ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ga_01 ঢাকা ক্রেডিটের ৬৩ বছর

ঢাকা ক্রেডিটের ৬৩ বছর

0
806

-স্বপন রোজারিও

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই আমাদের প্রাণপ্রিয় সমবায় সমিতি দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্রেডিট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে স্বর্গীয় ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি চিরস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন।

পঞ্চাশ ও ষাট-এর দশকে যে সকল খ্রিষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তার পেছনে ফাদার ইয়াং-এর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। খ্রিষ্টান সমাজকে সুদখোর, কাবুলিওয়ালাদের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য ফাদারের প্রাণপণ চেষ্টা থেকে জন্ম লাভ করেছে খ্রিষ্টান সমাজের অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন বা সমবায় সমিতি।

যেসব সমবায় সমিতি মাথা উচু করে দাঁড়াতে পেরেছে সেগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা’। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে সদস্য-সদস্যাদের মধ্যে সঞ্চয়ী প্রবণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের এ ক্রেডিট ইউনিয়ন যাত্রা আরম্ভ করে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ সমিতি তার ৬৩ বৎসরে পদার্পন করেছে। এর পেছনে রয়েছে সমবায়ের কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টার জুরি নেই।

লক্ষ্মীবাজারের সেই সমিতি বর্তমানের ‘ঢাকা ক্রেডিট’ নামেই বহুল পরিচিত। বর্তমানে এর অবকাঠামোগত বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। লক্ষ্মীবাজার ছেড়ে সমিতি এখন তেজগাঁও নিজস্ব জমির ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আকৃতিগতভাবেও এ ক্রেডিট ইউনিয়নের পরিধি বেড়েছে অনেক গুণ। সদস্য-সদস্যাদের আশার প্রতিফলন ঘটেছে। সেবার মান বেড়েেেছ। আমাদের ক্রেডিট ইউনিয়ন এখন সেই পুরাতন গন্ডি পার হয়ে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করেছে। ৬৩ বছরে আমাদের এ ক্রেডিট ইউনিয়নকে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনের দিকে ধাবিত হতে হবে। আমাদের এ ক্রেডিট ইউনিয়ন সদস্য-সদস্যাদের আশানুরূপ সেবা দিয়ে চলেছে।

সদস্যদের সঞ্চয়ী হিসেবে গড়ে তোলার নিমিত্তে রয়েছে সাধারণ সেভিংস, দীর্ঘমেয়াদি আমানত সুবিধা, মাসিক সঞ্চয়, মিলিনিয়ার স্খীম, শিশু-কিশোরদের জন্য বী-সেভার্স ও স্মার্ট-সেভার্স, বিবাহ সঞ্চয় স্খিম, ডাবল ডিপোজিট স্কীম, অবসর জীবনের নিরাপত্তার জন্য বয়ষ্ক সঞ্চয় প্রকল্প, শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প, দ্বিগুণ আমানত প্রকল্প, ত্রৈমাসিক সঞ্চয় প্রকল্প, হাউজিং ডিপোজিট স্কীম, এসটিডি ইত্যাদি।

সদস্যদের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুদ করণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের রয়েছে সাধারণ ঋণ, নিজস্ব শেয়ারের বিপরীতে ঋণ, বাড়ি নির্মাণ ঋণ, ব্যবসায়িক ঋণ, উচ্চশিক্ষা ঋণ, ক্রেডিট সিলিং ঋণ, টপ-আপ ঋণ, বিভিন্ন সঞ্চয়ের বিপরীতে ঋণ, গাড়ি ক্রয় ঋণ, ভোক্তা ঋণ, উচ্চশিক্ষা সাপোর্ট ঋণ, বিদেশে উচ্চশিক্ষা সলভেন্সি ঋণ, বিদেশে যাওয়ার জন্য সলভেন্সি ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ঋণ, পেশা প্রশিক্ষণ ঋণ, ক্যাপাসিটি বেইজড ঋণ, ঢাকা ক্রেডিট নির্মিত ফ্ল্যাট ঋণ, দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ী আমানতের বিপরীতে ঋণ, স্বল্প মেয়াদি ঋণ, উন্মুক্ত কিস্তিতে ঋণ, ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ, ঢাকা মেট্রোপলিটান বাড়ি নির্মাণ ঋণ, বিল পে ঋণ, জিম ঋণ, বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে ঋণ, ইমার্জেন্সি ঋণ (মা ও শিশু চিকিৎসা), কম্পিটেন্সি বেইজড ঋণ, শিল্প ঋণ, সাধারণ ক্রেডিট সিলিং ঋণ ইত্যাদি।

অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার মনিপুরীপাড়ায় নিজস্ব ভবনে আন্তর্জাকিতমানের ডিসি চাইল্ড কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টার, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সাধনপাড়া ও মণিপুরীপাড়ায় দুটি ছাত্রী হোস্টেল, ডিসি সিকিউরিটি সার্ভিস, রিসোর্ট এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, শরীরচর্চার জন্য ব্যায়ামাগার বা জিম, প্রধান কার্যালয়ের নিচতলায় ও সাভার সেবাকেন্দ্র সংলগ্ন দুটি বিরাট সমবায় বাজার, নদ্দায় ঢাকা ক্রেডিট ইউনিয়ন স্কুল, কালচারাল একাডেমি, স্পোকেন ইংলিশ কোর্স, আইইএলটিএস, ম্যাকার্থী লাইব্রেরি, জব লিংকিং সেল, সেলাই, কনফেকশনারী ও চাইনিজ রান্না প্রশিক্ষণ, এম্বুলেন্স সার্ভিস, স্বাস্থ্যনিরাপত্তা প্রকল্প, শেয়ার ও ঋণনিরাপত্তা স্কীম, ফিউনারেল সাপোর্ট, ছাত্র প্রকল্প, সমবার্তা প্রকাশ, হস্তশিল্প প্রকল্প, আর্কাইভ, অনলাইন নিউজ ও অনলাইনটিভি ইত্যাদি।

পূর্বের তুলনায় বর্তমানে সদস্য-সদস্যাদের মধ্যে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমেছে। তারপরও এই খেলাপি সমস্যা থাকার কারণে নিয়মিত সদস্য-সদস্যাগণ ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন না। খেলাপি সদস্য-সদস্যাদের কারণে বিভিন্ন নিয়মিত সদস্য-সদস্যাকে ঋণগ্রহণ করার সময় নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ঋণ খেলাপি হওয়া আমাদের জন্য একটি মারাত্মক অভিশাপ।

৬৩ বৎসরের শুভমুহূর্তে আমাদেরকে এ ঋণখেলাপির অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে হবে। আমাদের উৎপাদনশীল খাতে ঋণ নেওয়ার অভ্যাস গঠন করতে হবে।

ক্রেডিট ইউনিয়নগুলো বর্তমানে শুধু ঋণ দেওয়া-নেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সমাজ তথা দেশের কল্যাণে অনেক কার্যক্রমই ক্রেডিট ইউনিয়ন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে জেনারেল হাসপাতাল বাস্তবায়ন প্রকল্প। এ ধরনের প্রকল্প যেমন সমাজ কল্যাণ ও মানব উন্নয়ন বয়ে আনে, তেমনই লাভের পথও প্রশস্ত করবে। ৬৩ বৎসরের এ সময় আমাদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা ও ধারণা নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

সমিতির মাধ্যমে ইনকাম জেনারেটিং প্রজেক্ট নেওয়া যেতে পারে। এতে সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। সমিতির সদস্য-সদস্যাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির সংযোগ ঘটাতে হবে। সমিতিকে বর্তমান বিশ্বের আধুনিক চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়ন করে সমিতিকে অনেক সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সদস্য-সদস্যাদেরও তাদের সাহায্যে-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

সদস্য ও কার্যকরী পরিষদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমিতি আমাদের গোটা সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করবে। আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, যেন এই সমিতি জাতীয়ভাবে এবং বিশ্বে একটি মডেল ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে।