ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট উদ্বোধন করা হলো ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাইট...

উদ্বোধন করা হলো ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাইট অফিস

0
423

ডিসিনিউজ: মেজর জেনারেল (অব:) জন গমেজকে ঢাকা ক্রেডিটের ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতালের সিইও হিসেবে নিয়োগের পর এখন উদ্বোধন করা হলো তাঁর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাইট অফিস। তিনটি অফিস রুম, বারান্দা ও কিচেন-বাথরুমসহ মোট ১ হাজার ৩৬০ স্কয়ার ফুটের সেমিপাকা এই অফিস নির্মাণ করা হয়েছে হাসপাতাল নির্মানের প্রস্তাবিত ২২ বিঘার একপার্শে।

৪ আগস্ট শনিবার ফিতা কেটে অফিস উদ্বোধন করেন সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, হাসপাতাল প্রকল্পের সিইও মেজর জেনারেল (অব:) জন গমেজ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সমিতির সকল কর্মকর্তা, মঠবাড়ি কাথলিক মিশনের পুরোহিত উজ্জ্বল রোজারিও, মঠবাড়িতে জেজুইট সম্প্রদায়ের ফাদারদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নবজ্যোতির পরিচালক ফাদার সৃজন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশে সেবাদানকারী কোরিয়ান সেবিকা সিস্টার, স্থানীয় ডাক্তার ও গুণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার অফিস উদ্বোধন করার মাধ্যমে ৩০০ শষ্যার এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হলো। ফিতা কেটে সবাই অফিস রুমে প্রবেশ করার পর ফদার উজ্জ্বল রোজারিও’র প্রার্থনা ও পবিত্রজল সিঞ্চনের মাধ্যমে অফিস পবিত্রকরণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সমিতির সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।

বক্তব্যপর্বে সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত উপস্থাপন করে বলেন, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের রাষ্ট্রায়াত্ত হওয়ার পর খ্রিষ্টের সাক্ষ্য প্রতিফলনের এক বিরাট শুন্যতার সৃষ্টি হয় খ্রিষ্টান সমাজে। মূলত সেই তাগিদ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট বলেন, সমিতির সাথে বাংলাদেশ কাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু প্যাট্রিক ডি’রোজারিওর দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অতি প্রথম ২০১৪ সালে মোহম্মদপুরের আসাদগেটে চার্চের ১০ কাঠা জমিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সরকারি অনুমোদনের সমস্যার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরে গাজীপুরের মঠবাড়িতে এই জায়গা ক্রয় করে হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ‘ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল’ নাম দেওয়ার ব্যাপারে তিনি কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও’র কথা স্মরণ করেন।

প্রেসিডেন্ট গমেজ বলেন, ‘আমাদের সমাজের ছেলেমেয়েরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিকেল পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না, প্রাইভেট মেডিকেলে পড়তে গেলে অতিরিক্ত খরচ; তাই তারা মেধাশুন্য হতে চলেছে। এসব বিবেচনায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এসবের মাধ্যমে খ্রিষ্টানদের সেবার ঐতিহ্য ধরে রাখা যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পর্যায়ক্রমে একাধিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অভিজ্ঞতায়পূর্ণ মেজর জেনারেল (অব:) জন গমেজের নিয়োগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট। তিনি ফিলিপাইনে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে তাঁকে এই দায়িত্ব নিতে কনভিন্স করেন বলে উল্লেখ করেন। আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজ থেকে আগামী ১০ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ডাক্তার যেন হতে পারে সেই আশা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। ’ তিনি চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করেন।

