শিরোনাম :
আদিবাসী চা বাগানে আবারো নিরব আতঙ্ক
চা শ্রমিকের দৈনিক হাজিরা মাএ ৮৫ টাকা। কোনো রকম এই সামান্য উপার্জনে পুরো পরিবার টানাটানির মধ্যেও দিন চলে যায়। সাম্প্রতিক তাদের মধ্যে একটি আতঙ্ক শুরু হয়েছে, জানালেন হবিগঞ্জ জেলার তেলিয়াপারা চা বাগানের কয়েকজন আদিবাসী চা শ্রমিক।
তেলিয়াপাড়া ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্থানীয়রা দেখালেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর ও নানা স্মৃতি বিজরিত তেলিয়াপারা চা বাগান।এটা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সীমান্তঘেষা স্মৃতি সৌধের পাশে রয়েছে ম্যানেজার বাংলো, পিকনিক স্পট, চা কারখানার কচি চা পাতার মিষ্টি গন্ধ ও চা বাগানের অপূর্ব নৈর্সগিক দূশ্যে। শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে আসে দশর্ণাথীদের ভির যা সারা বছর লেগেই থাকে।
অতন্ত সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন বুলেট আকৃতির স্মৃতি সৌধ। স্মৃতি সৌধের পাশেই রয়েছে খোদাই করা মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা। এছাড়াও কবি শামসুর রহমানের “স্বাধীনতা তুমি” কবিতা স্মৃতি সৌধের সামনের গেইটে খোদাই করা।
এরপরই বেরিয়ে এলো আতঙ্কের কারণ। তারা জানালেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরের তেলিয়াপারা চা বাগানের আদিবাসীদের মনের কথা। চা শ্রমিকরা বলছে, মুক্তিযোদ্ধারা ১০০ একর জায়গা চাচ্ছে এই বাগানের জায়গাই। তবে স্মৃতি সৌধের আশে পাশে চা বাগান ও চা শ্রমিকের লোকালয় ছাড়া আর কিছুই নেই। সুতরাং স্থানীয়দের ফোরাম শ্রীমঙ্গল শাখার পংকজ কন্দ বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা-সন্মান করি কিন্তু কার ষড়যন্ত্রে আদিবাসী চা শ্রমিকদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা চলছে, তা বুঝতে পারছি না।’
এ ছাড়াও চা বাগানের আদিবাসীরা বলছে, সরকারের তো অনেক জায়গা রয়েছে। অন্য জায়গায়ও তো মুক্তিযোদ্ধারা জমি চাইতে পারে। স্মৃতিসৌধ এখানে যেমন আছে, তেমনই থাকুক।
তবে এ ব্যাপারে তেলিয়াপারা চা বাগানের ব্যবস্হাপকের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কিছুই বলতেই রাজি হয়ননি।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ায় ম্যানেজার বাংলোয় ২৭ সেনা অফিসারের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ৪ টি সেক্টরে ভাগ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৪ সেক্টরের কাজের সুবিধার্থে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।
এ বৈঠকেই সেনা কর্মকর্তারা দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশলী গ্রহণ করেন। এই বৈঠক শেষে ভারতের আগরতলা থেকে জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন।
তৎকালীন সময়ে সড়ক ও রেলপথে সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। ম্যাননেজার বাসাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের সংঘঠক ও সেনা নায়কদের পদচারনায় মুখরিত।
আরবি.আরপি. ২২ এপ্রিল, ২০১৮