ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১০ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার লাখো মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত পানজোড়ার সাধু আন্তনী

লাখো মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত পানজোড়ার সাধু আন্তনী

0
1352

‘এইবারের সাধু আন্তনীর তীর্থের প্রস্তুতি খুবই ভালো। ২৩ জানুয়ারি থেকে নভেনা শুরু হয়েছে এবং চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট নয়দিন’ ডিসিনিউজকে জানান নাগরী ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত এস. গমেজ।

তিনি জানান, ‘এইবার অন্য বছরের চেয়ে অনেক আন্তনীভক্ত বেড়ে গেছে। ভক্তদের প্রস্তুতি, বিশেষ করে বিকালের খ্রিষ্টযাগগুলোতে মনে হচ্ছে প্রতি দিনই পর্ব। আশা করি পর্বের দিনে সমাবেশ আরো ভালো হবে। এর কারণ হতে পারে মানুষের ভক্তি আগে থেকে বহুগুন বেড়ে গেছে এবং শীতের প্রকোবও কম। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিবেশও যথেষ্ট ভালো।’

‘২০১৮ সালে ইতালি থেকে সাধু আন্তনীর দেহ অংশ বিশেষ আসার জন্য ব্যাপক সাড়া পড়েছিলো এবং দিনে দিনে খ্রিষ্টান, হিন্দু, মুসলিম ভক্তও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানজোড়া তীর্থস্থান হওয়ার জন্য যেই যেই বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন, তার সবগুলোই এই পানজোড়াতে আছে। কার্ডিনাল মহোদয় ঢাকা ধর্মপ্রদেশের ফাদার লেনার্ড রোজারিওকে পাঠিয়েছেন এখানে, যেন তিনি সব সময় ভক্তদের আধ্যাত্মিক সেবা দিতে পারেন’ বলেন ফাদার জয়ন্ত।

শর্মিলি রোজারিও নামে এক আন্তনী ভক্ত (গাড়ারিয়া) তীর্থের পূর্বে আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি নিতে নভেনায় আংশ নেয়। তিনি ডিসিনিউজকে জানান, ‘আমি আমার জীবনে সাধু আন্তনীর মাধ্যমে অনেক কিছু পেয়েছি। যেটা আমি বলে শেষ করতে পারবোনা। এই যে ঈশ^রের প্রতি ভালোবাসা, আত্মবিশ^াস তা আমাদের এই তীর্থের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সাধু আন্তনীর মূর্তি দেখার মধ্যদিয়ে আমার বিশ্বাস আরো গভীর হয়েছে। আমি আমার পরিবারিকভাবে খুবই সুখী।’

ইয়ানা ফ্লরেন্স রোজারিও (নলছাটা) বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকে প্রতি বছরই নভেনায় আসার চেষ্টা করি। আমার বিশ^াস সাধু আন্তনীর কাছে বিশ^াস নিয়ে প্রার্থনা করলে তার ফল পাওয়া যায়। সেই বিশ^াস নিয়েই সবগুলো নভেনা করছি এবং বাকিগুলো করার ইচ্ছা আছে। যখন আমি এইচএসসি পরীক্ষা দেই, তখন আমার ভালো প্রস্তুতি ছিলো না, আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। এমনকি সাধু আন্তনীর নভেনায়ও আসতে পারিনি। আমি ঘড়ে বসে সাধু আন্তনীর কাছে প্রার্থনা এবং মানত করি। পরে আমার পরীক্ষার ফল অনেক ভালো হয় এবং আমি আমার মানত পূরণও করি।’

সিস্টার জেনেভা (তুমিলিয়া) ডিসিনিউজকে বলেন, ‘সাধু আন্তনী সবসময় একটা প্রত্যাশা করতেন, তিনি একজন ভালো মানুষ হবেন এবং এই জন্যই তিনি তাঁর জীবন উৎস্বর্গ করেন। আমারও ইচ্ছা আমার মধ্য দিয়ে জনগণের সেবা করা এবং আমার দ্বারা যেন মানুষ উপকৃত হয়। সাধু আন্তনী যেহেতু হারানো জিনিস খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। আমি প্রার্থনা করি বর্তমান যুগ যেহেতু বিলাসীতার যুগ, মানুষ যেন আবার বিন¤্রতা খুঁজে পায়।’

তিনি জানান, ‘সাধু আন্তনীর ইতালিতে পাদুয়াতে ছিলেন। সেখানে আমি ১২ বছর ছিলাম, সেখানে তাঁর পাথরের দাঁত আছে, এ জন্য তাঁর প্রতি আমার অন্য রকম একটা টান রয়েছে। ২০ বছর পর কবর থেকে তার হাড় উঠানো হয়, তখন আমি সেখানে ছিলাম, তার কবর ছুয়ে প্রার্থনা করেছি এবং তার ফল আমি পেয়েছি। এই কারণে দিন দিন আমার বিশ^াস বাড়ছে। আমার দেখা মতে এক দম্পতী বিয়ের ১২ বছর হওয়ার পরও তাদের সন্তান হয়নি। পাদুয়াতে ১৩ জুন সাধু আন্তনীর পর্ব হয় এবং ১৩ দিন নভেনা হয়। সেই দম্পতি নভেনায় স্বাক্ষ্য দেন ও কবর স্পর্শ করে প্রার্থনা করেন এবং তাদের ছবি কবরে রেখেছেন, পরে তাদের সন্তান পেয়েছেন।
এভাবে হাজারো খ্রিষ্টভক্ত শুধু নভেনায়ই অংশ নিচ্ছে। তীর্থের প্রস্তুতির এই নভেনায় প্রতিটা আন্তনী ভক্তকে নিয়ে যাবে তীর্থের বিশ্বাসের আঙ্গিনায়।

উল্লেখ্য, স্থানীয় পাল-পুরোহিত ফাদার জয়ন্ত’র কাছ থেকে জানা যায়, ‘সতেরো শতকের শেষ ভাগে নাগরীতে আগষ্টিয়ান যাজকগণ নাগরীতে ধর্মপ্রচার করতে আসেন। তখন ঘন জঙ্গলের মাঝে সন্ধ্যায় শিংঙার আওয়াজ পেতেন যাজকগণ। জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে যাজকগণ দেখতে পান এক সাধু সন্ন্যাসী ধ্যান করছে। সেই সন্নাসী একটি বটবৃক্ষের খোড়লে মূর্তি দেখিয়ে বলেন, এর জন্য একটি গির্জা তৈরি করতে। তখন যাজকগণ সাধু আন্তনীর এই মূর্তি নাগরী গির্জায় নিয়ে রাখেন। কিন্তু রাতের বেলা আবার সেই বটবৃক্ষের খোড়লে এসে গেছে। এভাবে কয়েক বার গির্জা ঘরে রাখার পরেও এই সাধু আন্তনীর মূর্তি থাকেনি গির্জা ঘরে। এরপর যাজকগণ একটি গির্জা ঘর তৈরি করেন পানজোড়াতে। এর পর থেকে মানুষের বিশ^াস ও ভক্তির কারণে আশির দশকে এর প্রচার শুরু হতে থাকে।’

কিভাবে যাবেন মহান সাধুর তীর্থভূমিতে

ঢাকা থেকে বিশ্ব রোড নেমে পূর্বাচলের তিনশ ফিট রাস্তা ধরে সিএনজি/ বিআরটিসি বাসে কাঞ্চন ব্রিজ, সেখান থেকে সেখে থেকে ব্যাটারি চালিত গাড়িতে করে ভাসানিয়া গ্রাম পর্যন্ত যেতে হবে, এরপর কিছুটা পথ হেঁটে তীর্থস্থানে পৌঁছানো যায়। আবার আব্দুল্লাপুর হয়ে লেগুনায় উলুখোলা বাজারে নেমে ব্যাটারিচালিত গাড়িতে বাগদি গ্রাম পর্যন্ত যাওয়া যায়। আবার সেখান থেকে পায়ে হেঁটে তীর্থস্থানে পৌঁছানো যায়। এ ছাড়াও স্টেশন রোড থেকে বাস যোগে নলছাটা, সেখান থেকে ব্যাটারীচালিত গাড়িতে করান যেতে হবে এবং বাকিটা পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হবে।
তীর্থের দিন লাখো আন্তনী ভক্তের ভিরের কারণে কোনো যানবাহন তীর্থস্থান পর্যন্ত যায় না। সে কারণে যেকোনো নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত গিয়ে বাকিটা রাস্তা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। শত কষ্ট হলেও থেমে থাকে না আন্তনীভক্তের মহাস্রোত।

ডিসিনিউজ/আরবি.এসএমআর. ৩০ জানুয়ারি ২০১৯