শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর পিটার গোমেজের কল্যাণার্থে ‘শোক ও স্মরণসভা’
ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির ডিরেক্টর পিটার গোমেজের স্মরণার্থে এক শোক ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা ক্রেডিট ২ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় সমিতির তেজগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়ে সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের সভাপতিত্বে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন পিটার গোমেজের স্ত্রী-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, ঢাকা ক্রেডিটসহ বিভিন্ন ক্রেডিট ইউনিয়ন ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মাকুর্জ গমেজ বলেন, ‘স্বর্র্গীয় পিটার গোমেজ আমাদের বোর্ডে একজন অভিবাভকের মতো কাজ করেছেন। ঢাকা ক্রেডিটের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। যদিও তিনি বয়সে বড়, আমাদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো।’
‘পিটার গোমেজ তাঁর ট্যালেন্ট, টাইম, ট্রেজার সমাজের এবং ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়নে জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু পরিবারকে বঞ্চিত করে নয়’ বলেন প্রেসিডেন্ট গমেজ।
‘পিটার গোমেজ আমার চেয়ে অনেক বড় হলেও তিনি আমাকে সম্মান করতেন। তিনি বলতেন ‘আমি আপনার অবস্থানকে সম্মান করি।’ বলে উল্লেখ করেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ।
তিনি বলেন, পিটার গোমেজ সবোর্চ্চ নিরপেক্ষতার মধ্যদিয়ে কাজ করে গেছেন ঢাকা ক্রেডিটে।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও পরলোকগত পিটার গোমেজ সম্বন্ধে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘২০০২ সালে সবোর্চ্চ জনপ্রিয়তার কারণে স্বতন্ত্র নির্বাচনের মাধ্যামে ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে প্রবেশ করেন। তিনি অত্যন্ত সৎ, নির্ভরযোগ্য এবং সাদা মনের মানুষ ছিলেন। যেকোনো অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। পিটার গোমেজ একজন ভালো কাথলিক ছিলেন, তিনি পদের চেয়ে কাজকে বেশি গুরুত্ব দিতেন।’
পিটার গমেজের স্ত্রী মেরী আঞ্জেলীনা গোমেজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৮৪ সালে বিয়ের পর থেকে কখনো আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হয়নি। সে ছিল সৎ, পরিশ্রমী, সেচ্ছাসেবী, উদ্যোগী মানুষ। মানুষকে সর্বদা সাহায্য-সহযোগিতা করতে এগিয়ে যেতো। অনেক বিচ্ছেদ পরিবারের মিলন ঘটিয়েছেন তিনি। সন্তানদেরকে অনেক ভালবাসতো। আমি তাঁর কাছ থেকে তবলা বাজানো, রান্না করা, গান করা শিখেছি। তাঁর পড়শোনার তুলনায়, জ্ঞান ছিল অনেক বেশি। তিনি যে মানুষকে ভালবাসতেন, তার প্রমাণ আমি দেখতে পেয়েছি তেজগাঁও এবং পাদ্রীশিবপুর গির্জায় শেষকৃত্যে মানুষের জোয়ার দেখে।’
পাদ্রীশিবপুর ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান যোসেফ পি. রোজারিও বলেন, ‘পিটার গোমেজের হাত ধরেই আমরা সভা পরিচালনা করতে শিখেছি। তিনি শুধু আমার নয়, অনেকেরই আদর্শ। তিনি রসিক এবং বন্ধু-বৎসল মানুষ ছিলেন। পিটার গোমেজ পাদ্রীশিবপুরের সকলের বাড়ি চিনতেন। তার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না।’
স্মরণসভায় অন্যান্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন দি মেট্রোপলিটান কো-আপরেটিভ হাউজিং সোসাইটির ভাইস-চেয়ারম্যান অনিল লিও কস্তা, সমিতির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, ঢাকা খ্রীষ্টান বহুমুখী ক্রেডিটের চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার, বর্ণালী ক্রেডিটের চেয়ারম্যান তাপস সরকার, ঢাকা ক্রেডিটের সিও জোনাস গমেজ এবং পাদ্রীশিবপুর ক্রেডিটের পক্ষে সিলভেস্টার গোমেজ।
ঢাকা ক্রেডিটের কর্মী রিচার্ড ফ্রান্সিস রোজারিও’র বাইবেল পাঠ ও সমিতির সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরার প্রার্থনার মাধ্যমে স্মরণসভা শুরু এবং ডিরেক্টর পাপিয়া রিবেরুর প্রার্থনার মাধ্যমে সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে গান পরিচালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের কর্মী চম্পা মনিকা গমেজ।
শেষে ধন্যবাদ বক্তব্য দেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ। ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষে তিনি স্বর্গীয় পিটার গোমেজের পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ^াস প্রদান করেন।
স্মরণসভা সঞ্চলনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।
পিটার গোমেজের শেষকৃত্যে সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতার জন্য তাঁর সহধর্মিনী মেরী আঞ্জেলীনা গোমেজ ঢাকা ক্রেডিটকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য যে, ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে ডিরেক্টর পিটার গোমেজ ঢাকার তেজকুনীপাড়া বাসায় হার্টের সমস্যাজনিত কারণে আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে কর্মীদের শেষবার একনজর দেখার জন্য তার মৃতদেহ ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়, পরে বিকেল ৫টায় তেজগাঁও চার্চে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁর মৃতদেহ পাদ্রীশিবপুর নিয়ে যাওয়া হয় এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিজ ধর্মপল্লীতে খ্রিষ্টযাগের পর সমাহিত করা হয়।
ডিসিনিউজ/আরবি.এইচআর. আরপি. ২ অক্টোবর ২০১৮