শিরোনাম :
ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা সিএসসি’র মহাপ্রয়াণের প্রথম বছর
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’র প্রাক্তন উপাচার্য (ইনচার্জ) ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা সিএসসি’র ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৩ অক্টোবর সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘শোক ও স্মরণসভা’র আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র চেয়ারম্যান ফাদার জেমস ক্রুজ সিএসসি, উপাচার্য ফাদার প্যাট্রিক ড্যানিয়েল গ্যাফনি সিএসসি, রেজিস্ট্রার ফাদার আদম এস. পেরেরা সিএসসি, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র সদস্য, ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা সিএসসি’র স্বজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্টাফবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের লেকচারার ড. ফাদার লেনার্ড সংকর রোজারিও, সিএসসি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, সিএসসি-এর আত্মার চিরশান্তি কামনা করে প্রার্থনা করেন ফাদার পাস্কাল সরকার, সিএসসি। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান ফাদার জেমস ক্রুজ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। ফাদার বেঞ্জামিনের প্রতীকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য-রেজিস্ট্রার ও প্রফেসর ড. পরিমল চন্দ্র দত্ত এবং প্রফেসর ড. অলক কুমার চক্রবর্তী।
স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে ফাদার জেমস ক্রুজ বলেন, শিক্ষা জগতের আলোকিত ব্যক্তিত্ব ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা সিএসসি। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তাঁর মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশের শিক্ষা জগৎ, দেশ, সমাজ, ম-লী ও হলি ক্রস যাজক সম্প্রদায়ের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ফাদার আদম ফাদার বেঞ্জামিনের সাথে দীর্ঘ ৪৬টি বছর কাটিয়েছেন। সুদীর্ঘ জীবনের নানা ঘটনা ও তাঁর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা সহভাগিতা করে তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসাবে ফাদার বেঞ্জামিন খুবই সহজ-সরল ও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত, খুবই কর্মঠ ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। কাজের প্রতি তার একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা বিষয়ে বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। তিনি ছিলেন বাংলা, ইংরেজি ও ল্যাটিন ভাষায় সমান পারদর্শী।
অনুষ্ঠানে প্যাট্রিক ডি কস্তা, ফাদার জে.এস. পিশাতো সিএসসি, প্রফেসর ড. অলক কুমার চক্রবর্তী, অর্পণ কস্তা প্রমুখ ফাদার বেঞ্জামিন কস্তার বর্ণিল জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।
শেষে উপাচার্য প্রফেসর ড. ফাদার প্যাট্রিক ড্যানিয়েল গ্যাফনি সিএসসি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
হলি ক্রস যাজক সংঘ ও শিক্ষাজগতে এক আলোকিত ব্যক্তিত্ব ও উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা সিএসসি। তিনি ছিলেন একাধারে যাজক, শিক্ষক, অনুবাদক ও সফল উদ্যোক্তা। বহুগুণের অধিকারী ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা তাঁর মেধা ও পা-িত্য দিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘অভিভাবক’ মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন নটর ডেম কলেজ, ঢাকা; নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, ই-িয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র; খ্রিস্টরাজা সেমিনারী, করাচি, পাকিস্তান; শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় (এমএ), যুক্তরাষ্ট্র; জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় (ভাষাতত্ত্ব কোর্স), ওয়াশিংটনে।
৭ জানুয়ারি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে করাচিতে তিনি যাজক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং তৎকালীন অধ্যক্ষ ফাদার জিমারম্যান তাঁকে “কয়েক মাসের জন্য” ফাদার গেডার্টের সহকারী হিসাবে কাজ করার জন্য গাজীপুরের নাগরী মিশনে পাঠিয়ে দেন। খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ব্রতীয় জীবন বেছে নিলেও তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের দেখাশুনা ও আহতদের সেবা শুশ্রুষা করার মধ্য দিয়ে। কালের পরিক্রমায় তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন আদর্শ শিক্ষাবিদ হিসেবে।
জীবদ্দশায় ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা সিএসসি ছিলেন শান্তির দূত, সম্প্রীতির ধারক ও বাহক। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। তন্মধ্যে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে জনকল্যাণ, সুস্থ্য ও সুন্দর জীবন গঠনে সাহসী, প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসনীয় ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের ১০৫তম জন্মোৎসব উপলক্ষে প্রণব মঠের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ঢাকা আর্চডায়োসিসের শিক্ষা কমিশন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে গুণীজন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করে।
“তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ, তাই তব জীবনের রথ কীর্তিরে পশ্চাতে ফেলিয়া যায় বারংবার।” কবির এই কথাগুলোর জ্বলন্ত প্রমাণ ফাদার বেঞ্জামিন কস্তা, সিএসসি। তাঁর জীবনে তিনি সমস্ত মোহ, মায়ার হাতছানি উপেক্ষা করে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে আমাদের করে গেছেন চিরঋণী।
ডিসিনিউজ/আরবি.এনএম. ১৯ অক্টোবর ২০১৮