শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টিতে ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল বন্ড-এর যাত্রা
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টিতে ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল বন্ড-এর যাত্রা শুরু হলো।
সমিতির ২২ সদস্যের পরিচালনা কমিটির সবাই ভাগাভাগি করে এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন। সমিতির পাঁচ শতাধিক কর্মী তাঁদের নেতৃত্বে সক্রিয় সহযোগিতা করেন।
৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে এসব অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমান সদস্য অংশগ্রহণ করে উৎসাহের সাথে এসব বন্ড কিনে স্বপ্নের হাসপাতালকে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়ান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘সকল সদস্য যেন ঢাকা ক্রেডিটের বিশাল কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে হাসপাতালের মালিক হতে পারেন, তার জন্য বন্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমিতির ৫৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এসব বন্ডের মাধ্যমে হাসপাতালের মালিক হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আজ আমাদের বন্ড বিক্রয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,০০০টি কিন্তু কিন্তু বিক্রি করেছি ২,৫০২টি বন্ড।
বাংলাদেশ সমবায়ের ইতিহাসে বন্ডের মাধ্যমে কোনো প্রকল্পের মালিক হওয়ার নজির এই-ই প্রথম।’ প্রেসিডেন্ট সকল সদস্যকে বন্ড ক্রয় করে স্বপ্নের হাসপাতালের মালিক হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
সমিতির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও এই ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে ব্যতিক্রমী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যে হাসাপতাল আসাদগেট হওয়ার কথা ছিল তা হচ্ছে এখন ঢাকা ক্রেডিটের নিজস্ব ক্যাম্পাসে। ‘এটি আমাদের গর্বের বিষয়।’ তিনি আরো বলেন, শুধু হাসপাতাল নয়, এখানে হবে মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও নার্সিং হোম। তিনি জানান, ‘ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল’ নামটি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও।
হিন্দু বৌদ্ধ খীষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ ১৯৭১ সালের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল হাতছাড়া হওয়ার পর খ্রিষ্টানদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এক বড় শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া বন্ডের উদ্বোধন উদ্যোগকে প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলনে এটিই হলো সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই হাসপাতালে সেবার মাধ্যমে আমাদের সমবায়ের পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে।’
অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ভাইস-চেয়ারম্যান রতন পিউরীফিকেশন সহ হাসপাতাল কমিটির সদস্য, অন্যান্য সমিতির প্রতিনিধি, উপদেষ্টা, ও সমিতির কর্মীবৃন্দ।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সবাই বন্ডের মাধ্যমে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বর্তমান পরিচালনা কমিটিকে হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবার আহবান।
সমিতির সংশ্লিষ্টজনেরা জানান, হাসপাতাল তৈরিতে ফান্ড আহরণ করাই একমাত্র লক্ষ্য নয়, সাধারণ সদস্যরা যেন এই মহাপ্রকল্পে বন্ডের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে গর্বিত হতে পারেন, সেটাই প্রধান উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে ছিল সমিতির সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরার প্রারম্ভিক প্রর্থনা, প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বক্তব্য, হাসপাতাল প্রকল্প ও বন্ড সম্বন্ধে সাধারণ সদস্যের মুক্ত আলোচনা, হাসপাতাল বন্ডের রেপ্লিকা উন্মোচন, অতিথিদের বক্তব্য, ক্রেতাদের মাঝে বন্ড বিতরণ ও সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য পাপড়ি আরেংয়ের শেষ প্রার্থনা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল হাতছাড়া হওয়ার পর খ্রিষ্টান কমিউনিটিসহ সাধারণ মানুষের গুণগত স্বাস্থ্যসেবায় যে শুন্যতার সৃষ্টি হয় তা পূরণ করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা ‘ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে সদস্যদের অংশ গ্রহণ ও বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবার সুযোগ তৈরি করে দিতে হাসপাতাল বন্ড নামে একটি দীর্ঘমেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সদস্যগণ একদিকে যেমন ব্যক্তগতভাবে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হবেন, অন্যদিকে হাসপাতাল নির্মাণের মতো মহৎ কাজে অবদান রাখার গৌরব অর্জন করবেন।
বন্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যসমূহ:
০১. উদ্দেশ্য
ক) একটি আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি গঠনে অবদান রাখা;
খ) কষ্টার্জিত উপার্জনের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা;
গ) উদ্বৃত্ত আয় হতে ভবিষ্যতের পুঁজি গঠন;
ঘ) ভবিষ্যতের অনাহুত আর্থিক সংকট মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ;
ঙ) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকৃত আমানত চার গুণ করা;
চ) প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কার গ্রহণের সুযোগ।
০২. যোগ্যতা
কর্ম এলাকার মধ্যে বসবাসকারী যেকোনো খ্রিষ্টান ব্যক্তি দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি., ঢাকা’র সঞ্চয়ী হিসাব থাকা সাপেক্ষে এ স্কীমের আওতায় এক বা একাধিক বন্ড কিনতে পারবেন। পিতা-মাতা অথবা অভিভাবকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের নামেও এ বন্ড কেনা যাবে।
৫,০০০ (পাঁচ) হাজার টাকা মূল্যের প্রতিটি বন্ডের মেয়াদ হবে ১৫ বছর। নির্ধারিত আবেদনপত্রের মাধ্যমে আবেদন করে বন্ড প্রতি ২০ টাকা প্রদানপূর্বক সমিতির অন্য সদস্যের অনুকূলে বন্ডের মালিকানা হস্তান্তর করা যাবে। বন্ডের উপর বার্ষিক ২০% হারে সরল সুদ প্রদান করা হবে।
এ ছাড়াও বন্ড বিক্রি শুরু করার ১ (এক) বছর পূর্ণ হলে প্রতি বছর সুবিধামতো সময়ে একবার লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম বছর ২৫টি, দ্বিতীয় বছর ৫০টি, তৃতীয় বছর ৭৫টি এবং চতুর্থ বছর হতে পঞ্চদশ বছর পর্যন্ত প্রতি বছর ১০০টি করে লটারি প্রদান করা হবে। প্রত্যেকটি বন্ডের জন্য একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে এবং লটারিতে উক্ত নম্বরটি একবার উঠলে পরবর্তী লটারির জন্য উক্ত নম্বরটি আর বিবেচনা করা হবে না। বন্ড কেনার মেয়াদ অনুযায়ী আকর্ষণীয় হারে লটারির পুরস্কার নির্ধারিত হবে।
(খ) মেয়াদ পূর্তির পূর্বে
বন্ডের বিপরীতে কোনো লটারি প্রাপ্ত না হলে আর্থিক বা অন্য যেকোনো প্রয়োজনে বন্ডের মালিক মেয়াদ পূর্তির পূর্বে সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত ফরম পূরণ করে বন্ডের টাকা ফেরৎ পাবার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বন্ড বন্ধের টাকা আবেদন অনুসারে ব্যাংক চেক, নিজ অথবা অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তির সঞ্চয়ী হিসাবে স্থানান্তর করা যাবে। এক্ষেত্রে নি¤œলিখিত নিয়ম অনুসরন করা হবে, তবে মেয়াদ পূর্তির পূর্বে বন্ড ভাঙানো হলে কোনো সুদ প্রাপ্য হবেন না।
(গ) আমানতকারীর মৃত্যু হলে-
ক) বন্ডের সময় অনুপাতে ঘোষণাকৃত নির্ধারিত হারে সুদ প্রদান করা হবে।
খ) নমিনী/নমিনীদের/মনোনীত অভিভাবকে আবেদন করতে হবে।
গ) মৃত্যু-সংক্রান্ত ডাক্তারের সনদপত্র/পাল-পুরোহিত/পালক কর্তৃক সনদপত্র দিতে হবে।
ঘ) নাবালক/নাবালিকা নমিনীর ক্ষেত্রে পাল-পুরোহিত/ পালক/ ওয়ার্ড কমিশনার / চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত অভিভাবক সনাক্তকরণপত্র দিতে হবে।
০৩. ঋণ প্রদান সুবিধা
সাধারণ বা অন্য কোনো ঋণের বিপরীতে জামিন প্রদান না করে থাকলে, বন্ডের একক মূল্যের ৮০% পর্যন্ত ঋণ হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে,
ক) গৃহীত ঋণ হিসাবের মেয়াদ পূর্তির পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে।
খ) বন্ডের বিপরীতে গৃহীত ঋণের উপর ক্রমহ্রাস পদ্ধতিতে ১৫% হারে সুদ প্রদান করতে হবে।
গ) দৈনিক ভিত্তিতে সুদ নির্ণয় করা হবে।
ঘ) ঋণের বিপরীতে কোনো ঋণ নিরাপত্তা প্রিমিয়াম দিতে হবে না।
ঙ) ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত সুদের উপর রেয়াত বা রিবেট প্রদান করা হবে না।
চ) গৃহীত ঋণখেলাপি হলে সাধারণ ঋণের ন্যায় সুদ ও জরিমানা প্রদান করতে হবে।
ছ) গৃহীত ঋণ পর পর তিন মাস খেলাপি হলে সমিতি ক্ষমতাবলে প্রাপ্য ঋণের সুদ, জরিমানা ও বকেয়া ঋণ বন্ডের অর্থের সাথে সমন্বয় করে হিসাবটি বন্ধ করে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে হিসাব বন্ধের প্রক্রিয়া নীতিমালার ক্রমিক নং ১০(খ) প্রযোজ্য হবে।
জ) ঋণ পরিশোধের পূর্বে হিসাবের মেয়াদ পূর্তি হলে প্রাপ্য আমানতের সাথে বকেয়া ঋণ ও সুদ সমন্বয় করে বাকি টাকা প্রদান করা হবে।
০৪. ঋণের জামিন
এই বন্ডে অর্থ হিসাবধারীর নিজের বা পরিবারের যেকোনো একজনের ঋণের বিপরীতে ৯০% জামিন প্রদান করা যাবে। তবে, বন্ডের বিপরীতে ঋণ গ্রহণ করা হলে জামিন প্রদান করা যাবে না।
০৫. বন্ড বিক্রি বন্ধ বা স্থগিত
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে যেকোনো সময় হাসপাতাল বন্ড বিক্রি স্থগিত বা বন্ধ করা শুধুমাত্র সমিতির পরিচালক মন্ডলীর এখতিয়ারধীন।
উপরোক্ত নীতিমালা সমিতির নির্বাচিত পরিচালক মন্ডলী কর্তৃক প্রনীত বিধায় ভবিষ্যতে কোনো পরিবর্তন/পরিবর্ধন/সংযোজন/বিয়োজন সম্পূর্ণ সমিতির এখতিয়ারভুক্ত।