হাসপাতাল প্রকল্পের সিইও মেজর জেনারেল (অব:) জন গমেজ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা হলি ক্রস সম্প্রদায়ের ফাদার চার্লস জে ইয়াংকে স্মরণ করেন ও সমিতির বর্তমান বোর্ডকে ধন্যবাদ দিয়ে হাসপাতালের ওপর সংক্ষিপ্ত বিবরন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আইকোনিক হলি ফ্যামিলির দর্শণ এই হাসপাতালের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। হাসপাতাল শুধু মানুষের দৈহিক সেবাই দিবে না, সেবার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক সেবার প্রতীক হয়ে কাজ করবে এই হাসপাতাল। তিনি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার নানা প্রক্রিয়া, বিভিন্ন নির্মান কম্পানীর সাথে প্রক্রিয়া, সরকারি প্রশাসনিক অনুমোদন প্রক্রিয়ার জন্য সরকারের নানা দপ্তরে কার্যক্রম, ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন। ঢাকায় ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত, গাজীপুর জেলার সরকারি প্রশাসনের সমর্থনসহ বিভিন্ন মন্ডলীর আকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে এই মহৎ কাজে, বলে উল্লেখ করেন তিনি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও তিনি এই মহৎ কাজের সমর্থন জানান।

প্রকল্পের সিইও জন গমেজ জানান, এই প্রকল্প সম্পন্ন হতে তিন বছর সময় লাগবে। ২০২১ সাল নাগাদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি এ-ও জানান যে, প্রস্তাবিত মোট ৩ লক্ষ স্কয়ার ফুটের স্থানের মধ্যে হাসপাতাল তৈরিতে প্রায় দেড় লক্ষ স্কয়ার ফুট স্থান লাগবে। হাসপাতালের নানা সুবিধার কথা আকর্ষণীয়ভাবে উল্লেখ করেন তিনি।

আধ্যাত্মিকতার সুরে ফাদার উজ্জ্বল রোজারিও বলেন, যিশু স্বর্গে যাবার আগে তাঁর শিষ্যদের বাণী প্রচারের কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেন, সমিতির দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি যে স্বাস্থ্যসেবার কাজের উদ্যোগ নিয়েছে তা খ্রিষ্টের সাক্ষ্যেরই প্রতিফলন। এই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সমিতিকে এগিয়ে যাবার আহবান জানান তিনি। একই দর্শন নিয়ে ফাদার সৃজন বলেন, ‘জমি কেনার পর থেকে উন্নয়ন দেখে যাচ্ছি। সময়ের প্রয়োজনেই সমিতিকে সমাজসেবার নানা কল্যাণে কাজ করতে হচ্ছে। চার্চের পাশাপাশি সমিতি যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার।’

এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কর্নেল যোসেফ অনিল রোজারিও, কারিতাস বাংলাদেশের সহকারী পরিচালক রঞ্জন ফ্রান্সিস রোজারিও, মঠবাড়ি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান রবার্ট পংকজ গমেজ, মঠবাড়ি অঞ্চলের স্থানীয় ডাক্তার শচীন চন্দ্র দত্ত, ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের পরিচালক পাপিয়া রিবেরু। তাঁরা সবাই সংশ্লিষ্ট উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ভাল কাজে নানাবিধ বাধা আসবে। তা অভারকাম করাই বিজ্ঞতার পরিচয়।

অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জানান সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিষদের পরিচালক রূপন পিউরীফিকেশন এবং শেষ প্রার্থনা করেন ফাদার সৃজন। পরে সবাই হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাবিত স্থানের সন্নিকইে ঢাকা ক্রেডিট রিসোর্ট এ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল প্রকল্পের ওপর অগ্রগতির প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

পরে বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার খ্রীষ্টফার অধিকারী (যাঁকে সম্প্রতি ঢাকা ক্রেডিট রিসোর্ট ও ট্রেনিং সেন্টারের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে) রিসোর্ট এ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের ওপর থ্রিডি এনিমেশন উপস্থাপন ও বর্ণনা করেন। তাতে ওই সেন্টারের বিভিন্ন প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর আশু বাস্তবায়ন, সেগুলোর ব্যবহার ও আয়ের কল্পচিত্রেরই প্রতিফলন ঘটে।

আরপি/আরবি/০৪আগস্ট২০১৮