শিরোনাম :
বেদখলে ওরাঁও আদিবাসীদের জমি
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ২নং রাণীপুকুর ইউনিয়নের পাচ্চাপাড়ার আদিবাসী পাঞ্জা কেরকেটা (৫৫) বলেন, `ডেন্ডেরেন লহয় নেয়ে দিশুম আলেয়া হোতা (খালি বাঙালির নয়, এ দেশ আমাদেরও)। আলে জিটদা আলে (আমরা বাঁচতে চাই)। পাঁচ বছর আগে তার ৪ একর জমি ছিল। স্বার্থান্বেষী মহল ৩ একর জমি দখল করে নেয়।
চন্দ্র কেরকেটা (৬২) বয়সের ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছেন। তার এক একর জমি সাত বছর আগে অন্য লোক দখল করেছে। জমি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কাজ হচ্ছে না।
রংপুর মহানগর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিঠাপুকুর উপজেলার ২নং রাণীপুকুর ইউনিয়ন পাচ্চাপাড়া গ্রাম। এই গ্রামে আদিবাসী ওরাঁওদের ৮৫টি পরিবার বসবাস করছে। ওরাঁওদের জমি ধীরে ধীরে দখল হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন জমি হারিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে এই আদিবাসীরা। হাতে গোনা দু-একজনের নিজস্ব জমিজমা আছে।
টকিল কেরকেটা (৪৮) ও বুলবুলি টুপ্পু (৩২) প্রতিবন্ধী ছেলেকে জীর্ণ ঘরের সামনে রেখে কাজে যান। এই পরিবারেরও রয়েছে জমি হারানোর কাহিনী- জানান প্রতিবেশীরা। জিডা কেরকেটা ১৫ শতক জমি বেদখল হয়ে যায়। এখন তিনি অন্যের জমিতে থাকেন।
ভূমি আইনের ১৯৫০ সালের অনুচ্ছেদ ৯৭ এর (১) ধারায় বলা আছে, একজন আদিবাসী তার জাতি গোষ্ঠী ব্যতীত অন্য কোন জাতি গোষ্ঠীর কাছে জমি হস্তান্তর করতে পারবে না। ধারা (২)-এ বলা আছে, যদি কেউ অন্য জাতি গোষ্ঠীর কাছে জমি বিক্রি করতে চায় তবে ভূমি অফিসে আবেদন করে অনুমতি সাপেক্ষে হস্তান্তর করতে পারবে।
অপরদিকে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালায় ২০০১ আদিবাসীদের ভূমি অধিকার বিষয়টি উপজাতীয় সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী উপজাতীয় সম্প্রদায়গুলোকে প্রচলিত আইন মোতাবেক ভূমির অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।
আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন রংপুরের আদিবাসী নেতা যুগেশ ত্রিপুরা। তিনি জানান, দখলবাজরা কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের প্রশ্রয়ে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হলে আদিবাসীদের আরো সোচ্চার হাতে হবে। তিনি আইনের যথাযথ প্রয়োগের কথাও বলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদ বলেন, ভূমি দখল নিয়ে কেউ কোনো দিন অভিযোগ করেননি। আর যদি মামলা হয়ে থাকে তাহলে বিরোধপূর্ণ জমির প্রকৃত মালিক কে আদালতই নির্ধারণ করবে।
আরবি.এসকে. ৩ জুলাই ২০১৮