শিরোনাম :
শুয়ে রইলেন মাটির ঘরে : স্বর্গীয় পিটার গোমেজ
অবশেষে মাটির ঘরে স্থান করে নিলেন পিটার গোমেজ। পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার শেষে পাদ্রীশিবপুর নিজ ধর্মপল্লীতে তিনি শুয়ে রইলেন চিরশান্তিতে।
২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় খ্রিষ্টযাগ শেষে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি চলে গেলেও রেখে গেলেন অসংখ্য ভালবাসার মানুষ।
ফাদার বরুন গোমেজ এবং ফাদার মৃণাল মারাকের খ্রিষ্টযাগের পরই নিজ জন্মভূমির মাটিতে পিটার গোমেজকে চিরবিদায় দেন পরিবার, আত্মীস্বজন এবং তাঁর গুণগ্রাহীরা।
সমাধি গহবরে তাঁর মৃতদেহ নামানোর পূর্বে অশ্রুসিক্ত হয়ে ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ বলেন, ‘আমরা আজ পিটার গোমেজের নিথর দেহ রেখে যাচ্ছি, কিন্তু সাথে নিয়ে যাচ্ছি তাঁর অনুপ্রেরণা। পিটার গোমেজ ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান এবং কর্তব্যপরায়ন ব্যক্তিত্ব। তাঁর স্থান হয়তো কেউ পূরণ করতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর অনুপ্রেরণায় আমরা অনেক কিছু করতে পারবো। আমরা তাঁর আত্মার চিরকল্যাণ কামনা করি।’
এ সময় পিটার গোমেজের স্ত্রী মেরি এ. গোমেজ এবং অন্যান্যরা তাঁর স্মৃতিচারণ করেন।
পিটার গোমেজের সমাধির পরে ঢাকা ক্রেডিট, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:, পাদ্রীশিবপুর খ্রিষ্টান ওয়েলফেয়ার, পাদ্রীশিবপুর ছাত্র সংগঠনসহ অসংখ্য সংগঠন এবং ব্যক্তি তাঁর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও চার্চে পিটার গোমেজকে শেষবারের মতো এক নজর দেখা এবং তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনায় হাজারো মানুষ জড়ো হন।
তেজগাঁয়ের সহকারী ফাদার রিপন গমেজ তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন।
খ্রিষ্টযাগের শেষে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরা কী হারিয়েছি, তা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি। পিটার গোমেজ নিজের কাজ, ব্যবহার এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের প্রিয় হয়ে ছিলেন। তিনি একাধারে আমাদের সহকর্মী, অন্যদিকে ছিলেন একজন আদর্শ অভিভাবক। তাঁর বিদায়ের শূন্যতা আমাদের প্রতিটা মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয়। তিনি নেই, কিন্তু বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায়।’
অন্য একজন খ্রিষ্টভক্ত যোসেফ রোজারিও স্মৃতিচারণে বলেন, ‘আমরা পিটার গোমেজের মৃতদেহ পাদ্রীশিবপুর নিয়ে যাব। সেখান থেকে আমরা ফিরে আসবো, কিন্তু পিটার গোমেজ আর ফিরবেন না। তিনি ফিরে আসবেন আমাদের স্মৃতিতে বার বার।’
খ্রিষ্টযাগের শেষে তাঁকে শেষ বিদায় ও শ্রদ্ধা জানায় সমাজের সুধীজনেরা, বিভিন্ন সংগঠন এবং অঙ্গসংগঠন।
এ সময় ঢাকা ক্রেডিট, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, পাদ্রীশিবপুর ক্রেডিট, পাদ্রীশিবপুর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:, মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, ঢাকা ক্রেডিট কর্মী ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, পাদ্রীশিবপুর ছাত্র সংগঠনসহ অসংখ্য সংগঠন এবং অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পিটার গোমেজকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এ দিন খ্রিষ্টযাগের পর পিটার গোমেজর মৃত্যুদেহ পাদ্রীশিবপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাঁর শেষ বিদায়ের সফরসঙ্গী ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, বোর্ড অব ডিরেক্টর পিটার রতন কোড়াইয়া, আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, সিও সুদান গাইনসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী।
উল্লেখ্য, পিটার গোমেজ ঢাকার তেজকুনিপাড়ার বাসায় আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
২৪ সেপ্টেম্বর ভোররাতে তিনি মারা যান। মৃত্যর পূর্বে তিনি হার্টের সমস্যায় সামান্য আক্রান্ত হন।
পিটার গোমেজ ছিলেন সমাজের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ। শান্ত মনের মানুষ পিটার গোমেজ দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সমাজসেবায় অবদান রেখে যাচ্ছিলেন। ঢাকা ক্রেডিটের সাথে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি পাদ্রীশিবপুর খ্রিষ্টান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা, পাদ্রীশিবপুর খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ওয়েল ফেয়ারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় ১৫ বছর এবং পাদ্রীশিবপুর ক্রেডিটের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
বরিশাল জেলার পাদ্রীশিবপুরে (পশ্চিম) পিতা মিলাত গোমজ এবং মাতা মেলগেরিনা গোমেজের কোল জুড়ে ৭ জুলাই ১৯৪৮ সালে পিটার গোমেজের জন্ম। পাঁচ ভাই এবং এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী মেরি এ. গোমেজ এবং তিন মেয়ে রেখে গেছেন।
আরবি.এসজি. ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