৯৭৯ সালে ডক্টরেট ইন ডগমেটিক থিওলজি ডিগ্রী লাভ করেন।

ফাদার বার্নাড মন্ডলীতে বিভিন্ন বিষয়ে অবদানসহ সেবা দিয়ে গেছেন। তিনি মেজর সেমিনারীতে প্রিফেক্ট অব স্টাডিজ, প্রদীপন প্রকাশনার সম্পাদক, ভাতিকান-২ দলিলের অনুবাদসহ নানা বিষয়ে গবেষণাধর্মী লেখা, চিন্তা দিয়ে মন্ডলী ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করেছেন।

খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, রবীন্দ্র দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ পন্ডিত। ড. ফাদার বার্নাড পালমাকে হারিয়ে মন্ডলী এবং সমাজ একজন মহৎপ্রাণ খ্রিষ্টসৈনিককে হারিয়েছে।

আরপি/আরবি/মার্চ ২৪, ২০১৮