শিরোনাম :
রাজাকারের বাচ্চা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের দুঃখ প্রকাশ
‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলায় শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে দুঃখ প্রকাশ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভিসি প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ রুমি স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
ভিসির বরাত দিয়ে ই-মেইল বার্তায় উল্লেখ করা হয়,২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমার প্রদত্ত বক্তব্যের একটি বাক্যকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমি এ বিষয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে ‘রাজাকার’ সম্বোধন করিনি বরং যারা মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে বাঁধা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের এহেন কার্যক্রম রাজাকারসদৃশ মর্মে মন্তব্য করেছি। উক্ত ‘শব্দটি’ আমি কোনোভাবেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে উদ্দেশ করে বলিনি। এরপরও যদি আমার উক্ত বক্তব্যে কোনো শিক্ষার্থী মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে, তবে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখার স্বার্থে আমি সকল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে ভিসি প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা ‘উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা’ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। সন্ধ্যার পর তারা একই দাবিতে ক্যাম্পাস থেকে একটি মশাল মিছিল বের করেন। মশাল মিছিলটি বরিশাল-কুয়াকাটা সড়ক হয়ে ফের ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কুশপুত্তলিকা দাহ করেন শিক্ষার্থীরা। ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বৈকালিন চা চক্র ও আলোচনা’ নামক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ না জানানোয় এবং তাদের খাবার প্যাকেট না দেয়ায় অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপর একটি অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পন্ড করার চেষ্টাকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন উপাচার্য। উপাচার্যের এ উক্তির প্রতিবাদে এবং ওই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে পরদিন ২৭ মার্চ সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
ওইদিন আরও কিছু দাবি যুক্ত করে ১০ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনের শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে ২৭ মার্চ রাত ৩টার দিকে উপাচার্য তার একক ক্ষমতা বলে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং ওইদিন (২৮ মার্চ) বিকেল ৫টার মধ্যে সকল আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়।
২৭ মার্চ রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশের ঘটনায় আরও ক্ষুব্ধ হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করে নিজ নিজ হলে অবস্থান নেন। একই সঙ্গে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আল আমীন জাগো নিউজকে জানান, এখন আর ৫ দফা বা ১০ দফা নয়- এখন একটিই দাবি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।