ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১০ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার ভাদুন পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী: খ্রিষ্টভক্তের ভক্তিপূর্ণ কৃতজ্ঞতা!

ভাদুন পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী: খ্রিষ্টভক্তের ভক্তিপূর্ণ কৃতজ্ঞতা!

0
1106

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ভাদুন উপধর্মপল্লীকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লী রূপে স্বীকৃতি প্রদান করেন ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি। ২৩ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেল ৪টায় ভাদুন উত্তম মেষ পালক গির্জায় খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করার সময় তিনি এই স্বীকৃতি প্রদান করেন।

নতুন ধর্মপল্লী পেয়ে স্থানীয় খ্রিষ্টভক্তদের প্রতিক্রিয়ার শেষ নেই। খ্রিষ্টভক্তদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে লিখছেন ডিসিনিউজের স্থানীয় প্রতিনিধি জেফরী কার্ডোজা।

ডিসিনিউজকে মারীয়া সেনা সংঘের সভানেত্রী জ্যোৎস্না কস্তা বলেন, ‘১৯৬৯ সালে বিয়ের পরই স্বামীর সাথে ভাদুনে চলে আসি। পাড়া প্রতিবেশী সবমিলে ছিল ৭-৮টি পরিবার। একটি মাটির ঘরে (বর্তমানে ফাতেমা রানী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত) মাসে একবার খ্রিষ্টযাগ হতো। মাউসাইদ থেকে ফাদার উইলিয়াম এসে খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করতেন। মাদার অব চ্যারিটির সিষ্টারগণ এসে ধর্মক্লাস নিতেন। প্রতি সপ্তাহে ব্রাদারগণ সাইকেল যোগে নটরডেম কলেজ থেকে এসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থনা পরিচালনা করতেন। বড়দিনের সময় এই ছোট মাটির ঘর নিজ হাতে লেপে প্রস্তুতি নিতাম। পরবর্তীতে ড. ফাদার তপন ডি’রোজারিওর উদ্যোগে এই মাটির ঘরটি ভেঙ্গে নতুন করে পাকা দেয়াল এবং টিনের চাল দিয়ে স্কুলটি পুনরায় নির্মাণ করা হয়। সুধাংশু নাথান এবং স্বর্গীয় মাইকেল পালমার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এক সময় প্রতি সপ্তাহেই ব্রাদার এবং সিষ্টারদের সহযোগীতায় সেখানে প্রার্থনা হত।’

ভাদুনকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লীতে উন্নীত করায় অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক দিন থেকে চেয়েছিলাম যেন আমাদের একটি নিজস্ব গির্জা এবং ধর্মপল্লী হয়। প্রয়াত আর্চবিশপ থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলি (ধন্য শ্রেণীভুক্ত) এসে বলেছিলেন, ‘তোমরা প্রার্থনা কর, ঈশ্বর তোমাদের প্রার্থনা শুনবেন এবং তিনি চাইলে অবশ্যই ভাদুনে নিজস্ব গির্জা এবং ধর্মপল্লী হবে।’ আজ তাঁর সেই ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ হল। আর ঈশ্বরকেও ধন্যবাদ দেই আমাদের প্রার্থনা শোনার জন্য।’

দ্বীপান্নিতা সংঘের সভানেত্রী আভা কস্তা জানান, ‘১৯৮৪ সাল থেকে ভাদুনে বসবাস করে আসছি। শুরু থেকে ভাদুন মাউসাইদ ধর্মপল্লীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমাদের যদিও এখানে ফাতেমা রাণী স্কুলে খ্রিষ্টযাগ হত, তবুও আমাদের যেকোনো কাজের জন্য মাউসাইদ যেতে হত। আমাদের প্যারিস কাউন্সিলের মিটিং করার জন্য নিয়মিত মাউসাইদ যেতে হতো নদী পার হয়ে। একদিন যাওয়ার পথে সিষ্টার ইমাকুলেট নৌকায় ওঠার সময় ঘাটে পড়ে যান। সমস্ত শরীরে কাঁদা নিয়ে তিনি মিটিং করেন। মিটিং শেষে আমরা ফাদার অমল ক্রুশকে অনুরোধ করি যেন আমাদের ভাদুনকে ধর্মপল্লী করা হয়। তখন ফাদার বলেন, ‘আমরা যেন আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’রোজারিওকে (বর্তমান কার্ডিনাল) অনুরোধ করি। তারপর আমি, রঞ্জন পালমা, ডেভিড হালদার এবং আরও কয়েকজন মিলে মিটিং করে বিশপকে জানাই। মূলত সেখান থেকেই ভাদুন ধর্মপল্লীর বীজ রোপিত হয়।’

ভাদুনকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লীতে উন্নীত করায় অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যি আজ অনেক আনন্দিত। আমাদের স্বপ্ন আজ সত্যি হল। ঈশ্বর আমাদের এত বড় একটি উপহার দিয়েছেন আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিওর মধ্য দিয়ে। ভাদুনকে ধর্মপল্লীতে উন্নীত করতে মাউসাইদ থেকে আগত ফাদারগণ অনেক অবদান রেখেছেন। আজ আমি তাদেরও স্মরণ করছি।’

স্থানীয় খ্রিষ্টভক্ত বাণী পালমা ভাদুনকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লীতে উন্নীত করায় অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি নাগরী ধর্মপল্লীর মেয়ে ছিলাম। আর তখন থেকেই শুনতাম যে ভাদুন একটি জঙ্গল এলাকা এবং সেখানে অনেক হিংস্র প্রাণীর বসবাস রয়েছে। গির্জা না থাকা সত্ত্বেও সেখানে খ্রিষ্টান লোকেরা খ্রিষ্টযাগে কিভাবে অংশগ্রহণ করতো সেই ব্যাপার নিয়ে খুব চিন্তা করতাম। কিন্তু এত বছর পর আজ ভাদুনকে ধর্মপল্লী ঘোষণা করায় আমার খুব ভালো লাগছে এবং গর্ববোধ করছি, কারণ আমিও এখন ভাদুন ধর্মপল্লীর একজন খ্রিষ্টভক্ত।

ভাদুনকে ধর্মপল্লীকে ঘিরে তার ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে আলোচনাকালে তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমি নিয়মিত গির্জায় প্রার্থনা করতে যাবো এবং আমি নিজে একজন দ্বীপান্নিতা সংঘের সদস্যা হিসেবে বিভিন্ন কাজে সহায়তা এবং অন্যদেরকেও গির্জায় আসতে উৎসাহ প্রদান করবো। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে এত তাড়াতাড়ি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লীর খ্রিষ্টভক্ত হতে পারলাম।’

ছোট একটি গ্রামে কিছু পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছিল ভাদুন উপধর্মপল্লী। ধীরে ধীরে ভাদুনে খ্রিষ্টভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ঈশ্বরের অশেষ দয়ায় তার গৃহ ‘উত্তম মেষপালক গির্জা’ নির্মিত হয়। সেদিন থেকে ভাদুন কোয়াজি ধর্মধর্মপল্লী রূপে তার যাত্রা শুরু করে। আর আজ সেই কোয়াজি ধর্মপল্লীটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মপল্লীতে উন্নীত হলো।

ডিসিনিউজ/আরবি.জেকে. ২৯ নভেম্বর ২০১৮