শিরোনাম :
ফুলছড়ায় গারোদের ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা
গারো (মান্দি) আদিবাসীদের সুদীর্ঘ দিনের লালিত জাতীয় সম্পদ ও জুম চাষের সঙ্গের সম্পৃক্ত সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠান সর্বশেষ এবং সর্ববৃহৎ ‘ওয়ানগালা’।
প্রাচীনকালে মান্দিরা তাদের সৃষ্ঠিকর্তা মিসি সালজং দেবতার নামে তাদের উৎপাদিত ফসলের কিছু অংশ নৈবেদ্যরুপে উৎসর্গ করতেন।
একসময় ছিল অনন্য আনন্দ উদযাপনের দিন, সার্বজনীন মিলন মহোৎসবের দিন। সারা বছরের কর্মক্লান্ত, অবসাদগ্রস্হ দেহমন এই উৎসবের অপেক্ষার উন্মুক্ত হয়ে থাকতো।
হারিয়ে যাওয়া এই উৎসবকে ধরে রাখার লক্ষে শ্রীচুক গারো যুব সংগঠন ও শ্রীমঙ্গল গারো মাতব্বর সমন্বয়ে মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল ফুলছড়া গারো লাইনে ১০-১১ নভেম্বর দুইদিন ব্যাপী ওয়ানগালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় আগমন শুভেচ্ছার মধ্যদিয়ে গারো ভাষায় ছোট জপমালা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ওয়ানগালার ১ম দিন শুরু হয়।
রাতে বিভিন্ন এলাকার মাতব্বর ও সবার উপস্হিতিতে আগামী ২০১৯ সালের ওয়ানগালা মিরতিঙ্গা চা বাগানে অনুষ্ঠিত হবে বলে সম্মতি জানায়। এরপরই গারো শিল্পীরা নিজেদের কৃষ্ঠি সংস্কৃতি ঐতিহ্যগুলো নাচ, গানের মধ্য দিয়ে তুলে ধরে।
রবিবার প্রথমেই এবছরের ও আগামী ২০১৯ সালের নকমাকে গারোদের সবোর্চ্চ সন্মানের প্রতীক কুটুপ পড়ানো হয়। ওয়ানগালা উৎসবের তাৎপর্য্য বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন শ্রীমঙ্গল ধর্মপল্লীর সহকারী ফাদার দিগন্ত চাম্বুগং সিএসসি।
ওয়ানগালাই সম্পূর্ণ গারো ভাষাই মহাখ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করেন ঢাকা থেকে ফাদার পংকজ নকরেক সিএসসি। সহযোগীতা করেন শ্রীমঙ্গল ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ফাদার নিকোলাস বাড়ৈ সিএসসি, ফাদার যোসেফ গনছালবেজ সিএসসি। খ্রীষ্টযাগের শুরুতেই বেদির পাশে তৈরিকৃত পবিত্র ক্রুশে মালোদান ও কুটুপ পড়ানো হয়। সেই সাথে উৎপাদিত প্রথম ফসলগুলো ক্রুশের নিচে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। গারোদের তেরোটি গোষ্ঠির উদ্দেশ্যে মুসিবাতি প্রজ্জলন করা হয়।
এ ছাড়াও ওয়ানগালার মূল অনুষ্ঠানের অংশ টক্কা, রুগালা, সাসাতসুআ (ধূপ পুড়ানো) ও উৎপাদিত ফসল আশির্বাদ প্রদান হয় খ্রীষ্টযাগে।
মিসি সালজংয়ের উদ্দেশ্যে আমুয়া অনুষ্ঠান উৎসর্গ করেন খামাল জনসন মৃ। মুরুগ বলি দিয়ে ফুলছড়ার রাশি দেখে বলেন মুরুগটি খাবার পরিপূর্ণ ছিল তাই এখানে অভাব হবেনা সে সাথে আরো বলেন এই রকম আরো অনেক মুরুগ বলি দিয়েছি কিন্তুু এত রক্ত পড়ে নাই, তবে এখানে এই বলিতে অনেক রক্ত পড়েছে তাই ভাগ্য ভবিষ্যত ভালো সম্ভাবনা আশির্বাদপূর্ণ রয়েছে। এছাড়াও তিনি আহব্বান করেন এই ওয়ানগালা উৎসবটি যাতে সবসময় ধরে রাখি।
শ্রীমঙ্গল মাতব্বর এসোসিয়েশনের সভাপতি ক্ষিতিশ আরেং বলেন, খ্রীষ্টমন্ডলীতে ওয়ানগালা একটি বড় উৎসব হয়ে দাঁরিয়েছে। নিজ ভাষাই কথা বলা নিজেদের পরিচয় বহন করার একটি বড় ভুমিকা পালন করে।
বিদ্যাবিল চা বাগান থেকে আসা ফ্লেলিক্স আশাক্রা বলেন, অতীতে সাংসারেক ছিলাম বর্তমানে খ্রীষ্টান। তাই নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ধরে রাখার জন্য ওয়ানগালা ভালো উদ্যোগ এবং এবারো অনেক ভালো হয়েছে।
এবছরের নকমা গঙ্গা রিছিল বলেন, ২০১৮ সালের ওয়ানগালা বিলাসছড়া চা বাগানে হওয়ার কথা ছিল কিন্তুু চা বাগানের কৃর্তপক্ষের অনুমুতি না পাওয়াই এই ফুলছড়া চা বাগানে অনুষ্ঠিত হলো।
বিকালে গারো শিল্পীদের নিয়ে ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।