শিরোনাম :
রাজধানীর বনানীতে গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা উৎসব
২৩ নভেম্বর (শুক্রবার) রাজধানী বনানীর সিটি কর্পোরেশন খেলার মাঠে গারোদের ওয়ানগালা উৎসব পালিত হয়।
সকাল সাড়ে ৮টায় শোভাযাত্রর মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আরো ছিল গুনী সংবর্ধনা, জুমনৃত্য ও আলোচনা সভা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর মীজানুর রহমান বলেন, ‘এ দেশে আমাদের আদি পুরুষ ছিলেন আদিবাসী। যার স্থানভেদে আলাদা বিশ্বাস ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে বিভিন্নভাবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বিভিন্ন ধরন। একটা সমাজ, একটা দেশ কতটা সভ্য, কতটা মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন অথবা কতটা সমৃদ্ধ ও আধুনিক তা নির্ভর করে যেখানে তার দুর্বল, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ কতটা নিরাপদ, কতটা সমৃদ্ধ এবং তারা কতটা ভাল আছে তার উপর।’
তিনি বলেন, ‘কিছু আদিবাসী কোঠার অওতায় এনে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা বা চাকরী দিলেই তাদের উন্নতি হবে না। এতে হয় তো একটি পরিবারের উন্নতি হবে। কিন্তু এই আদিবসীদের উন্নতি করতে হলে ওই সকল প্রত্যন্ত এলাকায় পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষা ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করলে তবেই তাদের উন্নতি হবে। সকলের উন্নতির ব্যবস্থা করলে তবেই আমরা উন্নত জাতি হব।’
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘কোনো উৎসব শুধু পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং এর মাধ্যমে মিলন ও ভ্রাতৃত্ব আরো গভীর হয়। আমরা আদিবাসী ও বাঙালি মিলে মিশে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।’
তিনি বলেন, এই কৃষ্টি যাতে পরবর্তী প্রজন্ম ধারন ও চর্চা করতে পারে তার জন্য আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
ওয়ানগালা গারোদের অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। গারোদের বিশ্বাস, দেবদেবীর অনুগ্রহ ও আর্শীবাদ ছাড়া কৃষিজাত ফসলের ভালো ফলন হয় না। তাই জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে, দেবদেবীর আর্শিবাদ প্রাপ্তির জন্য কৃষিবর্ষ চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে দেবদেবীর উদ্দেশে গারো জনগোষ্ঠী কৃষিব বর্ষ উৎসব পালন করে থাকে। এই সমস্ত পর্ব উৎসবে ভূমির উর্বরতার দেবতা, ধন-সম্পদ ধাত্রী দেবীখাদ্য শস্যের দেবী আর গৃহ দেবতাদের শ্রদ্ধাভরে ও যথাযোগ্য মর্যাদায় পূজা-অর্চনা করা হয়।
গারো জনগোষ্ঠী মূলত খাদ্য শস্যের বীজ দানকারী দেবতা মিসি সালজংএর সম্মানে ওয়ানগালা করে থাকেন। গারোদের বিশ্বাস জগতের সৃষ্টিকর্তা তাতারা রাবুগাসমস্ত উদ্ভিদ ও শস্যাদির জীবনের ভার সূর্য দেবতা সালজংকে দিয়েছেন। সালজং দেবতার দয়া করুণার উপর নির্ভর করে ফসলের ফলন ভালো হয়। তাই তাঁর আর্শীবাদ লাভের জন্য কৃতজ্ঞতার সাথে গারো জনগোষ্ঠী ধন্যবাদ উৎসব ওয়ানগালা করে থাকেন। এ উৎসবে সালজং দেবতার সাথে শস্যের জননী রক্ষীমেমাও গৃহ দেবতাকেও সম্মান জানিয়ে পূজা-অর্চনা করা হয়। তিন দিনের এই উৎসবে আমুয়া, রুগালা, সাসাত সওয়ার মত। পবিত্র অনুষ্ঠানের সাথে আজিয়া, রেরে দরুয়া, খুরামা, সাল্লা। খাত্তবিমা আগানা প্রভৃতি গান হয়, সেরেজিং পালা হয়, বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র ও ঐতিহ্যবাহী নাচ পরিবেশনের পাশাপাশি গান-ভোজন চলে।
নকমা অনিত্য মানখিন-এর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আদিবাসী শিশুদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও ম্যাগাজিন ও আদিবাসী গানের সিডির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর মীজানুর রহমান, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ক্রেডিট কমিটির সদস্য প্রত্যেস রাংসা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, গ্রীন ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক আবুল হোসেনসহ আরো অনেকে।