শিরোনাম :
সংলাপ কমিশনের আয়োজনে সিলেটে আন্তঃধর্মীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সিলেট ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশ আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন আয়োজনে ও কারিতাস সিলেট অঞ্চল এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন সিলেট এডিপি’র উদ্যোগে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৩ জুন) সিলেট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সকাল সাড়ে ১০ টায় এ আন্ত:ধর্মীয় আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের এডিএম নাসির উল্লাহ বক্তব্যে বলেন, মানুষ এই সত্যকে ভুলে ভেদাভেদ তৈরি করেছে। ভেদবুদ্ধিতে প্রণোদিত হয়ে গড়ে তুলেছে বিভেদের দুর্ভেদ্য প্রাচীর। কিন্তু সেই অসংখ্য বর্ণ-বৈচিত্র্যের মাঝেও অতীতের মত আজো মানুষ বহন করে চলেছে এক ও অভিন্ন রক্ত এবং সম্প্রীতির এক চিরন্তন মানব ঐতিহ্য।
আলোচক হিসেবে সিলেট বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ সংঘানন্দ থের বলেন, সুন্দর মন নিয়ে কেউ যদি কাজ করে তাহলে এগিয়ে যাবেই। এজন্য নিজের মননকে ঠিকমত ব্যবহার করতে হবে। মা যেমন তার সন্তানকে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করেন তেমনি সকল প্রাণীকে রক্ষা করতে হবে। ধর্মীয় গুরুরা যদি এক টেবিলে বসতে পারে তবেই এই পৃথিবীর অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। নিজের হৃদয়কে আগে পরিষ্কার করতে হবে।
সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রমের অধ্যক্ষ মহারাজ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ বলেন, সৃষ্টিকর্তার যে বিশ্বাস না করে তবে সে ধার্মিক হতে পারে না। সবকিছুর মধ্যে যে ঈশ্বরের উপস্থিতি আছে তা অনুভব করতে হবে। সকল ধর্ম মনের দরজা দরজা খোলা রাখতে বলে। আমিকে জানাই হচ্ছে ধর্ম। হিংসা মানুষ কলুষিত করছে। এজন্য চোখ খোলে নয় চোখ বন্ধ করে নিজেকে জিঞ্জাসা করুন তবেই নিজেকে সংশোধন করতে পারবেন। যেন নিজেকে যেভাবে ভালোবাসি সেভাবে যেন সবাইকে ভালোবাসতে পারি।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট ক্যাথলিক ধর্মোপদেশ ধর্মপাল বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই, বলেন, পৃথিবীর সকল মানুষ এক ও অভিন্ন। সৃষ্টিতত্ত্বে মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য নেই। আকৃতি-প্রকৃতি, সুখ-দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, আহার-বিশ্রামের অনুভূতিতে সব মানুষ এক। পৃথিবীর যেকোনো দেশের অধিবাসী হোক, মানুষের একমাত্র পরিচয় সে মানুষ। সবার উপরে মানুষ সত্য -এটিই শান্তি ও সম্প্রীতির মূলমন্ত্র।
তিনি বলেন, প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসতে হবে। লোকদেরকে বাইরের বিষয়টা দেখাতে চেষ্টা না করে ভিতরের অন্তরের ভিতরটা দেখাতে হবে। রোহিঙ্গা বিষয়টি পোপকে অনেক বেদনা দিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের সাথে যে নির্মমতা করা হয়েছে তার জন্য পোপ মহোদয় ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা পাশাপাশি বসবাস করেও বসবাস করছি না। ভালোর দ্বারা মন্দকে জয় করতে চেষ্টা করতে হবে। সহিংসতা শান্তিকে বিনষ্ট করে। এজন্য সবাইকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জের ডেপুটি ডিরেক্টর শাহ্ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, যে নিজের রাগ হজম করতে পারে সেই মহান। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই যে মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসে। যেখানে শান্তি আছে সেখানে উন্নয়ন টেকসই হবে।
আন্তঃধর্মীয় আলোচনা সভার উন্মুক্ত আলোচনায় মণিপুরি সমাজকল্যাণ সমিতি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ উল্লেখ করে বলেন, সিলেট নগরীর মাছিমপুর মণিপুরি পাড়ার মন্দিরে বিশ্বকবির আগমনের ইতিহাস স্মরণীয় করে রাখতে সম্প্রীতি একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। মন্দির প্রাঙ্গণে স্থাপিত ওই স্মৃতিস্তম্ভ অপসারণের জন্য গত ক’দিন ধরে প্রকাশ্যে বিবৃতি, হুমকি দিয়ে যাচ্ছে একটি সাম্প্রদায়িক চক্র। এমন হুমকির পর ওখানের বাসিন্দারা সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আতংকিত ও উদ্বিগ্ন।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, কোন ধর্মীয় প্রার্থনালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত ওই প্রার্থনালয়ের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে এমন প্রকাশ্য হুমকি, অপ-তৎপরতা কি কোন ধর্ম সমর্থন করে? এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তঃধর্মীয় আলোচনা সভার আলোচক পর্ষদ এর নিন্দা জানান।
তারা বলেন, কারো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন হস্তক্ষেপ কোন ধর্মই সমর্থন করেনা। এ ব্যাপারে প্রশাসন তথা সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন সিলেটে আন্তঃধর্মীয় আলোচনা সভা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ফাদার স্ট্যানিসলাউস গমেজ বলেন, আন্তঃধর্মীয় আলোচনা সভার মূলসুর ‘উন্মুক্ত হৃদয় আনে শান্তি ও সম্প্রীতি’ বিভিন্ন ধর্মের আলোচকবৃন্দের সনির্বন্ধ ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মধ্যদিয়ে বৈচিত্র্যের মাঝে ঐকতান তথা সম্প্রীতির বার্তা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
পিউস নানোয়ারের পরিচালনায় দুপুর ১টায় আন্তঃধর্মীয় আলোচনা সভা সমাপ্ত হয়। অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যাশা এরকম সংলাপের আয়োজন যেন নিয়মিত করা ।
আরবি. আরপি. ২৫ জুন, ২০১৮