শিরোনাম :
বাংলা ব্যান্ডের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই!
বাংলা ব্যান্ড জগতের শূণ্যতা সৃষ্টি করে চলে গেলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু! তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্কয়ার হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মো. নাজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আইয়ুব বাচ্চুকে অসুস্থাবস্থায় তার গাড়িচালক সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তখনই আমরা ধারণা করেছিলাম যে তিনি হয়তো মারা গেছেন। কারণ তখনই তার মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছিলো। তবু আমাদের ডাক্তারদের একটি বিশেষজ্ঞ দল তার দেখাশোনা করে এবং সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সৌজন্যে : এশিয়ান টিভি
বাচ্চু দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় ভুগছিলেন জানিয়ে ডা. নাজিম বলেন, তার হার্টের কার্যক্ষমতা ছিলো ৩০ শতাংশ। সর্বশেষ তিনি গত সপ্তাহে স্কয়ার হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন। এর আগে ২০০৯ সালে তিনি হার্টে রিং পরিচেয়ছিলেন। এখন তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবরে স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে গেছেন তার শুভানুধ্যায়ী ও ভক্ত-অনুসারীরা। তার সংগীতাঙ্গনের সহকর্মীদের মধ্যে হাসপাতালে দেখা গেছে কুমার বিশ্বজিৎ, ফাহমিদা নবী, কবির বকুল, এলিটা করিমকে। দেখা গেছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ শোবিজ অঙ্গনের অনেককেও।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম আইয়ুব বাচ্চুর। শৈশব থেকেই তিনি গান শুনতেন প্রচুর। একসময় নিজেও গাইতে শুরু করেন। এরপর শুরু করেন গিটার চর্চাও। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নামে একটা ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন, পরে অবশ্য এর নাম পাল্টে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাট নানা অনুষ্ঠানে তাদের এই ব্যান্ডদল গান করতো।
পরে বন্ধুরা যে যার মতো একেক দিকে ছড়িয়ে পড়লেও আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ডদল ‘ফিলিংস’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন ‘সোলস’ ব্যান্ডে। এই ব্যান্ডের লিডগিটার বাজানোর দায়িত্বে ছিলেন টানা ১০ বছর। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘এলআরবি’।
বাংলা ব্যান্ডের জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন আইয়ুব বাচ্চু মঞ্চ পারফরম্যান্সে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। শ্রোতা-ভক্তদের কাছে ‘এবি’ নামে পরিচিত এই গুণীশিল্পীর ডাকনাম রবিন। মূলত রক ধাঁচের কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি গেয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধতায় ভাসিয়েছেন ‘এবি’।
আইয়ুব বাচ্চুর অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে’, ‘এক আকাশের তারা তুই একা গুনিসনি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো, ‘এই রূপালি গিটার ফেলে একদিন…’। এসব গান বছরের পর বছর ধরে দর্শকশ্রোতাদের মুখে মুখে।
তার একক অ্যালবামের মধ্যে- রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), একা (১৯৯৯), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এলআরবি ব্যান্ডের অ্যালবামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জীবনের গল্প (২০১৫), ফেরারী মন (১৯৯৬)।
কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর জীবনাবসানে শোকের ছায়া নেমেছে শোবিজ অঙ্গনে। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমেও তার স্মৃতিচারণ করে প্রয়াত এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভক্ত-অনুসারীরা।
সেই সাথে শোক জানিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ ও সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা!